Thank you for trying Sticky AMP!!

পাঁচ ছাত্রীর শাস্তির বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ আদালতের

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেত্রীসহ পাঁচজনের শাস্তির বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বুধবার এ আদেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্যাতনের ঘটনায় ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচজনকে এক বছরের জন্য একাডেমিক, আবাসিক বা অন্যান্য সব কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। অপর চার ছাত্রী হলেন হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

ওই ব্যবস্থা যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি উল্লেখ করে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯৮৭ সালের কোড অব কন্ডাক্টস অব দ্য স্টুডেন্টস (শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবিধি) অনুসরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাঁচ শিক্ষার্থী শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, আইন অনুসারে প্রথমে উপাচার্য শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি সন্তুষ্ট না হলে অথবা তুলনামূলক শাস্তি কম হলে তখন শৃঙ্খলা কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠাবেন। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই শৃঙ্খলা কমিটি বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেয়। এতে প্রক্রিয়াগত কিছু ত্রুটি রয়েছে।

Also Read: ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত, নির্দেশদাতা সানজিদা

নথিপত্র থেকে জানা যায়, পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত–সংবলিত ছাত্র–শৃঙ্খলা কমিটির সভার কার্যবিবরণী ১৯ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮৭ সালের কোড অব কন্ডাক্টস অব দ্যা স্টুডেন্টস (পার্ট–২)–এর ৮ ধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাঁচ শ টাকা জরিমানা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া যায়। ঘটনার গভীরতা বিবেচনায় এই শাস্তি খুবই কম হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনের মধ্যেই শাস্তির সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করে পর্যবেক্ষণসহ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সেদিন শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী। এ বিষয়ে আইনি দিকগুলো হলফনামা আকারে রিট আবেদনকারীকে দাখিল করতে বলেন আদালত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতেও বলেন। একই সঙ্গে ২৬ জুলাই শুনানির দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন নিজে শুনানি করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বি এম আবদুর রাফেল ও মোল্লা জীবন আহমেদ।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৭ সালের কোড অব কন্ডাক্টস অব স্টুডেন্টস (পার্ট–১)–এর ৪, ৫ ও ৭ ধারায় এবং পার্ট–২–এর ৮ ধারায় শাস্তির বিষয়ে উল্লেখ আছে বলে জানান আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র–শৃঙ্খলা কমিটি ৮ ধারা অনুসারে পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে। এই ধারা অনুসারে প্রথমে উপাচার্য শাস্তি দেবেন, তিনি সন্তুষ্ট না হলে পরে শৃঙ্খলা কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন বলেছে, এক বছরে জন্য বহিষ্কার করেছে, যা সর্বোচ্চ শাস্তি। অথচ কোডের ৪, ৫ ও ৭ ধারা অনুসারে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ছাত্রত্ব বাতিল তথা স্থায়ীভাবে বহিষ্কারেরও সুযোগ আছে।

Also Read: নির্যাতনে অভিযুক্তদের শাস্তির খবরে ফুলপরী বললেন, ‘আমাকে পালাইয়ে চলে যেতে হবে’

রিট আবেদনকারী এই আইনজীবী জানান, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি হিসেবে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং এটি সর্বোচ্চ শাস্তি নয় বলেও আদালত উল্লেখ করেছেন। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাঁচ শিক্ষার্থীর শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে আগামী ২৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবাসিক হলের গণরুমে আটকে রেখে ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পর তা সারা দেশে আলোচনার জন্ম দেয়। ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন রিট করেন।

Also Read: ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ফুলপরী নতুন হলে উঠছেন

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল ও নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। এর মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ও কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টিও ছিল। তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে গত ১ মার্চ হাইকোর্ট তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসা পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করাসহ কয়েক দফা নির্দেশসহ আদেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি হয়।

Also Read: বারবার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত ফুলপরী ও তাঁর বাবা