উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়

তফসিল ঘোষণামাত্র কার্যকর হবে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পদত্যাগ করেছেন। বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাঁরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলে প্রধান উপদেষ্টা তা গ্রহণ করেন। গতকাল যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের পদত্যাগ কার্যকর হবে। আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিদায়ী দুই উপদেষ্টা অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। মাহফুজ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার শুভকামনা

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই দুই ছাত্রনেতার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির পথে অবদান রেখেছ, তা জাতি মনে রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে তোমরা একইভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূুঁইয়া। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আজ (গতকাল) একটি ঐতিহাসিক দিন। অন্তর্বর্তী সরকার সব সময় তোমাদের অবদান স্মরণ করবে। আমি তোমাদের সুন্দর ও শুভ ভবিষ্যৎ কামনা করি। এত অল্প সময়ে তোমরা জাতিকে যা দিয়েছ, তা জাতি কখনো ভুলবে না। এটি একটি রূপান্তরমাত্র। আমি আশা করি, আগামী দিনে বৃহত্তর পরিমণ্ডলে তোমরা আরও বড় অবদান রাখবে।’

নিজেদের কর্মের মাধ্যমে দেশের মঙ্গলে নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানিয়ে দুই ছাত্রনেতার উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারে থেকে যে অভিজ্ঞতা তোমরা অর্জন করেছ, তা ভবিষ্যৎ জীবনে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।’

নির্বাচন করবেন আসিফ, কিছু জানাননি মাহফুজ

গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, তিনি নির্বাচন করবেন। তবে কোন দল থেকে নাকি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবেন, তা বলেননি।

আসিফ মাহমুদ ঢাকা থেকে ভোট করবেন, তা আগেই জানিয়েছেন। তিনি গত ৯ নভেম্বর ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে ধানমন্ডিতে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন। এরপর ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়

সাংবাদিকের প্রশ্নে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব, এটা স্পষ্টভাবেই বলা যায়। কিন্তু কোথা থেকে করব, কোন দল থেকে করব, সেটা পরবর্তী বিশ্লেষণ।’

এদিকে পদত্যাগ করা তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নির্বাচন করবেন কি না, তা তিনি জানাননি।

দুজন উপদেষ্টার পদত্যাগের পর তিনটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ ফাঁকা হচ্ছে। এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন, তা আজ বৃহস্পতিবার জানা যেতে পারে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এত দিন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন প্রধান উপদেষ্টাসহ ২৩ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি পদত্যাগ করলেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়

সরকার গঠনের সময় উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন ছাত্র প্রতিনিধি মো. নাহিদ ইসলাম। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হন। এনসিপি গঠন করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা।

মাহফুজ আলম শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন। নিয়োগ পান গত বছরের ২৮ আগস্ট। পরে ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তবে সে সময় তাঁকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর তাঁকে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ শুরুতে ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ এফ হাসান আরিফকে (প্রয়াত) সরিয়ে আসিফ মাহমুদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় গত বছরের নভেম্বরে। এর পর থেকে তিনি স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।