রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি যমুনা অয়েলের ফতুল্লা ডিপো থেকে তেল চুরির ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এর আগে ‘সরকারি ডিপো থেকে পৌনে ৪ লাখ লিটার ডিজেল গায়েব’ শিরোনামে ১ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রথম আলো।
একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটি করে গতকাল সোমবার অফিস আদেশ জারি করেছে জ্বালানি বিভাগ। এতে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার প্রধানকে একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা ডিপো থেকে তেল চুরি–সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর সঙ্গে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুলিপিও যুক্ত করা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধিতে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে দায় নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধকল্পে সুপারিশ প্রদান করবে কমিটি। এতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), যমুনা অয়েল কোম্পানি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে একজন করে প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল চুরি ও অপচয় রোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন নির্মাণ করেছে সরকার। এ পাইপলাইনে তেল সরবরাহ চালু হয়েছে গত জুনে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় মূল টার্মিনাল থেকে সরাসরি তেল আসছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। এর মধ্যেও যমুনা অয়েল কোম্পানির ফতুল্লা ডিপোয় দুই দফায় গায়েব হয়ে গেছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল।
তেল গায়েবের বিষয়টি ইতিমধ্যে আমলে নিয়ে ফতুল্লা ডিপোর ২২ ও ২৩ নম্বর ট্যাংকের সক্ষমতা পুনরায় যাচাই করতে নির্দেশনা দিয়েছে যমুনা অয়েল কোম্পানি। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করতে একটি কমিটি করা হয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর যমুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো অপারেশন বিভাগের এক চিঠি বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইনের মাধ্যমে ২৪ জুন তেল সরবরাহ শুরু হয়। ফতুল্লা ডিপোতে তেল গ্রহণ সমাপ্ত হয় ৪ জুলাই। এতে ২ লাখ ৬২ হাজার ৮০৪ লিটার তেল ক্ষতি হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৪ সেপ্টেম্বর তেল আসা শুরু হয়, যা শেষ হয় ২২ সেপ্টেম্বর। এবার ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৬১৪ লিটার।
যমুনার চিঠিতে আরও বলা হয়, ট্যাংকে গভীরতা অনুযায়ী তেলের পরিমাণগত পার্থক্য রয়েছে। তাই পুনরায় সক্ষমতা যাচাই করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর আরেকটি চিঠিতে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এতে পাইপলাইন কোম্পানির একজনকেও রাখা হয়েছে। কমিটি ইতিমধ্যে ফতুল্লা পরিদর্শন করেছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখছে। এ সপ্তাহের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে যমুনার ফতুল্লা ডিপোয় তেল চুরির ঘটনা তদন্তে ২ অক্টোবর মহাব্যবস্থাপককে (বণ্টন ও বিপণন) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বিপিসি। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা তাদের।
আজ মঙ্গলবার বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেল চুরি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত মোটামুটি শেষের দিকে। শিগগিরই এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।