বিবৃতি
বিবৃতি

নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিতে টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়ার দাবি

‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ খসড়াটি দ্রুত অনুমোদনের দাবি জানিয়েছেন দেশের ৯৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তাঁরা এই দাবি জানান।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, লেখক ও শিক্ষক সলিমুল্লাহ খান, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, শিক্ষক কামরুল হাসান, লেখক ও শিক্ষক ফাহমিদুল হক, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক, অধ্যাপক আসিফ এম শাহীন, গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ, লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান প্রমুখ।

বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসিনা কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধ ও নিপীড়নের সহযোগী ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার ভেঙে দিতে হবে। নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও বিদ্যমান আইনের সংশোধনের ক্ষেত্রে অংশীজনদের অংশগ্রহণ থাকলেও মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা স্থায়ীভাবে বিলোপ এবং নজরদারি কাঠামোয় বড় ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছিল। এতে দীর্ঘদিন মানবাধিকার লঙ্ঘন, অবৈধ নজরদারি ও গুমের অভিযোগে সমালোচিত এনটিএমসি সম্পূর্ণ বিলুপ্তির প্রস্তাবও ছিল। অথচ দুঃখজনক ওই অধ্যাদেশের সংশোধিত খসড়াটি ১২ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় পেশ করা হলেও অনুমোদন পায়নি।

গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এনটিএমসি বিলুপ্তি নিয়ে সরকারের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে এবং নজরদারি সংস্কারের পরিকল্পনা থেকে রাষ্ট্র পিছিয়ে আসছে। নাগরিকদের ন্যূনতম অংশগ্রহণ ছাড়াই ১৫ অক্টোবর এনটিএমসি নতুন নামে পুনর্গঠনের তিনটি প্রস্তাবসহ একটি খসড়া আইন প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নজরদারি আরও শক্তিশালী করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ১৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় একটি সংস্থার প্রধান দাবি করেন, তাদের মনিটরিং সার্ভিল্যান্স দুর্বল করা হচ্ছে। এতে নাকি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড তদারকি করা কঠিন হয়ে যাবে। এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫ বিষয়ে একটি সভা আহ্বানের নির্দেশ দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকাশিত খসড়ার কমপক্ষে দুটি নাগরিক সুরক্ষা সরিয়ে ফেলে আগামী সপ্তাহে আরেকটি নতুন খসড়া উপস্থাপন করা হবে, যা আসলে নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই করা হচ্ছে। নজরদারির মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হতে চাচ্ছে, যা নাগরিকদের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং হাসিনা আমলের নজরদারি ক্ষমতা পুনরায় চালু হওয়ার বাস্তবতা তৈরি করবে।

আড়িপাতা ও নজরদারির ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, কোন সংস্থাগুলো আড়িপাতার অনুমোদন পাবে, তদারকি করবে এবং ক্ষমতার বণ্টন কেমন করে নিরূপণ হবে, তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা ভয়ংকর হাসিনার দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়, গণ অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ হাসিনার আমলে ফিরবে না। তাই ইন্টারনেট সংযোগ কোনো অবস্থাতেই বন্ধ, বিঘ্নিত বা সীমিত করা যাবে না। অধ্যাদেশের ধারায় যোগাযোগমাধ্যমের নজরদারি করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বহাল রাখা এবং নাগরিকদের অংশগ্রহণ ও মতামতগুলো প্রাধান্য দিয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়াটি অনুমোদন দিতে হবে।