
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
এই প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবিদুল ইসলাম খানকে সহসভাপতি (ভিপি), কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিমকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ডাকসু নির্বাচনের এই প্যানেল ঘোষণা করেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্যানেল ঘোষণা করল ছাত্রদল।
ডাকসুর পাশাপাশি ১৮টি হল সংসদের প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই এই প্যানেল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন।
প্যানেল ঘোষণার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ডাকসুতে ২৮টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আহমেদ তন্বীর সম্মানে গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদটি শূন্য রেখে তাঁকে সমর্থন দিয়েছে ছাত্রদল। তন্বী এই পদে ডাকসুতে নির্বাচন করছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে ছাত্রদল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
প্যানেল ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে আরিফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে এহসানুল ইসলাম, কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আবু হায়াত মো. জুলফিকার জিসান, ক্রীড়া সম্পাদক পদে চিম চিম্যা চাকমা, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে সাইফ উল্লাহ সাইফ, সমাজসেবা সম্পাদক পদে সৈয়দ ইমাম হাসান অনিক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে আরকানুল ইসলাম রূপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আনোয়ার হোসাইন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান মুন্নাকে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রদল।
এ ছাড়া প্যানেলে সদস্যপদে জারিফ রহমান, মাহমুদুল হাসান, নাহিদ হাসান, হাসিবুর রহমান সাকিব, শামীম রানা, ইয়াসিন আরাফাত, মুনইম হাসান অরূপ, রঞ্জন রায়, সোয়াইব ইসলাম ওমি, মেহেরুন্নেসা কেয়া, ইবনু আহমেদ, শামসুল হক আনান, নিত্যানন্দ পালকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
প্যানেল ঘোষণার পর ছাত্রদলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে যান। সেখানে যাওয়ার আগে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আনাসের কবর জিয়ারত করবেন। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।
প্যানেল ঘোষণার পর রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন, সাহসী, মেধাবী ও বিচক্ষণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে ছাত্রদলের প্যানেলকে জয়ী করবেন। ছাত্রসমাজের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন, তাঁদেরই প্যানেলে মনোনীত করা হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ সময় ছিল গতকাল মঙ্গলবার। গতকাল মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ৯৩ জন। এ নিয়ে টানা ৮ দিনে ডাকসুর ২৮টি পদে মোট ৬৫৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ডাকসুতে ভিপি, জিএসসহ ২৮টি পদে মোট ৬৫৮ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১০৬ জন। আর হল সংসদের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
আবিদুল ইসলাম খান
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আবিদুল ইসলাম খানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অভ্যুত্থানের সময় ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ বক্তব্য দিয়ে পরিচিতি পান তিনি। পরে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামে একটি বই লিখেছেন। অভ্যুত্থানের পর নিয়মিত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে অংশ নিয়ে আবিদুল ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন।
তানভীর বারী হামিম
অভ্যুত্থানের পর থেকে ‘কমল মেডি এইড’ নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম খুলে ক্যাম্পাসে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করে আসছেন তানভীর বারী হামিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় শিক্ষার্থীদের টেলিমেডিসিন সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, কলাভবন ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে মেয়েদের কমন রুমে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, আন্তহল শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ নানা আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচিতি পান তিনি।