মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরে বোগদ খান ন্যাশনাল পার্কে স্থাপিত বোগদ খানের ভাস্কর্য
মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরে বোগদ খান ন্যাশনাল পার্কে স্থাপিত বোগদ খানের ভাস্কর্য

বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে

মঙ্গোলিয়া: চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারের পুনরুত্থান

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

বিজয় মানে কেবল একটি যুদ্ধ জয় নয়, বিজয় মানে হলো হারিয়ে যাওয়া গৌরবকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা। আজ ২৯ ডিসেম্বর, নীল আকাশের দেশ মঙ্গোলিয়ার ‘স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার দিবস’। ১৯১১ সালের এই দিনে মঙ্গোলিয়া দীর্ঘ ২০০ বছরের মাঞ্চু বা চিং রাজবংশের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিনটি মঙ্গোলিয়ার ইতিহাসে তাদের জাতিসত্তা ও রাষ্ট্রীয় পুনর্জাগরণের প্রতীক।

মঙ্গোলিয়ার জাতীয় পতাকা

একসময় চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা বিশ্বের অর্ধেক শাসন করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সপ্তদশ শতাব্দীতে তারা চীনের চিং রাজবংশের অধীনে চলে যায়। দীর্ঘ দুই শতাব্দী ধরে পরাধীন থাকার পর ১৯১১ সালে চীনে যখন জিনহাই বিপ্লব শুরু হয়, মঙ্গোলরা সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। তারা বুঝতে পেরেছিল, এখনই সময় নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে নেওয়ার। ২৯ ডিসেম্বর, মঙ্গোলিয়ার অভিজাত শ্রেণি এবং বৌদ্ধ লামারা একত্রিত হয়ে ‘বোগদ খান’কে মঙ্গোলিয়ার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রধান হিসেবে সিংহাসনে বসায়। রাজধানী উলানবাটোরে (তৎকালীন উরগা) এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়।

যদিও পরবর্তী সময়ে মঙ্গোলিয়াকে আরও অনেক চড়াই-উতরাই ও বিদেশি হস্তক্ষেপের মোকাবিলা করতে হয়েছে, কিন্তু ১৯১১ সালের এই দিনটিই ছিল আধুনিক মঙ্গোলিয়ার ভিত্তি। এটি ছিল সেই দিন, যেদিন স্তেপ বা তৃণভূমির মানুষেরা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা কারও অধীন নয়, তারা চেঙ্গিস খানের গর্বিত উত্তরসূরি। বিশ্বমানচিত্রে মঙ্গোলিয়া

আজকের দিনে মঙ্গোলিয়ায় সরকারি ছুটি থাকে। প্রচণ্ড শীতেও মানুষ জাতীয় পোশাকে সেজে কুস্তি খেলা ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। বাংলাদেশের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় যেমন আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সত্তাকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছে, মঙ্গোলিয়ার ২৯ ডিসেম্বরও ঠিক তেমনি তাদের যাযাবর সংস্কৃতি ও স্বকীয়তাকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করেছে। এটি এমন এক বিজয়, যা একটি জাতিকে বিস্মৃতির অতল থেকে পুনরায় ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই দিয়েছে।