প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আইন–অধিকার

গ্রেপ্তার ব্যক্তির আইনি অধিকার

ফরাসি শব্দ ‘অ্যারেটার’ থেকে ‘অ্যারেস্ট’ শব্দটি এসেছে। এর বহুল ব্যবহৃত পরিভাষা হলো ‘গ্রেপ্তার’, যার কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা বাংলাদেশের আইনে উল্লেখ নেই। সাধারণত পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অপরাধ নিবারণ করার জন্য গ্রেপ্তারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুসারে সাধারণ মানুষও গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তি বা সরকার ঘোষিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে শর্ত থাকে, আটক ব্যক্তিকে বিলম্ব না করে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অথবা নিকটতম থানায় দ্রুততম সময়ে হস্তান্তর করতে হবে।

বর্তমান সময়ে ‘গ্রেপ্তার’ শব্দটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হয়ে উঠেছে আতঙ্ক ও ভয়ের বিষয়। এ কারণে একজন গ্রেপ্তার হওয়ার সময় কোন ধরনের আইনি অধিকার পাবেন এবং গ্রেপ্তার–পরবর্তী আইনি পদক্ষেপগুলো কী হবে, তা জানা থাকা দরকার।

গ্রেপ্তারের পদ্ধতি ও নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতা

গ্রেপ্তারের পদ্ধতি সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, কথা বা কাজের দ্বারা যদি গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়, তবে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার ব্যক্তির দেহ স্পর্শ করতে পারবেন না। তবে যদি কোনো ব্যক্তি গ্রেপ্তারের সময় বাধার সৃষ্টি করেন বা গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করেন, তাহলে ওই কার্যবিধির ৪৬(২) ধারা অনুসারে, গ্রেপ্তার নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রকার আইনি পন্থা অবলম্বন করার ক্ষমতা পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর থাকবে। ৪৬(৩) ধারায় আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধে অভিযুক্ত না হলে গ্রেপ্তার নিশ্চিতের জন্য অস্ত্রের প্রয়োগ বা কারও মৃত্যু ঘটানো যাবে না। গ্রেপ্তার ব্যক্তি যদি গ্রেপ্তারের পর পালানোর চেষ্টা করেন, তবে কার্যবিধির ৫০ ধারা ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের ৩৩১ নম্বর প্রবিধান অনুসারে পলায়ন রোধে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু বাধা প্রদান করা যাবে। কোনোভাবেই প্রয়োজনের অধিক বাধা প্রদান করা যাবে না। সহজ ভাষায় বলা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত অস্ত্রের প্রয়োগ বা আঘাত দানের দরকার না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অস্ত্রের প্রয়োগ বা আঘাত দান করা যাবে না।

প্রতীকী ছবি

গ্রেপ্তারের সময় বিনা কারণে যদি পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কোনো প্রকার আঘাত দান, ক্ষতি বা লাঞ্ছনা করেন, তবে সেটি আইনের চোখে একটি অপরাধ এবং বাংলাদেশ সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।’ বাংলাদেশের সংবিধানে কাউকে নির্যাতন করা নিষিদ্ধ।

গ্রেপ্তারের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় সরকার ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)’ আইন প্রণয়ন করে। এখানে আইনি হেফাজতে নির্যাতন একটি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং নির্যাতনকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। নির্যাতন প্রমাণ সাপেক্ষে ওই আইনে শাস্তি হিসেবে নির্যাতনকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। সেই সঙ্গে ওই নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের আরও অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে ২৫ হাজার টাকা নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দেওয়া যেতে পারে।

প্রতীকী ছবি

গ্রেপ্তারের পর দেহতল্লাশি

গ্রেপ্তারের পরে গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১ ধারা অনুসারে গ্রেপ্তার ব্যক্তির দেহতল্লাশি করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া তাঁর নিকট যা পাওয়া যাবে, তা নিরাপদ হেফাজতে রাখবেন। আসামি যদি নারী হন, তবে এমন প্রকার তল্লাশি কার্যক্রম কার্যবিধির ৫২ ধারা অনুসারে অবশ্যই নারীদের দিয়ে করাতে হবে। নারীদের দেহতল্লাশির সময় সব ধরনের শালীনতা রক্ষা করতে হবে এবং সে সময় কোনো পুরুষ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কোনো নারীর হাতে যদি ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে শাঁখা বা কাচ বা লোহার চুড়ি থাকে, তা খুলতে বলা যাবে না। তল্লাশি সম্পন্ন হওয়ার পর যেসব জিনিস আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত কর্মকর্তা হেফাজতে নেবেন, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে অবহিত করে তাতে তার স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তির অবশ্যই ওই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং তালিকাটি ভালোভাবে পড়ে তাতে স্বাক্ষর করতে হবে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে হাতকড়া পরানো

গ্রেপ্তারের পর আটক ব্যক্তিকে হাতকড়া পরানো হয়। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার আমাদের সামাজিক দৃষ্টিতে অমর্যাদাকর। সে জন্য পুলিশের হাতকড়া ব্যবহারের জন্য রয়েছে কিছু নিয়মকানুন। পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল–এর ৩৩০ নম্বর প্রবিধানে হাতকড়ার ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়েছে, জামিনযোগ্য মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যাবে না। উক্ত প্রবিধানে আরও বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই নারীদের হাতকড়া লাগানো যাবে না এবং সেই সঙ্গে যাঁদের বয়স কম বা দুর্বলতার কারণে যাঁদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ, তাঁদের ক্ষেত্রেও হাতকড়া পরানো উচিত হবে না। কোনো সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত করার জন্য পরোয়ানা জারি করা হলে ওই সাক্ষীকেও হাতকড়া পরানো যাবে না। অ-জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পরিমাণ বিবেচনায় রেখে হাতকড়া পরাতে হবে। শিশুদের হাতকড়া পরানো সম্পর্কে শিশু আইন, ২০১৩–এর ৪৪(৩) ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কোনো শিশুকে গ্রেপ্তারের পর কোনোভাবেই হাতকড়া বা কোমরে দড়ি লাগানো যাবে না।

প্রতীকি ছবি

গ্রেপ্তার–আটক সম্পর্কে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ

সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে ‘গ্রেফতার আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ’ শিরোনামে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। প্রথম দফায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের কারণ না জানিয়ে কোনো ব্যক্তিকে আটক করা যাবে না এবং আটক ব্যক্তিকে অবশ্যই তাঁর মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। ওই অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় দফায় আরও বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিকে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকেই ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা যাবে না।

সংবিধান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক. গ্রেপ্তার ব্যক্তির গ্রেপ্তারের কারণ জানা, খ. গ্রেপ্তারের পর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা এবং গ. আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ লাভ হচ্ছে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সেই সঙ্গে সংবিধান অনুসারে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ব্যতীত ২৪ ঘণ্টার অধিক আটক না রাখা হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি সংবিধানের নির্দেশনা। তবে বিদেশি শত্রু ও যাঁকে ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’ বা নিবর্তনমূলক কারণে আটক করা হয়েছে, সেই সব ব্যক্তি এই সাধারণ সাংবিধানিক অধিকারগুলো পাবেন না।

আদালতে পাঠানোর পূর্বে গ্রেপ্তার ব্যক্তির প্রতি পুলিশের দায়িত্ব

পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের ৩২৮ নম্বর প্রবিধান অনুসারে আদালতে পাঠানোর আগে থানা বা ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার সব ব্যক্তির নিরাপদ জিম্মার জন্য দায়ী থাকবেন। কোনো ব্যক্তিকে থানায় আনার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রথম দায়িত্ব থাকে গ্রেপ্তার নারী ও পুরুষ বন্দীদের হাজতে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা। গ্রেপ্তার ব্যক্তির হাজতখানা থেকে পলায়ন বা আত্মহত্যার কাজে সহায়ক হতে পারে, এমন বস্তু লুকানো আছে কি না, তা নিবিড়ভাবে তল্লাশি করে দেখা। সেই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার আরও দায়িত্ব থাকবে বন্দীর দেহে আঘাতের চিহ্ন আছে কি না, তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা। এমন আঘাতের চিহ্ন পরীক্ষা করার সময় অবশ্যই উপযুক্ত ব্যক্তি বা সাক্ষীর সামনে করতে হবে। যদি আঘাতের চিহ্ন থাকে, তবে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিকটতম হাসপাতালে প্রেরণ করবেন এবং চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। চিকিৎসকের এমন প্রত্যয়নপত্রের কপি গ্রেপ্তার ব্যক্তিকেও সরবরাহ করতে হবে। থানার বা ফাঁড়ির হাজতখানায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির যেকোনো প্রকার ক্ষতির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের রায়

গ্রেপ্তার ব্যক্তির প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেমন আচরণ করবে, সে সম্পর্কে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। তবে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় [বাংলাদেশ বনাম ব্লাস্ট, ৬৯ ডিএলআর (এডি) (২০১৭) ৬৩] পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ও নিম্ন আদালতের জন্য কিছু কর্তব্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। এখানে মানবজীবনকে মহামূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে মানবাধিকারের দিকে লক্ষ্য রেখে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সম্পন্নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আদালতের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাগুলো হচ্ছে, ক. গ্রেপ্তারের সময় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা তাঁর পরিচয়পত্র দেখাবেন, খ. কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারের স্মারকলিপি প্রস্তুত করতে হবে, যেখানে গ্রেপ্তারের তারিখ–সময় উল্লেখসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন, গ. গ্রেপ্তারের সময় যদি গ্রেপ্তার ব্যক্তির বন্ধু বা নিকটাত্মীয় পাশে না থাকেন, তবে গ্রেপ্তারের পরে যত দ্রুত সম্ভব (অবশ্যই ১২ ঘণ্টার ঊর্ধ্বে নয়) গ্রেপ্তার ব্যক্তির বলে দেওয়া আত্মীয় বা বন্ধুকে গ্রেপ্তারের তারিখ, সময় ও হেফাজতে রাখার স্থান (থানার নাম) অবহিত করবেন, ঘ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব, তার পছন্দের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের সুযোগ দেবেন, ঙ. গ্রেপ্তার ব্যক্তির দেহে কোনো প্রকার আঘাতের চিহ্ন থাকলে তা লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে নিকটতম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাবেন, চ. নারীদের জন্য নারী কনস্টেবলের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, ছ. গ্রেপ্তারপ্রক্রিয়ার পুরো বিষয় পুলিশ তার ডায়েরিতে লিখে রাখবে, যা প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে।

ফাইল ছবি

গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে দেওয়া বিবৃতি ও আইনি সতর্কতা

আটক হওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তার কাছে দেওয়া বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি সাধারণত সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২–এর ২৫ ধারা অনুসারে আদালতে প্রমাণ করা যায় না। তবে উক্ত আইনের ২৭ ধারায় বলা আছে, পুলিশের কাছে দেওয়া বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি করার পর সেই বিবৃতি বা স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে কোনো আলামত উদ্ধার করা হলে তা আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সে জন্য পুলিশের কাছে বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি বা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের কাছে প্রশ্নোত্তর কেমন হবে, সে সম্পর্কে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

পুলিশ: আপনার নাম?

গ্রেপ্তার ব্যক্তি: নিজের সঠিক নাম বলবেন।

পুলিশ: আপনার ঠিকানা?

গ্রেপ্তার ব্যক্তি: নিজের সঠিক ঠিকানা বলবেন।

পুলিশ: আপনি শুক্রবার বিকেলে কার সঙ্গে ছিলেন?

গ্রেপ্তার ব্যক্তি: আমি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে এর উত্তর দেব।

পুলিশ: এই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কি আপনার?

গ্রেপ্তার ব্যক্তি: আমি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে এর উত্তর দেব।

উপরের নমুনা প্রশ্নোত্তর থেকে এই কথা বলা যায়, নিজের সঠিক নাম-ঠিকানা ছাড়া পুলিশের কাছে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে একজন গ্রেপ্তার ব্যক্তি আইনত বাধ্য নয়। বাধ্য না থাকার এ অধিকার একজন গ্রেপ্তার ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত। সেই সঙ্গে যে পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন করবেন, তার পরিচয় জানার অধিকার গ্রেপ্তার ব্যক্তির থাকবে। পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিবৃতি আদায়ের জন্য ভয়ভীতি বা প্রলোভন প্রদর্শন করতে পারেন। এসব বিষয় গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে। লক্ষণীয় হচ্ছে পুলিশের কাছে কোনো প্রকার বিভ্রান্তমূলক ভুল ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা যাবে না, যা তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে।

প্রতীকী ছবি

উল্লেখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় বাংলাদেশের সব নাগরিকের জেনে রাখা উচিত, তা হচ্ছে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার বা আটক করতে এলে এবং পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের পরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া। পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি সন্দেহ দূর করার জন্য গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা যদি নির্দিষ্ট করে কোনো থানা বা জোনের নাম উল্লেখ করেন, তাহলে সেখানেও ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। গ্রেপ্তার নামের আইনি বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য একজন ভালো আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর বা ঠিকানা সব সময় সঙ্গে রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে, জনসচেতনতাই আইনবান্ধব সমাজ নির্মাণের মূল ভিত্তি।

সাজিদুর রহমান আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা