বাংলা কবিতার পঞ্চাশ বছর নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভষা ইনস্টটিউটে। ২২ ডিসেম্বর
বাংলা কবিতার পঞ্চাশ বছর নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভষা ইনস্টটিউটে। ২২ ডিসেম্বর

কবিতা নিয়ে আলোচনা সন্ধ্যা

কবিতা এ দেশের ইতিহাস, সমাজ ও মানুষের আত্মপরিচয়ের প্রতিফলন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কবিতা কেবল সাহিত্যচর্চার একটি শাখা নয়। কবিতা এ দেশের ইতিহাস, সমাজ ও মানুষের আত্মপরিচয়ের প্রতিফলন। স্বাধীনতার পর কবিতায় যে ভাষাগত ও শৈলীগত পরিবর্তন এসেছে, তা আমাদের সামষ্টিক অভিজ্ঞতারই ফসল।’

স্বাধীনতা–পরবর্তী পাঁচ দশকে বাংলাদেশের কবিতার ভাষা, শৈলী ও ভাবগত অভিযাত্রা নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা হলো গতকাল সোমবার সন্ধ্যায়। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সাহিত্য সংগঠন কালের ধ্বনি। আলোচনার প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানুষের মাঝে মানুষ খুঁজি, নেই তো ভেদাভেদ—একই রক্ত, একই প্রাণ, একই চোখের জেদ।’

সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ সৃষ্টি করা, বাংলাদেশের কবিতায় সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে নানান বিচিত্র ঢঙে। এটাই বাংলাদেশের কবিতার বিশিষ্টতা।
....কবি মাহাবুব হাসান

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) প্রকাশ করেছে কবিতাবিষয়ক বই বাংলাদেশের কবিতা (১৯৭২- ২০২২): ভাষা ও শৈলী। আলোচনা মূলত ছিল এই বই নিয়ে।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক বিশিষ্ট কবি মাহাবুব হাসান বলেন, ৫০ বছর বাংলাদেশের কবিতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমাত্রিক। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কবিতা একদিকে যেমন রাষ্ট্র ও রাজনীতির সঙ্গে সংলাপে লিপ্ত, অন্যদিকে ব্যক্তিমানুষের নিঃসঙ্গতা, প্রেম, বেদনা ও অস্তিত্বের প্রশ্নকেও গভীরভাবে ধারণ করেছে। সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ সৃষ্টি করা, বাংলাদেশের কবিতায় সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে নানান বিচিত্র ঢঙে। এটাই বাংলাদেশের কবিতার বিশিষ্টতা।

কবি ও সমালোচক কুদরত-ই-হুদা বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে বাঙালি মুসলমানের যে স্বপ্ন-সাধ ক্রিয়াশীল ছিল, তা ওই রাষ্ট্রের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে মিলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা দানা বাঁধে। পূর্ব বাংলার মানুষের চেতনার এই ক্রম দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তাদের কাব্য-কবিতায়।

আরও আলোচনা করেন কবি চঞ্চল আশরাফ, জাকির আবু জাফর, শিক্ষক আমীনা রুমিয়া, কবি মনসুর আজিজ, সানাউল্লাহ সাগর, আবিদ আজম, সুমন রেজা, শাহাদাত সুফল ও তরুণ ইউসুফ।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর কবিতায় ভাষার ভাঙন, নতুন উপমা, নগরজীবনের সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশ্ন বারবার ফিরে এসেছে। তাঁরা বৃহত্তর বাংলাদেশের রূপ–রস ভাবনার আপন মানুষ কবি জসীমউদ্‌দীনকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণার দাবিও করেন।

অনুষ্ঠানে গান করেছেন আবিদ আজম ও হীরক রাজা। আবৃত্তি করেন রেজাউল করিম শেখ ও রিয়াজ ইনসান। সঞ্চালনা করেন কবি ইমরান মাহফুজ।