নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। নির্বাচন ও সংস্কার পরস্পরবিরোধী নয়। বরং সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যাত্রা নিশ্চিত করা না গেলে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা কখনোই সুষ্ঠু ও জনমুখী হতে পারে না।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা: জরুরি সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সুশাসন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। আজ বুধবার বিকেলে যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা ফোরাম ইনিশিয়েটিভ ও ইউনিভার্সাল নিউজ এজেন্সি (ইউএনএ)।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিক যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, সেটিই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। নির্বাচন না হলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয় না। নির্বাচন একটি টিমওয়ার্ক—এতে শুধু সংসদ সদস্যরাই নন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, ‘সংস্কার কেবল আইন পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি হচ্ছে মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করা। প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষানীতি ও রাজনৈতিক কাঠামো—সবকিছুরই সময়োপযোগী ও ন্যায়ভিত্তিক সংস্কার দরকার।’
আলোচনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘ইলেকশন মানেই তাড়াহুড়ো নয়। তবে নির্বাচন না হওয়া এবং দীর্ঘকাল ধরে তা পিছিয়ে যাওয়াও সমাধান নয়। সময়মতো এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরি।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন পরিচালনার জন্য যথেষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, অনেক কেন্দ্রেই অনিয়ম হয়েছে। অথচ প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ও সংস্কার পরস্পরবিরোধী নয়। বরং সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এমনভাবে ভেঙে পড়েছে, যা পুনর্গঠনের জন্য সময়োপযোগী সংস্কার অপরিহার্য। নির্বাচন জরুরি, তবে তার আগে প্রয়োজন নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থা।
সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলই প্রমাণ করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে দেশে আজ রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সুতরাং, নির্বাচন ও সংস্কার—দুটিই অপরিহার্য এবং এ দুটিকে সমান্তরালে এগিয়ে নিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘আমাদের ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে। মনে হয় পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে টিকে থাকতে একসময় লড়াই করতে হবে।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মারুফ হোসেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ প্রমুখ।