Thank you for trying Sticky AMP!!

ট্রাকভাড়া বেড়েছে ২০%, বাড়তি সবজির দামও

ট্রাকভাড়া বৃদ্ধির তুলনায় সবজির দাম বেশি বেড়েছে। নিজেদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রাত ১২টা। ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে সবজিবাহী ট্রাকগুলো আসতে শুরু করেছে। কোনোটায় ঝিঙে, কোনোটায় পটোল, আবার কোনোটায় একাধিক ধরনের সবজি।

বগুড়া থেকে ট্রাকচালক আবদুল মমিন নিয়ে এসেছিলেন ঢ্যাঁড়স, করোলাসহ বিভিন্ন সবজি। তিনি প্রথম আলোকে জানালেন, বগুড়ার থেকে আসতে তাঁর সাড়ে তিন টন ক্ষমতার ট্রাকে ডিজেল খরচ হয়েছে ৯০ লিটারের মতো (আসা-যাওয়া)। সরকারনির্ধারিত নতুন দামে ডিজেল কিনতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ২৬০ টাকা, যা এক দিন আগের তুলনায় ৩ হাজার ৬০ টাকা বেশি।

এই ট্রাকচালকের ভাষ্য অনুযায়ী, বগুড়া থেকে ঢাকায় সবজি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাড়ে তিন টন ক্ষমতার একটি ট্রাকে ভাড়া বেড়েছে তিন হাজার টাকার মতো। এত দিন ভাড়া ছিল ১২ হাজার টাকার আশপাশে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর নেওয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকার মতো।

কারওয়ান বাজারে গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে রোববার ভোর ৫টা পর্যন্ত থেকে ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বিভিন্ন রুটে ট্রাকভাড়া ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর প্রভাব পড়েছে সবজির দামেও। পাইকারি ও খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। কম দামি সবজিগুলোর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা এবং বেশি দামের সবজির দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে। এর পুরোটাই যে ট্রাকভাড়ার কারণে, তা নয়, চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়টিও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এও বলছেন, তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। এ কারণে তাঁরা একটু বেশি দাম নিচ্ছেন।

জনপ্রিয় সবজি বেগুনের উদাহরণটি দেওয়া যাক। ঢাকার কাঁঠালবাগান, নিউমার্কেট ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালো মানের গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দুই দিন আগেও এই বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা ছিল।

ট্রাকভাড়া কত বাড়ল

সরকার গত শুক্রবার রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে দেয়। রেকর্ড এই মূল্যবৃদ্ধির পর বাড়তি দরে তেল কিনে শনিবার বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি নিয়ে কারওয়ান বাজারে আসে ট্রাকগুলো।

বগুড়া, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোর, সাতক্ষীরা ও মুন্সিগঞ্জ থেকে সবজি নিয়ে আসা ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দূরত্ব ও ট্রাকের বহনক্ষমতাভেদে ভাড়া বাড়ার পরিমাণ ভিন্ন। ট্রাকচালকেরা যে হিসাব দিলেন, তাতে ভাড়া বেড়েছে কার্যত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।

যেমন চুয়াডাঙ্গা থেকে যেসব ট্রাক (সাড়ে তিন টন) এসেছে, তাদের আসা-যাওয়ায় জ্বালানি তেল বাবদ এখন অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। তারা সবজি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সেটাই বেশি নিচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় আসতে আগে ভাড়া ছিল ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ২০ হাজার টাকার মতো।

চুয়াডাঙ্গা থেকে লাউ, পটোল, চিচিঙ্গা, ড্রাগন ফল ও পেয়ারা নিয়ে আসা মো. সুজন নামের একজন ট্রাকচালক প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত তেল বাবদ বাড়তি খরচটুকু ভাড়ার সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। তবে ভাড়া আরেকটু বাড়বে। কারণ, জ্বালানি তেলের সঙ্গে আরও অনেক খরচ বাড়ে। সেটা মালিকেরা পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবেন।

ট্রাকভাড়ার প্রভাব কতটুকু

কারওয়ান বাজারের আড়তে সবজি কেনাবেচা শুরু হয় মধ্যরাত থেকেই। ট্রাকচালক সুবিধামতো জায়গায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে সাধারণত চায়ের দোকানে সময় কাটান। এমন কয়েকটি চায়ের দোকানে বসে থেকে শোনা যায়, চালক ও ফড়িয়ারা ডিজেলের দাম ও ট্রাকভাড়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। বেশির ভাগই একলাফে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাতে চায়ের দোকানে চা পান করতে করতে ঝিনাইদহ থেকে আসা ট্রাকচালক আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তেল বাবদ তাঁর বাড়তি ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

আশরাফুল ইসলামের হিসাব ধরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি কেজি সবজিতে ট্রাকভাড়া বাবদ বাড়তি ব্যয় দাঁড়ায় ৩২ পয়সার মতো। কিন্তু পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়েছে আরও বেশি।

ফড়িয়া ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকের খরচ বেড়েছে, শ্রমিকের খরচ বেড়েছে, তাঁর নিজের পরিবারের খরচ বেড়েছে। সবকিছুই সবজির দামে যোগ হবে।

খুচরায় বেশি বেড়েছে

কারওয়ান বাজারের আড়তে শনিবার রাতে বরবটি প্রতি কেজি ৩৮-৪০, পটোল ২০-২৫, মিষ্টি কুমড়া ২২-২৫, লতি ৩৫-৪০, চিচিঙ্গা ৩০-৩২, ঝিঙে ৩৪-৩৫ ও কাঁচা পেঁপে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। মাঝারি আকারের লাউ প্রতিটি বিক্রি হয় ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে। এই দর কোনো ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ২ টাকা, কোনো ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি।

কাঁঠালবাগান, নিউমার্কেট ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, পটোল, কচুর লতি, ঝিঙে, ধুন্দল, বরবটির মতো মৌসুমি সবজি গতকাল খুচরায় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। কারওয়ান বাজারের আড়তে যে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়, তা খুচরা বাজারে ৪০ টাকা চান বিক্রেতারা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, কারওয়ান বাজারেই সবজির দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৫ থেকে ১০ টাকা। কারওয়ান বাজার থেকে একটা পিকআপে সবজি আনতে ১ হাজার টাকার ভাড়া দেড় হাজার টাকা লেগেছে। সব মিলিয়ে সবজির বাড়তি দাম ধরেছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ট্রাকভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়লে সবজির গড় দাম বেড়ে যায়। এ কারণেই মৌসুমের সময়ে কৃষক পর্যায়ে সবজির কেজি ৫ টাকায় নামলেও ঢাকার খুচরা বাজারে তা ৩০ টাকার কমে বিক্রি হয় না।