জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া স্বজনের ছবি হাতে এসেছেন পরিবারের সদস্যরা। রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া স্বজনের ছবি হাতে এসেছেন পরিবারের সদস্যরা। রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

দুই দিনে ছয়টি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ অজ্ঞাতনামা ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্তে গতকাল রোববার থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ব্যবস্থাপনায় মরদেহ উত্তোলনের কাজ চলছে। গত দুদিনে ছয়টি মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। উত্তোলনের পর হাড়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা শহীদদের স্বজনদের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে।

আজ সোমবার বিকেলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান মরদেহ উত্তোলনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ-সংলগ্ন কবরস্থান থেকে এই মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজে ঢাকা জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সহযোগিতা করছে।

সিআইডি বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফনডিব্রাইডার আর্জেন্টিনা থেকে ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরাও এ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। কবর থেকে মরদেহ তোলার আগেই তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সিআইডির গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ। আন্তর্জাতিক মিনেসোটা প্রটোকল সম্পূর্ণরূপে মেনেই কাজটি করা হচ্ছে। শুরুর দিকে কিছুটা সময় লাগছে। প্রথম দিনে দুটি মরদেহ উত্তোলন করেছি। উত্তোলনের পর তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ময়নাতদন্ত করে পুনরায় দাফন করা হয়েছে। যথারীতি সোমবার সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে আরও চারটি মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব মরদেহের ডিএনএ নমুনা, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এই কাজ চলমান থাকবে।’

নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিচয় জানতে সাতটি শহীদ পরিবারের ১১ জন স্বজন তাঁদের ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। তাঁদের ডিএনএন নমুনার সঙ্গে অজ্ঞাতনামা মরদেহের নমুনা মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ চলছে। তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করাই এখন আমাদের মূল কাজ।’

সিআইডির তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত জুলাইয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে নিখোঁজ হওয়া সোহেল রানা (২৮), গোপীবাগ থেকে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৫০), উত্তরা থেকে নিখোঁজ মো. আসাদুল্লাহ (৩১), মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ মাহিন মিয়া (২৫), উত্তরা থেকে নিখোঁজ ফয়সাল সরকার (২৫), রফিকুল ইসলাম (২৯), আহমেদ জিলানীর (৩০) স্বজনেরা ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। তবে এখনো কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

জুলাই–আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১১৪ জনের পরিচয় জানা যায়নি। অজ্ঞাতনামা এসব মরদেহ রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছিল। বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে লাশগুলো দাফন করেছিল। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, রায়েরবাজার কবরস্থানে তারা জুলাইয়ে ৮০ জনের ও আগস্টে ৩৪ জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছিল।

এসব মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে গত ৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদনটি করেন মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম।