
সাহসী সত্য উচ্চারণে অবিচল প্রথম আলোর একটাই লক্ষ্য, তা হচ্ছে বাংলাদেশের জয়। ২৭ বছর পেরিয়ে আসা প্রথম আলোর পথচলার উদ্দেশ্য একটি বাক্যেই স্পষ্ট করেছেন সংবাদপত্রটির সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে অনেক কিছু প্রচার করে। কিন্তু প্রথম আলোর একটাই এজেন্ডা, বাংলাদেশের বিজয়। আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই। এর বাইরে আমাদের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই।’
আজ শুক্রবার গাজীপুরের মৌচাকের জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মাঠে আয়োজিত প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় বন্ধু সমাবেশ-২০২৫ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রথম আলো সম্পাদক। শীতের কুয়াশাঢাকা সকালে সারা দেশের প্রায় ১ হাজার ২০০ বন্ধুর অংশগ্রহণে ‘আমরা সবাই বাংলাদেশ’স্লোগানে তিন দিনের এ সমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় এদিন।
মতিউর রহমান বলেন, দেশের বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যেও সারা দেশ থেকে তরুণদের এই সমাবেশে একত্র হওয়া একটি বড় সাহসের কাজ। এ জন্য বন্ধুসভার কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সময়ে এমন একটি আয়োজন আমাদের শক্তি ও সাহস জোগায়।’
স্বাধীনতার ৫৫ বছর পরেও গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলার যে ঘটনা ঘটছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, উদীচী, ছায়ানটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা-এগুলো আমাদের কখনো কল্পনাতেও ছিল না।’
‘আগুন দিয়ে অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হলেও প্রথম আলোর কর্মীরা ভেঙে পড়েননি। বরং তাঁরা আরও বেশি উদ্যমী হয়েছেন। সেই রাতেই আমরা ঠিক করেছি, আরও দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে, আরও ভালো সাংবাদিকতা করতে হবে।’মতিউর রহমান, প্রথম আলো সম্পাদক
১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হয় প্রথম আলো। হামলাকারীরা ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংবাদপত্রের প্রধান কার্যালয় ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই রাতে একইভাবে হামলা হয় ডেইলি স্টার কার্যালয়, ছায়নট সংস্কৃতি ভবনে। পরদিন উদীচীর কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রথম আলোর ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে মতিউর রহমান বলেন, ‘আগুন দিয়ে অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হলেও প্রথম আলোর কর্মীরা ভেঙে পড়েননি। বরং তাঁরা আরও বেশি উদ্যমী হয়েছেন। সেই রাতেই আমরা ঠিক করেছি, আরও দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে, আরও ভালো সাংবাদিকতা করতে হবে।’
তরুণদের উদ্দেশে প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, পড়াশোনা ও পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মানবিক চর্চা অত্যন্ত জরুরি। কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস মানুষের ভেতরের মানুষটাকে তৈরি করে। এই চর্চাই ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তোলে।
বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে অনিশ্চয়তা, সহিংসতা ও বিভাজন বাড়ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, সংখ্যালঘু নিপীড়ন ও দরিদ্র মানুষের ওপর নির্যাতন গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নতুন করে ঐক্য, সমঝোতা ও সাহস গড়ে তুলতে হবে।
প্রথম আলো ও প্রথম আলো বন্ধুসভা একসঙ্গে থেকে সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সব অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির মধ্যেও আমরা নিরুৎসাহিত নই। আমাদের আশা আছে। প্রথম আলো ও প্রথম আলো বন্ধুসভা একসঙ্গে থেকে সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য-বাংলাদেশের জয়।’