
অনলাইনে কোনো ভিডিও দেখতে গেলে বা কোনো কিছু খুঁজতে গেলে ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে এত দিন যে অভিযোগ ছিল, তা থেকে বের হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
কারণ, বাণিজ্যিকভাবে দেশের কিছু এলাকায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবা ফাইভ-জি বা পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি চালু হয়েছে। বিদ্যমান ফোর-জি থেকে অনেক বেশি গতি পাওয়া যাবে এই নেটওয়ার্কে।
গতকাল সোমবার দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা লিমিটেড বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর ঘোষণা দেয়।
অপারেটর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ফাইভ-জি চালুর পর গতি ৫০০ থেকে ৬০০ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) উঠেছিল। তবে এখন গ্রাহকসংখ্যা সীমিত। তাই যখন গ্রাহক বাড়বে, সবাই একযোগে ব্যবহার করবে, তখন এই গতি কিছুটা কমে আসবে।
রবি জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সাতটি জায়গায় তারা ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। জায়গাগুলো হলো ঢাকার ফকিরাপুল (পল্টন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু এলাকা (শাহবাগ), মগবাজার চৌরাস্তা; চট্টগ্রামের খুলশী, পাঁচলাইশ ও ওয়াসা মোড় এবং সিলেটের সাগরদিঘির পাড়। পর্যায়ক্রমে দেশের বাকি অঞ্চলে এই সেবা চালু হবে।
গ্রামীণফোন বলেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর বিভিন্ন জায়গায় তারা ফাইভ-জি চালু করেছে। পর্যায়ক্রমে টাওয়ার নামে পরিচিত বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশনগুলো (বিটিএস) ফাইভ-জির আওতায় আনা হচ্ছে।
ফাইভ-জির সুবিধা কী
ফাইভ-জি হচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবা। এর গতি ফোর-জির চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি হতে পারে। তবে দেশভেদে গতিতে ভিন্নতা দেখা যায়।
অপারেটর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ফাইভ-জি চালুর পর গতি ৫০০ থেকে ৬০০ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) উঠেছিল। তবে এখন গ্রাহকসংখ্যা সীমিত। তাই যখন গ্রাহক বাড়বে, সবাই একযোগে ব্যবহার করবেন, তখন এই গতি কিছুটা কমে আসবে। যদিও সাধারণভাবে ফোর-জির চেয়ে দ্বিগুণের বেশি গতি ফাইভ-জিতে পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তারা।
ফাইভ-জিতে ডেটা আদান-প্রদানের সময় অনেক কম লাগে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারে পাওয়া যায় স্বাচ্ছন্দ্য।
গ্রামীণফোন বলেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর বিভিন্ন জায়গায় তারা ফাইভ-জি চালু করেছে। পর্যায়ক্রমে টাওয়ার নামে পরিচিত বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশনগুলো (বিটিএস) ফাইভ-জির আওতায় আনা হচ্ছে।
ভিডিও স্ট্রিমিং, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসে সংযোগ–সুবিধা, স্মার্ট সিটি, টেলিমেডিসিন, এআর/ভিআর, ক্লাউড গেমিং, স্বচালিত গাড়ি, অনলাইন ক্লাস, দূর থেকে অস্ত্রোপচারসহ অটোমেশনের সেবায় ফাইভ-জি ব্যবহৃত হয়।
এ ছাড়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে সে অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
বিশ্বের যেসব দেশে ফাইভ-জি চালু আছে, সেখানে সাধারণ গ্রাহকদের ব্যবহার ছাড়াও বন্দর পরিচালনা, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, চিকিৎসা, শিক্ষা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, শিল্প খাতে এই সেবা ব্যবহৃত হয়।
কীভাবে ব্যবহার
অপারেটররা জানিয়েছে, ফাইভ-জি ব্যবহার করতে হলে এ সুবিধা সমর্থন করে—এমন মুঠোফোন লাগবে। আধুনিক মডেলের মুঠোফোনগুলো সাধারণত ফাইভ-জি উপযোগী হয়ে থাকে।
মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য সিম পরিবর্তন করতে হবে না। এ ছাড়া ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য বাড়তি কোনো টাকা দিতে হবে না। বিদ্যমান ফোর-জি ডেটা কিনেই গ্রাহকেরা ফাইভ-জি ব্যবহার করতে পারবেন।
অর্থাৎ গ্রামীণফোন ও রবির ফাইভ-জি নেটওয়ার্কভুক্ত এলাকার কোনো গ্রাহকের এই প্রযুক্তি উপযোগী মুঠোফোন থাকলেই তিনি তা ব্যবহার করতে পারবেন। প্রয়োজনে মুঠোফোনের কানেকশন অপশন থেকে ফাইভ-জি চালু করে নিতে হবে।
রবি জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সাতটি জায়গায় তারা ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। জায়গাগুলো হলো ঢাকার ফকিরাপুল (পল্টন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু এলাকা (শাহবাগ), মগবাজার চৌরাস্তা; চট্টগ্রামের খুলশী, পাঁচলাইশ ও ওয়াসা মোড় এবং সিলেটের সাগরদিঘির পাড়। পর্যায়ক্রমে দেশের বাকি অঞ্চলে এই সেবা চালু হবে।
বাংলাদেশে ফাইভ-জি
বাংলাদেশে আশির দশকের শেষ দিকে এসে প্রথম প্রজন্মের, অর্থাৎ ওয়ান-জি প্রযুক্তি আসে সিটিসেলের মাধ্যমে। এরপর ১৯৯৬ সালে আসে টু-জি প্রযুক্তি। এর প্রায় ১৭ বছর পর চালু হয় থ্রি-জি। অন্যদিকে ফোর-জি চালু হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
বাংলাদেশে ফোর-জি চালুর পরের বছর ২০১৯ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি চালু করে। বাংলাদেশে অবশ্য পাঁচ বছর ধরে ফাইভ-জি নিয়ে আলোচনা চলছিল।
দেশে ২০২১ সালে প্রথম ফাইভ-জির পরীক্ষা হয়। সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক দেশের কিছু স্থানে এ পরীক্ষা করেছিল।
পরের বছর ২০২২ সালের মার্চে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফাইভ-জি চালুর লক্ষ্য নিয়ে তরঙ্গ নিলাম আয়োজন করেছিল। সে বছরই গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক ফাইভ-জির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করেছিল।
সবার কাছে যেন পৌঁছায়
এরিকসন মোবিলিটি রিপোর্ট জুন ২০২৫-এ বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বে ফাইভ-জি সাবস্ক্রিপশনের সংখ্যা ২৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সালের শেষে এই সংখ্যা প্রায় ২৯০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর ২০৩০ সালের শেষে সব মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হবে ফাইভ–জি। তখন বৈশ্বিক ফাইভ-জি সাবস্ক্রিপশন প্রায় ৬৩০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে।
গতকাল সোমবার রবি ফাইভ-জি উদ্বোধনের জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ফাইভ–জি প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও স্মার্ট সিটি উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। তবে ফাইভ-জি যেন শুধু সমাজের অভিজাত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। এ সেবা যেন সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়।
ফাইভ-জি শুধু শহুরে বাসিন্দাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামাঞ্চলেও যেন পৌঁছায়, সে আহ্বান জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী। তিনি বলেছেন, সবার কাছে না পৌঁছালে বৈষম্য কমবে না।