মালিক মোহাম্মদ সাঈদ
মালিক মোহাম্মদ সাঈদ

সাক্ষাৎকার: মালিক মোহাম্মদ সাঈদ

একের পর এক উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে স্কয়ার

গত কয়েক বছরে সাবানের বাজারে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড মেরিল মিল্ক সোপ বার শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে, যা গ্রাহক চাহিদার শীর্ষে আছে। তাদের বিপনন কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন মালিক মোহাম্মদ সাঈদ।

প্রশ্ন

বর্তমানে বাংলাদেশের সাবান বাজারে স্কয়ার টয়লেট্রিজের অবস্থান কীভাবে দেখেন প্রতিযোগিতার ভিড়ে এগিয়ে থাকতে আপনাদের আলাদা কৌশল কী?

মালিক মোহাম্মদ সাঈদ: গত কয়েক বছরে সাবানের বাজারে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড মেরিল মিল্ক সোপ বার শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে, যা গ্রাহক চাহিদার শীর্ষে আছে। কানতার বাংলাদেশের ওয়ার্ল্ড প্যানেল সার্ভে ২০২৫ অনুযায়ী, মেরিল এক বছরের ব্যবধানে মোস্ট চুজেন পারসোনাল কেয়ার ব্র্যান্ড তালিকায় দুই ধাপ এগিয়েছে। আমাদের বিস্তৃত ব্র্যান্ড পোর্টফোলিও, বিপণন কৌশল এবং শক্তিশালী রিটেইল কভারেজ সাবানসহ অন্যান্য পণ্যের  ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে।

প্রশ্ন

ভোক্তারা এখন মানসম্মত ও বৈচিত্র্যময় সাবানের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁদের চাহিদা পূরণে আপনারা কীভাবে কাজ করছেন

মালিক মোহাম্মদ সাঈদ:  অনেক বছর ধরে সাবান বাজারে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্ভাবন ছিল না। সেই সময় স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড ভোক্তাদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একের পর এক উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে। সাবান কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির পণ্য নয়; বরং গোসলের পর ত্বক যেন রুক্ষ না হয়, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত থাকে—এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাজারে এনেছি মেরিল মিল্ক সোপ বার ও মেরিল ভিটামিন সি সোপ বার। শিশুদের জন্য রয়েছে মেরিল বেবি ক্রিম সোপ বার, যেখানে রয়েছে দুধ ও প্রোবায়োটিক। অন্যদিকে হেলথ সোপ বাজারে আমাদের সেপনিল স্যানিটাইজিং সোপ বার এরই মধ্যে ভোক্তাদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।

প্রশ্ন

প্রাকৃতিক ও ভেষজ উপাদানভিত্তিক সাবানের প্রতি ক্রমে আগ্রহ বাড়ছে। এই বাজারে স্কয়ার টয়লেট্রিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মালিক মোহাম্মদ সাঈদ: আমাদের সাবান প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ কাঁচামাল দিয়ে তৈরি। ভোক্তারা যেমন ন্যাচারাল পণ্য চান, আমরাও তাদের সেই চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে সাবান তৈরি করি। আমরা লক্ষ্য করছি, বিপুলসংখ্যক ভোক্তা ধীরে ধীরে রাসায়নিকমুক্ত পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। রাসায়নিকের প্রতি আস্থাহীনতার পেছনে রয়েছে স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ ও পরিবেশগত সচেতনতা—দুটিই আজকের ভোক্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রাখছে।

প্রশ্ন

স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও সাবানের সম্ভাবনা আছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে আপনাদের অভিজ্ঞতা কী?

মালিক মোহাম্মদ সাঈদ: আন্তর্জাতিক বাজারে মেরিল সাবানের সম্ভাবনাকে আমরা অত্যন্ত উজ্জ্বল বলে মনে করি। গত কয়েক বছরে স্কয়ার টয়লেট্রিজ সফলভাবে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করেছে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে ভিন্ন দেশের ভোক্তার প্রত্যাশা বুঝে, আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উপস্থাপন করতে হয়। রপ্তানি সব সময় কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে—যেমন লজিস্টিক জটিলতা ও বাজারভেদে পার্থক্য। তবে আমরা এগুলোকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নয় বরং সুযোগ হিসেবে দেখি, যাতে বাংলাদেশের মানকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরা যায়। আমাদের লক্ষ্য শুধু দেশীয় বাজারে সীমাবদ্ধ থাকা নয়; বরং মেরিলকে একটি বিশ্বস্ত আন্তর্জাতিক পারসোনাল কেয়ার ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ইতিমধ্যে আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও সার্কভুক্ত একাধিক দেশে সফলভাবে পণ্য রপ্তানি করছি।

প্রশ্ন

সাবান তৈরির প্রধান কাঁচামালের দামের অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনের সমস্যা আপনাদের উৎপাদন ও মুনাফার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

মালিক মোহাম্মদ সাঈদ: আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করা হয়। বর্তমানে সাবান নুডলসের ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ, যা এই শিল্পের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। গত দুই বছরে ডলারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে এবং নেট মুনাফা সংকুচিত করছে।

প্রশ্ন

সাবান উৎপাদনে টেকসই প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং এবং করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব (সিএসআর) নিয়ে স্কয়ার টয়লেট্রিজ কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে?

মালিক মোহাম্মদ সাঈদ: স্কয়ার টয়লেট্রিজ প্রতিনিয়ত টেকসই প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। বর্তমানে আমাদের মেরিল সাবান প্যাকেজিং ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং প্রায় ৩০ শতাংশ প্যাকেজ বায়োডিগ্রেডেবল। আমরা করপোরেট সামাজিক দায়িত্বের আওতায় বিভিন্ন সামাজিক ও স্বাস্থ্যসচেতন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে ভোক্তা ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে সচেষ্ট।