Thank you for trying Sticky AMP!!

বন্ধ হয়ে যাওয়া কুষ্টিয়ার মোহিনী মিল

৪ দশকেও বিক্রি হলো না কুষ্টিয়ার মোহিনী মিল

কারখানা বিক্রির জন্য ১৯৮১ সালে গঠন করা হয় ‘লিকুইডেশন সেল’ বা বিলুপ্তির দপ্তর। কারখানা বিক্রি করতে না পারায় এখনো রয়ে গেছে সেলটি।

কুষ্টিয়ার মোহিনী মিল বন্ধ হয়ে যায় ১৯৮২ সালে। এর পর থেকে এ কারখানার জমি বেদখল হতে থাকে।

এরই মধ্যে কারখানার প্রায় অর্ধেক জমি বেদখল হয়ে গেছে। কারখানার মূল অংশসহ বাইরের কিছু জায়গা মিলে প্রায় সাড়ে ১৬ একর জমি নিয়ন্ত্রণে আছে এখন। কারখানা ভবনের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। লতাপাতায় ঢেকে গেছে লোহার যন্ত্রাংশ।

চারদিকে গজিয়েছে বটসহ নানা গাছপালা। পুরো কারখানার চত্বর পরিণত হয়েছে জঙ্গলে। সম্প্রতি সরেজমিনে একসময়ের নামকরা কারখানার এমন চিত্র দেখা গেল।

এই সেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরকারের মনোযোগ নেই। এগুলো অর্থনীতিতে দুষ্টচক্র সৃষ্টি করছে, যা সবদিক থেকেই লোকসান।
মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি

অথচ কারখানাটি বিক্রির জন্য ‘লিকুইডেশন সেল’ বা বিলুপ্তির দপ্তর ১৯৮১ সালের জুনে গঠন করে দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। তবে ৪২ বছরেও এটি বিক্রি করতে পারেনি তারা। এখন লিকুইডেশন সেলের ১৫ জনের বেশি কর্মচারী কারখানাটি দেখভাল করেন। এরপরও এর জায়গাজমির বেহাত হওয়াও ঠেকানো যায়নি।

শুধু এই কারখানা নয়, আরও তিনটি কারখানা বিক্রি করতে পারেনি এই সেল। ফলে এ সেলে কর্মরত ব্যক্তিদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন-ভাতা, কার্যালয়ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ দিতে হচ্ছে সরকারকে। অন্যদিকে বন্ধ থাকায় কারখানাগুলোর যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়াসহ সম্পদের অপচয় হচ্ছে। বেদখল হচ্ছে জায়গাজমি।

শুরুর দিকে মোহিনী মিলসহ চারটি কারখানা বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয় লিকুইডেশন সেলকে। বাকি তিনটি—আদর্শ কটন স্পিনিং অ্যান্ড উইভিং মিলস লিমিটেড, ঢাকেশ্বরী কটন মিলস লিমিটেড-১ ও ঢাকেশ্বরী কটন মিলস লিমিটেড-২ বিক্রি করতে পেরেছে তারা।

Also Read: পাঁচ দশক ধরে ভাড়া তোলাই কাজ এই সরকারি প্রতিষ্ঠানের

পরে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, চিশতী টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মসলিন কটন মিলস লিমিটেড ও ওরিয়েন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে আরও চারটি কারখানা বিক্রির জন্য এই সেলকে দায়িত্ব দেয় মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড বিক্রি হয়েছে।

২০২১–২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এই লিকুইডেশন সেলে ৩৫ জন ‘লিকুইডেটর’ হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন ৫২ জন। তাঁদের মধ্যে কর্মকর্তা তিনজন। বাকিরা অফিস সহকারী, চালক, দৈনিক ভাতাভিত্তিক নিরাপত্তা প্রহরীসহ বিভিন্ন পদের কর্মচারী।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই লিকুইডেশন সেলের পেছনে সরকারকে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। যে কারখানা ও যন্ত্রপাতিগুলো বিক্রি করা হয়েছে, সেই বিক্রির টাকা ব্যাংকে জমা আছে। সেখান থেকে যে আয় আসে, তা থেকে সেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খাতে খরচের জোগান দিচ্ছে সরকার।

জানতে চাইলে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাত্র দায়িত্ব নিলাম। আমি খোঁজ নেব। যেটা ভালো হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেব।’

প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিক্রি

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ২০২১–২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোহিনী মিল, মসলিন কটন ও চিশতী টেক্সটাইল—এই তিন কারখানা যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে বিক্রি করা হয়েছিল।

লিকুইডেশন সেলের কর্মকর্তারা জানান, এই কারখানা তিনটি বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দরপত্র আহ্বান ছাড়াই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কমে কারখানা বিক্রি করে দেয় মন্ত্রণালয়।

গাজীপুরের কালিগঞ্জের ৮১ দশমিক ১৪ একরের মসলিন কটন মিলস ১৩৫ কোটি টাকায়, কুমিল্লার দৌলতপুরের ১৬ দশমিক ৪৯ একর জমির চিশতী টেক্সটাইল ৩৫ কোটি টাকায় এবং কুষ্টিয়ার মিলপাড়ার ২৯ দশমিক ৩৬ একর জমির মোহিনী মিলস ২০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

Also Read: তুলা উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও নেই

যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে বিক্রি না করায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে মোহিনী মিলস ও চিশতী টেক্সটাইল সরকার ফেরত এনেছে, যা লিকুইডেশন সেলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে মসলিন কটন মিলস সরকার ফেরত আনতে পারেনি। যদিও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে এখনো নিবন্ধন করে দেয়নি মন্ত্রণালয়।

রাজধানীর মতিঝিলে আদমজী কোর্ট ভবনের নিচতলায় লিকুইডেশন সেলের কার্যালয়। সেখানে দুই দিন গিয়েও দেখা পাওয়া যায়নি লিকুইডেটর (উপসচিব) সাব্বীর আহমদের। তাঁর মুঠোফোনে কয়েক দিনে একাধিকবার কল দিয়েও উত্তর মেলেনি।

জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রউফ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, কারখানাগুলো বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছে। আইনি জটিলতার কারণে বিক্রি করা যাচ্ছে না। সে জন্য সেলটাও রয়ে গেছে।

‘এই সেলের বিলুপ্তি প্রয়োজন’

লিকুইডেশন সেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে সরকারি জমি বিক্রি না করার। ফলে এখন কারখানা বিক্রির উদ্যোগ সেই অর্থে নেই। কারখানাগুলো এভাবেই পড়ে থাকবে নাকি অন্য কিছু করা হবে—এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।

লিকুইডেশন সেলের কাছে যে আটটি কারখানা বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) অধীনে ছিল। সময় বেঁধে দিয়ে কারখানা বিক্রি করে বা বিটিএমসির কাছে কারখানা ফেরত দিয়ে কিংবা অন্য উপায়ে এই সেল বিলুপ্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এভাবে এই সেল রেখে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই সেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরকারের মনোযোগ নেই। এগুলো অর্থনীতিতে দুষ্টচক্র সৃষ্টি করছে, যা সবদিক থেকেই লোকসান।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন তৌহিদী হাসান, কুষ্টিয়াগাজীউল হক, কুমিল্লা]