প্রথম আলো–ডেইলি স্টারে হামলা

হামলাকারীদের বিচার দাবি, সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানানোর পাশাপাশি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে।

বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজেএ) উদ্যোগে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

সমাবেশের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী ন্যক্কারজনক এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেছি। অসহায় সাংবাদিকেরা প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি করছে। ডেইলি স্টারের ছাদের ওপরে আশ্রয় নিয়েছে একজন বোন। তার সেই দিনের কাকুতি মিনতি বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ দৃশ্য দেখতাম উনিশশ একাত্তরে। এ কেমন সভ্যতা! এ কেমন মানবতা! মানুষকে পুড়িয়ে মারে, তাকে সভ্যতা বলব কীভাবে? মানবতা বলব কীভাবে?’

এই হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর হামলা বলে মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা। তিনি বলেন, ‘এ কর্মকাণ্ডকে আমি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। এসব রাষ্ট্রদ্রোহীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাই। না হয়, এ অপকর্ম বাড়তেই থাকবে।’

সরকার যদি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার বিচার না করে, তাদের গায়ে কলঙ্কের তিলক লেগে থাকবে বলে মন্তব্য করেন কাদের গণি চৌধুরী। তিনি বলেন, অনেকে বলছে, নয়াদিগন্ত ও আমার দেশে হামলা হয়েছে। তার জন্য তো এদেশের মানুষ জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়েছে।

আর কোনো গণমাধ্যমের ওপর হামলা যেন না হয়, সে জন্য সাংবাদিকদেরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করার ফলে এ ধরনের হামলাকারীরা সুযোগ পায়। আমরা চাই না, আর কোনো গণমাধ্যমের ওপর হামলা হোক। আমরা বাক্‌স্বাধীনতা চাই। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। আমরা একটা মানবিক বাংলাদেশ চাই। সাংবাদিকরাই সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারে। তাই আমাদের প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধতা।’

এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি বলেন, ‘১৮ ডিসেম্বর, সেই রাতে পত্রিকা বের করার জন্য আমরা কাজ করছিলাম। কিন্তু সেই মুহূর্তে হঠাৎ আক্রমণ হয়েছে। আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আমাদের ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীরা কেউ মুখোশ পরে আসেনি। তারা প্রকাশ্যে এসেই হামলা করেছে। এ আঘাত স্বাধীন সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের নির্বাচন বানচাল করার একটা চক্রান্ত।’

প্রথম আলোর ডেপুটি হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, কেউ কোনো আক্রমণ করলে হেলমেট পরে আসত। এবারের আক্রমণে তারা মুখ খোলা রেখেই এসেছে। কারণ, তারা জানে, তাদের কিছুই হবে না।’

এ হামলার নেপথ্যে কারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘আমাদের মুখ বন্ধ না শুধু, গলা কাটার পরিকল্পনা হচ্ছে।’
দৈনিক আমার দেশের চিফ রিপোর্টার বাছির জামাল বলেন, বিজয় দিবসের মাসে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকার ওপর হামলা হয়েছে। এ হামলা হলে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের কাছে আবেদন, আসামিদের কঠিন শাস্তি দেন। আর যেন কেউ এ ধরনের হামলা করতে না পারে।’

বিপিজেএর সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার বলেন, সাংবাদিকেরা সত্য প্রকাশ করতে চায়। যারা ন্যায্য কথা বলার জন্য অবিরাম চেষ্টা করছে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সেই চেষ্টা করছে।

ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, ডেইলি স্টারের চিফ ফটোগ্রাফার আনিসুর রহমান, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ প্রমুখ।

এ ছাড়া মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নয়াদিগন্ত পত্রিকার চিফ ফটোসাংবাদিক নাসিম সিকদার, নিউ নেশনের চিফ ফটোসাংবাদিক মঈন আহমেদ, ইনকিলাবের চিফ ফটোসাংবাদিক ইকবাল হাসান নান্টু, দেশ রূপান্তরের চিফ ফটোসাংবাদিক সাহাদাত পারভেজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।