
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যক্তির পছন্দ-ইচ্ছা অনুসারে সংগঠন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। আর এই সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে খর্ব করা হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের করা আপিল শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আজ সোমবার এ কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ শুনানি গ্রহণ করেন। আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে।
শুনানিতে শিশির মনির বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই সংশোধনীর কোনটা পিক (বাছাই) করছি, কোনটা করছি না, এটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, কী মানদণ্ডে আপনারা পিক করছেন? মানদণ্ডে আসতে হবে। তখন শিশির মনির বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ সংশোধনীর চারটি বিষয় পিক করছে। বাকিগুলো জাতীয় সংসদের ওপর দিয়েছেন।
শিশির মনির আরও বলেন, একটা জুলাই চার্টার হয়েছে। এখানে বড় ধরনের প্রক্রিয়া ও বিষয়গত প্রস্তাব এসেছে। সংবিধান সংশোধন চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে মৌলিক কাঠামো ডকট্রিন ও পদ্ধতিগত—এই দুটি হচ্ছে মানদণ্ড। মানদণ্ড ব্যবহার করে পঞ্চদশ সংশোধনীর কোনটা কোনটা বাদ দেওয়া তথা রাখা সমীচীন হবে না, সে তালিকা আদালতে দাখিল করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। রায়ে গণভোটের বিধানসংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি আপিল হয়। সুজন সম্পাদকসহ চার ব্যক্তি একটি আপিল করেন। নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন একটি এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আরেকটি আপিল করেন। আপিলের ওপর ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৪ ও ৭ ডিসেম্বর ও আজ শুনানি হয়। আদালতে বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তির পক্ষে শুরুতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
চার ব্যক্তির আইনজীবীর বক্তব্য উপস্থাপনের পর মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানিতে অংশ নেন। এরপর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।