Thank you for trying Sticky AMP!!

মাথায় ইট পড়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক দীপু সানা

ইটের টুকরা কোথা থেকে পড়ল, সাড়ে তিন মাসেও জানতে পারল না পুলিশ

রাজধানীর মৌচাক এলাকায় গত ১০ জানুয়ারি ওপর থেকে ইটের টুকরা (কংক্রিটের খণ্ড) মাথায় পড়লে মৃত্যু হয় দীপু সানার। ঘটনার সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এর কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। কোথা থেকে, কীভাবে ইটের টুকরা তাঁর মাথায় এসে পড়ল, সেই উৎস সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ।

খুলনার মেয়ে দীপু সানা (৩৩) বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে অফিসের বাসে করে এসে শান্তিনগরে নামেন তিনি। সেখান থেকে হেঁটে মগবাজারের গাবতলার বাসায় ফিরছিলেন। মৌচাকে উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ওপর থেকে তাঁর মাথায় ইটের টুকরা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলাটি এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

তদন্ত কর্মকর্তারা যা বলেন

গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে দেখা যায়, মালিবাগ-মৌচাক উড়ালসড়ক বরাবর নিচ দিয়ে হাঁটছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা দীপু সানা। একপর্যায়ে ওপর থেকে কংক্রিটের একটি খণ্ড মাথায় পড়লে তিনি লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তাঁকে ঘিরে পথচারীরা ভিড় করেন। দীপুকে অচেতন অবস্থায় কয়েকজনকে একটি রিকশায় তুলতে দেখা যায়। প্রায় কাছাকাছি সময়ের আরেকটি ফুটেজে মালিবাগ-মৌচাক উড়ালসড়ক ধরে এক ব্যক্তিকে মগবাজারের দিকে দৌড়াতে দেখা যায়।

মামলার তদন্তকারী ডিবি পুলিশ বলছে, সিসিটিভিতে দৌড়াতে দেখা ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, মালিবাগ-মগবাজার উড়ালসড়ক থেকে ইটের টুকরাটি দীপু সানার মাথায় পড়েছিল।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক ডিবি কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওপর থেকে ইটের টুকরাটি দীপু সানার মাথায় পড়েছে। কিন্তু কোন স্থান থেকে সেটি পড়েছে, তা ভিডিওতে নেই। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের পাশের ফখরুদ্দীন বিরিয়ানি রেস্টুরেন্টের কর্মীসহ আশপাশের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ ইটের টুকরা কোত্থেকে পড়েছে, সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি।

Also Read: উড়ালসড়ক থেকে পড়া ইটের আঘাতেই মৃত্যু ব্যাংকার সানার

যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি রমনা বিভাগের উপকমিশনার হুমায়ুন কবির আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ইটের টুকরা কোথা থেকে পড়ল বা উড়ালসড়ক ধরে দৌড়ানো ব্যক্তি কে—কোনো কিছুই শনাক্ত করা যায়নি।

দিপু সানা–তরুণ কুমার বিশ্বাস দম্পতির তিন বছর বয়সী একমাত্র ছেলে ঋষিরাজ কথা বলতে পারে না। স্ত্রীর মৃত্যুর পর শিশুটির চিকিৎসার কী হবে এবং ঢাকায় কীভাবে সন্তানকে নিয়ে থাকবেন—তা নিয়ে দিশাহারা বাবা তরুণ কুমার।

তরুণ কুমার ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। যোগযোগ করা হলে আজ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সন্তানকে নিয়ে তিনি এখন খুলনায় গ্রামের বাড়িতে আছেন। এখন হোম অফিস করছেন। ঈদুল ফিতরের পর তাঁকে হয়তো সশরীর অফিস করতে হবে। এ জন্য ঢাকায় ফিরতে হবে।

স্ত্রী দীপু সানার স্মৃতিচারণা করে তরুণ বিশ্বাস বলেন, বাচ্চার দেখভাল থেকে শুরু করে সংসার সামলানোর কাজ করতেন দীপু। সংসারের আর্থিক জোগানও দিতেন তিনি। এখন তাঁর সবকিছুই শেষ হয়ে গেল। বাচ্চার চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দীপুর অনুপস্থিতে শিশুর দেখভাল কীভাবে হবে—তা নিয়ে দিশাহারা তিনি।

তরুণ কুমার বলেন, তাঁর ছেলে ঋষিরাজ কথা বলতে না পারলেও হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে ওঠে। মায়ের জন্যই হয়তো কাঁদছে সে। একের পর এক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুটি।

তরুণ কুমার জানান, তিনি আশা করেছিলেন, পুলিশ দ্রুত ইট পড়ার উৎস বের করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করবে। এত দিনেও পুলিশ কিছুই করতে না পারায় তিনি হতাশ। বরং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপু সানার মৃত্যু নিয়ে তাঁর কাছে জানতে চাচ্ছেন। দীপু সানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ডিবি পুলিশ কিছু জানাতে পারবে, এখনো সেই আশায় আছেন তিনি।

মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশার কথা জানালেন দীপু সানার ছোট চাচা স্বপন কুমার সানা। ঘটনাস্থলের পাশে ফখরুদ্দীন রেস্টুরেন্ট। ওই ভবন থেকে ইটের টুকরা পড়তে পারে। অথচ ওই রেস্তোরাঁমালিকের কিছু হলো না। ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটিত হবে, এমন প্রত্যাশা তাঁদের।

স্বপন কুমার বলেন, দীপু সানার মৃত্যুর পর পথঘাটে চলার নিরাপত্তা কোথায়, বিষয়টি এখন বারবার সামনে আসছে। মাহারা ঋষিরাজের এখন কী হবে, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তায় আছেন।

Also Read: দীপু সানার মৃত্যু: নিরাপদ ও সুরক্ষিত ফুটপাত নিশ্চিত করা প্রশ্নে রুল