চায়ের চাহিদায় বেশ মন্দাভাব চলছে। এর কারণ কী?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: চা পানের পরিমাণ কমছে। কারণ হলো এক. চা তৈরির উপকরণের দাম বাড়তি। খরচ বাড়ায় দুধ বা রং–চায়ের চাহিদা কমেছে। দুই. এখন লিকার চা পানে ঝুঁকছে মানুষ। লিকার চায়ে চা–পাতার ব্যবহার দুধ–চায়ের তুলনায় অর্ধেকের কম। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় বছর দুয়েক ধরে চা খাতে মন্দাভাব চলছে। সব মিলিয়ে চায়ের চাহিদা এখনো চাঙা হয়নি।
চাহিদা কমলে চা–শিল্পে কী প্রভাব পড়বে?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: চাহিদা কমলে নিলামে চা বিক্রি কমে যায়। কারণ, নিলামে ক্রেতারা কতটুকু চা কিনবেন, তা নির্ভর করে চায়ের চাহিদার ওপর। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে অনেক চা অবিক্রীত রয়ে গেছে। এসব চা এখন নতুন নিলামে তোলা হচ্ছে। চাহিদা কমলে দিন শেষে এটা চা–শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চা–শিল্পের সুরক্ষায় ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল গত মৌসুমে। এবার ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর আলোচনা আছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়া ভালো উদ্যোগ। এটা ঠিক, নিলামে দাম কত হবে, তা নির্ভর করে চায়ের চাহিদা, সরবরাহ ও মানের ওপর। মানসম্মত না হওয়ায় গত মৌসুমে সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ প্রতি কেজি ১৬০ টাকায়ও অনেক চা বিক্রি হয়নি। এসব চা–বাগানের মালিকেরা এখন মান বাড়াতে সচেষ্ট হবেন। আবার মান ভালো হওয়া সর্বোচ্চ স্তরের চেয়ে বেশি দামে চা বিক্রি হয়েছে গত মৌসুমে।
ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ টেকসই করতে হলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেমন নিলাম থেকে যাঁরা চা কেনেন, তাঁরা সরকারকে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর পরিশোধ করছেন। তবে যাঁরা চোরাই পথে চা সংগ্রহ করছেন, তাঁদের এই মূল্য সংযোজন কর দিতে হচ্ছে না। অর্থাৎ নিয়ম মেনে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ জন্য যাঁরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন, তাঁদের সুরক্ষা দিতে হবে।
আপনি ইস্পাহানি গ্রুপের চা বিভাগের দায়িত্বে আছেন। কয়েক বছর ধরে ইস্পাহানি গ্রুপ গ্রিন টি বাজারজাত করে আসছে। গ্রিন টির বাজার এখন কেমন?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: চায়ের নিলামে গ্রিন টি পাওয়া যায় না। কারণ, যে কয়েকটি বাগানে গ্রিন টি উৎপাদিত হয়, তারা সেগুলো নিজেরাই বাজারজাত বা রপ্তানি করে থাকে। ফলে ইস্পাহানি উন্নত মানের গ্রিন টি আমদানির মাধ্যমে দেশে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করে আসছে। ছোট হলেও এই চায়ের বাজার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। তবে আমরা বৈধভাবে আমদানি করলেও অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ, বাজারে বিদেশি নামকরা ব্র্যান্ডের চা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এসব গ্রিন টি আমদানিতে অনুমতি নেওয়া হচ্ছে কি না, তার তদারকি দরকার। অথচ আমরা আমদানিতে ৯২ শতাংশ শুল্ক–কর দিচ্ছি। কেজিপ্রতি ছয় ডলার ট্যারিফ ভ্যালুর ওপর এই শুল্ক–কর আদায় করছে কাস্টমস। আমদানি হলেও প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে দেশে মূল্য সংযোজন হচ্ছে। কর্মসংস্থান হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও বিদেশি গ্রিন টির একচেটিয়া বাজার ছিল বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল ও নামকরা কফিশপে। সরকার আমদানির সুযোগ দেওয়ায় এখন সেখানে ইস্পাহানি ব্র্যান্ডের গ্রিন টি জায়গা করে নিচ্ছে। বৈধভাবে যাঁরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে গ্রিন টি আমদানি করে, তাদের জন্য নীতিমালা আরও সহজ করা দরকার।
চায়ের নতুন নিলাম মৌসুম শুরু হয়েছে। কেমন হতে পারে এ মৌসুম?
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান: এবার শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে ফলন কম ছিল। তবে এখন বৃষ্টির কারণে ফলনের ঘাটতি কমে আসছে। শুরুর দিকে নিলামে তেজিভাব থাকে। নতুন মৌসুমেও চা বেচাকেনায় তেজিভাব রয়েছে। চায়ের যে মন্দাভাব আছে, সেটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। আশা করি, আগামীতে চায়ের চাহিদা বাড়বে।
শাহ মঈনুদ্দিন হাসান, চেয়ারম্যান, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি)
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাসুদ মিলাদ