মো. নাজমুল করিম খান
মো. নাজমুল করিম খান

রাস্তা বন্ধ করে গাজীপুরে ঢোকা সেই নাজমুল করিম এবার সাময়িক বরখাস্ত

গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ২ মাস ১০ দিন পর এবার মো. নাজমুল করিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জিএমপির পুলিশ কমিশনার (কর্মস্থল থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রত্যাহৃত) মো. নাজমুল করিম খানকে জনস্বার্থে সরকারি কর্ম থেকে বিরত রাখা আবশ্যক ও সমীচীন; সেহেতু নাজমুল করিম খানকে সরকারি চাকরি আইনের বিধান মোতাবেক সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আদেশে।

নাজমুল করিম খান জিএমপি কমিশনার পদে নিয়োগ পান গত বছরের ১১ নভেম্বর। গত ১ মে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন। এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, গাজীপুরের পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে দায়িত্ব অর্পণ করে ২ সেপ্টেম্বর তাঁকে (নাজমুল করিম) পুলিশ সদর দপ্তর ঢাকায় রিপোর্ট করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

নাজমুল করিম জিএমপি কমিশনার থাকাকালেই জিএমপির আওতাধীন এলাকায় অপরাধ বেড়েছে। এসব এলাকায় একের পর এক ছিনতাই হচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই রাস্তায় চলাচলে আতঙ্ক তৈরি হয়। চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে। অপহরণ ও ধর্ষণ বেড়েছে। খুন হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনেও গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক ওই প্রতিবেদনে শহরটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’ বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জিএমপিতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়েছে। দিনের বেলায় এসব ঘটনা ঘটলেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তাঁরা মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা আদায় করেন।

এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে উঠে আসে, জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম খান প্রতিদিন ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে গাজীপুরে যাওয়ার সময় টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় উড়ালসড়ককে একমুখী করে দেওয়া হয়। এ সময় গাজীপুর থেকে ঢাকামুখী লেন বন্ধ করা হয়। আবার কমিশনার ঢাকায় ফেরার সময় একইভাবে গাজীপুরের ভোগরা এলাকার উড়ালসড়ক একমুখী করে দেওয়া হয়। তখন গাজীপুরমুখী চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় গত ২৩ আগস্ট ‘শিল্পের শহরে সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক, ১৯ জায়গা বেশি বিপজ্জনক’, ২৪ আগস্ট ‘পুলিশ কমিশনার থাকেন ঢাকায়, রাস্তা বন্ধ করে ঢোকেন গাজীপুরে’ শিরোনামে এবং ২৫ আগস্ট ‘২২ বস্তিতে মাদকের আখড়া, ভাগ যায় পুলিশের পকেটেও’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এদিকে প্রভাবশালী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয়ে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিম চৌধুরী নামের এক প্রতারকের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল করিমের সখ্যের তথ্য পাওয়া গেছে। এনায়েত করিমের নিরাপত্তায় নিজের দেহরক্ষীকে (একজন পুলিশ সদস্য) নিয়োজিত করেছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের সময় নাজমুল করিমের দেহরক্ষী এনায়েত করিমের সঙ্গেই ছিলেন। যে গাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সেটি নাজমুল করিমের ছিল। দেহরক্ষীকে এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে নাজমুল করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে নাজমুল করিমকে কী কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো, সেটি উল্লেখ নেই প্রজ্ঞাপনে। প্রজ্ঞাপনে জনস্বার্থে বরখাস্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।