প্রধান উপদেষ্টাকে ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার চিঠি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন আইনপ্রণেতা। এতে তাঁরা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে গতকাল মঙ্গলবার এ চিঠি লেখেন মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য (কংগ্রেসম্যান) গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, বিল হুইজেনগা, সিডনি কমলাগার-ডোভ, জুলি জনসন ও টম আর সুওজ্জি।

কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস প্রতিনিধি পরিষদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য। বিল হুইজেনগা ও সিডনি কমলাগার-ডোভ যথাক্রমে প্রতিনিধি পরিষদের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য। এ চিঠি গতকাল ‘হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির’ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে মার্কিন আইনপ্রণেতারা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংকটকালীন মুহূর্তে একটি অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার জন্য আপনার এগিয়ে আসার ইচ্ছাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

চিঠিতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা লিখেছেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার বেছে নেওয়ার অধিকার রাখে।

কংগ্রেস সদস্যরা লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক সংকটের এ সময়টাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর মধ্য দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে। আর এটা ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে দেশের জনগণের মতামত প্রকাশে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা আর দলনিরপেক্ষতার প্রতি আস্থা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারেও ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন, সরকার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে বা ত্রুটিপূর্ণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবার চালু করে—তবে এসব করা যাবে না।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। সেই সঙ্গে ফেব্রুয়ারির এক তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর অনুমান করেছে, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনের প্রাণ গেছে।

এ পরিস্থিতিতে প্রতিশোধের পথে না হেঁটে এসব ঘটনাসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকৃত জবাবদিহি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আদর্শ (মডেল) হওয়া উচিত বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা লেখেন, ‘সংগঠন করার স্বাধীনতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায় সামষ্টিক নয়; বরং ব্যক্তির—এটাই মৌলিক মানবাধিকার। কাজেই আমাদের উদ্বেগ হলো আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি কিংবা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের ওপর দৃষ্টি না দিয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত এসব নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’

চিঠিতে বাংলাদশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ উল্লেখ করে মার্কিন আইনপ্রণেতারা লিখেছেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আগামী মাসগুলোয় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করতে আমরা আপনার এবং আপনার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’

আপনার সরকার বা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে এ সিদ্ধান্ত (রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত রাখা) পুনর্বিবেচনা করবে বলেও চিঠিতে আশা প্রকাশ করেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার বেছে নেওয়ার অধিকার রাখে।

চিঠিতে বাংলাদশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ উল্লেখ করে মার্কিন আইনপ্রণেতারা লিখেছেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আগামী মাসগুলোয় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করতে আমরা আপনার এবং আপনার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’