
দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সংগঠন, বিভিন্ন জেলার সাংবাদিকদের সংগঠন এবং নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ।
পৃথক বিবৃতিতে এসব ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতি দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংগঠনগুলো হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রেসক্লাব, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, নাটোরের সাংবাদিকেরা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সিলেট শাখা, সিপিবির নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা শাখা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সিলেট
সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (এসএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেন, ‘গণমাধ্যমের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়েও সংবাদমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছিল।’
এদিকে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আবদুর রহমান গতকাল রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টারে হামলা এবং সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘দেশের সংকটময় মুহূর্তকে কাজে লাগানোর জন্য যারা অপেক্ষা করে, এরা এই দেশের শত্রু। তারা অপেক্ষা করে সংকটের। দুঃখভারাক্রান্ত মুহূর্তকে এরা ধ্বংসাত্মক কাজে রূপান্তর করল। আমি এই সন্ত্রাসের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ ছাড়া সিলেটে প্রথম আলোর কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শ মানুষ। প্রথম আলোর সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিবেদক ও আলোকচিত্রীকে মুঠোফোনে কল করে এ ঘটনার নিন্দা জানান তাঁরা। নিন্দা জ্ঞাপনকারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক আবু জাফর, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত হয়ে সিলেট-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ফয়সল আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর ও আহমেদ নূর, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল আজাদ ও বর্তমান সভাপতি মঈন উদ্দিন, দৈনিক শ্যামল সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবদুল মুকিত, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ইমজা) সাবেক সভাপতি মঈনুল হক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলজার আহমেদ, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি নাজমুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক আশকার আমিন, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম সাইফুর রহমান তালুকদার ও সহসভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম মিশু প্রমুখ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসাইন, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আবদুর রহমান রিপন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক শামসুল বাসিত, দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন, ছড়াকার শাহাদত বখত, আইনজীবী-কবি আবদুল মুকিত, অ্যাসিড সন্ত্রাস নির্মূল কমিটির সমন্বয়ক জুরেজ আবদুল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলোর অন্বেষণের সভাপতি সাজন আহমদ সাজু প্রমুখ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় আজ দুপুরে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সিলেট শাখা। সমাবেশ থেকে শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীরকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ময়মনসিংহের ভালুকায় নিপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিও করা হয়।
কুষ্টিয়া
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার–এর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং নিউ এজ–এর সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রেসক্লাব। শনিবার দুপুরে সংগঠনটির এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও ব্যথিত হয়েছে ইবি প্রেসক্লাব। তবে এই শোকাবহ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার–এর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। সেই সঙ্গে নিউ এজ-এর সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার মতো নিন্দনীয় ঘটনার জন্ম দেয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের হামলা এবং একজন সম্পাদককে লাঞ্ছিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি গণতান্ত্রিক চেতনা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা একটি পরিকল্পিত অপচেষ্টা। এর উদ্দেশ্য স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মতপ্রকাশকে দমন করা। এর মাধ্যমে সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীতেও এ ধরনের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কখনোই সফল হয়নি। ইবি প্রেসক্লাব এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে।
একই বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ইবিসাস) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইবিসাস বলছে, গণমাধ্যমের অফিসে হামলা এবং দেশের একজন প্রবীণ ও দায়িত্বশীল সম্পাদককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকারের ওপর সরাসরি ও সুস্পষ্ট আঘাত। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের উদ্দেশ্যে এ ধরনের হামলা প্রমাণ করে যে হামলাকারীরা গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মৌলিক চেতনায় বিশ্বাসী নয়।
ইবিসাস মনে করে, সংবাদপত্রের কার্যালয় কোনোভাবেই হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। সাংবাদিক ও সম্পাদকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের একটি মৌলিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। ভিন্নমত দমন, সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা বন্ধ এবং ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশ্যে মিডিয়া হাউস ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা একটি অশনিসংকেত, যা পুরো সমাজ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়।
খুলনা
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে খুলনা রিপোটার্স ইউনিটি। শনিবার তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর এই হামলা শুধু গণমাধ্যমের ওপর নয়, এটা সমাজের ওপর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। সর্বোপরি বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ। গভীর রাতের ওই হামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্বহীনতারও স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার–এর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদককে হেনস্তার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। শনিবার বিকেলে প্রেসক্লাবের নেতারা বলেন, একটি স্বাধীন দেশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং একজন প্রবীণ সম্পাদককে হেনস্তার ঘটনা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবমূল্যায়নের শামিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পরও যদি গণমাধ্যমের ওপর এমন সহিংস আক্রমণ সংঘটিত হয় এবং সম্পাদককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়, তাহলে তা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে রুদ্ধ করে। এ ধরনের হামলা কেবল একটি গোষ্ঠীর অসহিষ্ণু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই নয়, বরং ফ্যাসিবাদী মানসিকতার পুনরুত্থানের স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সোহাগ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আলজাবের আহমেদ এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এতে বলা হয়, যারা গণতন্ত্রের কথা বলে সংবাদমাধ্যমে হামলা, অগ্নিসংযোগ কিংবা সম্পাদকদের ওপর শারীরিক আক্রমণ চালায়, তারা প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী নয়। ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছে।
বিবৃতিতে ওই দুই নেতা বলেন, ‘প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর ন্যক্কারজনক আচরণ স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
গতকাল রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আলকামা রমিন ও সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম। এতে তাঁরা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করে কেউ গণতন্ত্রের ধারক হতে পারে না। সাংবাদিক সমাজ ভয়ভীতির কাছে কখনো মাথা নত করবে না এবং সত্য প্রকাশে নীরব থাকবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিক ও সম্পাদকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের একটি মৌলিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। ভিন্নমত দমন, সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা বন্ধ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা একটি অশনিসংকেত, যা পুরো সমাজ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গভীর অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জিহাদুজ্জামান জিসান ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেন, এভাবে হামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করা এবং স্বাধীন মতপ্রকাশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব গভীরভাবে শোকাহত। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদল স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী গণমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা ও একজন প্রবীণ সম্পাদককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে, যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকারের ওপর সরাসরি ও সুস্পষ্ট আঘাত।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) সভাপতি সাঈদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মুরাদুল মুস্তাকীম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের অফিসে অগ্নিসংযোগ এবং একজন প্রবীণ ও নির্মোহ সম্পাদককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর নগ্ন হামলা। আমরা লক্ষ করছি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে একদল স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এটি শুধু কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা নয়, এটি মুক্তচিন্তা ও জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে রুদ্ধ করার হীন ষড়যন্ত্র।’
কুবিসাস নেতারা অবিলম্বে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও সম্পাদক নূরুল কবিরের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারের প্রতি কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা
আজ দুপুরে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচীতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং রাকসু ভিপির বিতর্কিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ও নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
রাকসু ভিপির বক্তব্য শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়ে বিবৃতিতে বলেন, রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ সমাবেশে তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ এই সকল সুশীল পত্রিকা বন্ধ করতে হবে। এই কর্মসূচিতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কোনো প্রতিনিধি থাকলে আপনারা বের হয়ে যান।’ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, দায়িত্বশীল জায়গা থেকে রাকসু ভিপির এ বক্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়, যা চলমান উগ্রতাকে আরও উসকে দেয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁর এ বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছেন এবং অবিলম্বে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।
বরিশাল
প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানট কার্যালয়ে হামলা এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ)। এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি আনিসুর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে এ ধরনের হামলা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতেই একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।
সংগঠনটির নেতারা অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
নাটোর
শনিবার দুপুরে নাটোর শহরের কানাইখালি এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন জেলা ও উপজেলাগুলোতে কর্মরত সাংবাদিকেরা। নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহিদুল হক সরকারের সভাপতিত্বে এবং ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানান।
ইউনিক প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহম্মেদ সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পূর্বঘোষণা দিয়ে দুটি পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা চালানো হলেও সরকার কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি হামলার পর সরকারপ্রধানের ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যমের পাশে থাকার ঘোষণাকে ‘তামাশা’ হিসেবে অভিহিত করেন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, রেজাউল করিম, দেবাশীষ সরকার, হালিম খান, নাজমুল হাসান, মাহবুব হোসেন, কামরুল ইসলাম, গোলাম রাব্বানী, সুফি সান্টু, মোস্তাফিজুর রহমান, আল মামুন, পরিতোষ অধিকারী, খান মামুন, আবদুল মজিদ, মাসুম রেজা প্রমুখ।
নেত্রকোনা
আজ দুপুরে নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের প্রেসক্লাব মোড়ে সিপিবি উপজেলা শাখার আয়োজনে শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার, প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে।
উপজেলা সিপিবির সভাপতি আলকাছ উদ্দিন মীরের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ, উপজেলা উদীচীর সভাপতি শামছুল আলম খান, উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, যুব ইউনিয়নের সভাপতি রমজান আলী, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জহির রায়হান প্রমুখ।
নীলফামারী
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এ হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং প্রবীণ সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর হামলা ও হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নীলফামারী জেলার সদস্যসচিব কামরুল ইসলাম (দর্পণ)। তিনি নীলফামারী-২ সদর আসনের এনসিপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীও।
এক বিবৃতিতে ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, উদীচী ও প্রবীণ সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানান কামরুল ইসলাম।