কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায়
কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায়

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে হামলা

জড়িতদের বিচার দাবি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি যোগাযোগ শিক্ষক-সাংবাদিকদের

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষক এবং গবেষকদের সংগঠন বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলার্স ইন নর্থ আমেরিকা (বিসিএসএনএ) প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান কার্যালয়ে সহিংস হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে।

গতকাল শুক্রবার এক লিখিত প্রতিবাদে বিসিএসএনএ এই সন্ত্রাসী হামলাকে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর গুরুতর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে এ ঘটনার স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের যোগাযোগ বিভাগে কর্মরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফাহমিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে ১৮ ডিসেম্বর একটি কাল রাত। এই হামলা বাংলাদেশের মানুষের মত প্রকাশের অধিকারের ওপর হামলা, গণতন্ত্রের ওপর হামলা।

বিসিএসএনএ-এর এক লিখিত বিবৃতিতে জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শত শত লোকের একটি দল কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা চালায়। তারা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং সাংবাদিক-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখায়। এরপর তারা দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে গিয়ে একই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এতে রাতের শিফটের কর্মীরা ছাদে আটকা পড়েন এবং জীবনের ঝুঁকিতে পড়েন। বৃহস্পতিবার রাতে হামলার কারণে উভয় পত্রিকা শুক্রবারের প্রকাশনা বাতিল করতে বাধ্য হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৩০ জন গণযোগাযোগবিষয়ক বাংলাদেশি শিক্ষক ও গবেষক স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এসব হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বরং সমন্বিত আক্রমণ, যার উদ্দেশ্য ভয় ও ধ্বংসের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে স্তব্ধ করা। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও সম্পাদকীয় স্বাধীনতায় অবদান রেখে আসছে। প্রতিষ্ঠান দুটির ওপর হামলা নাগরিকদের জানার অধিকারের ওপর আঘাত।

সংগঠনের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়মতো সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থতা ও জরুরি সেবায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, সরকারের নিজস্ব মিডিয়া রিফর্ম কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া দুঃখজনক। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতি সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান।

লিখিত বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন—বার্ড কলেজের ড. ফাহমিদুল হক, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ড. আনিস রহমান, ইস্টার্ন নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটির ড. মো. খাদিমুল ইসলাম প্রমুখ।

এ ছাড়া আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব এ ঘটনায় লিখিতভাবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সংগঠনটি মনে করে, পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর এই ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবিরের ওপর হামলা একটি বিশেষ মহলের সুপরিকল্পিত এজেন্ডা।

প্রতিবাদপত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারের প্রতি দাবি জানান যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী সাংবাদিকেরা।