Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশ্নের ধরন ঠিক না হওয়ায় শিক্ষকেরা অস্পষ্টতায়

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক

আগামী বছর শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নপদ্ধতি বদলাবে। ফলে প্রশ্নের ধরনও বদলে যাবে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র আড়াই মাস বাকি। কিন্তু এই বদলে যাওয়া প্রশ্নের ধরন কী হবে, তা এখনো ঠিক করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিষয়টি নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা অস্পষ্টতার মধ্যে আছেন। আগামী মাসের শেষ নাগাদ বার্ষিক পরীক্ষা কেমন প্রশ্নে নেবেন, সেটি তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

অবশ্য নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা দাবি করছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রশ্নের ধরন চলতি মাসেই ঠিক করা হবে। নভেম্বর নাগাদ পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম চলা বিদ্যালয়গুলোতে তা তাঁরা পাঠাতে পারবেন। আর ডিসেম্বরে অন্য শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন।

Also Read: নতুন শিক্ষা কারিকুলাম আগামী বছর চালু হবে: শিক্ষামন্ত্রী

তবে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম চলা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা বলছেন, প্রশ্নের ধরন এখনো ঠিক না হওয়ায় তাঁরা অস্পষ্টতার মধ্যে আছেন। আবার শিক্ষার্থীরাও অনেকটা অন্ধকারে আছে। পরীক্ষার একেবারে আগমুহূর্তে প্রশ্নের ধরন জানালে প্রস্তুতির সময় থাকবে না। এতে শিক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়তে পারে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগামী নভেম্বরের শেষ নাগাদ বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে।

দেশের মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এ কার্যক্রম শুরু হয়।

কথা থাকলেও প্রাথমিকে পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম এ বছর শুরু করা যায়নি। সবশেষ তথ্য হলো, তারা পরীক্ষামূলক ছাড়াই আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রম সরাসরি বাস্তবায়ন শুরু করবে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, আগামী বছর চালুর পর যদি কোনো ভুলত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে তখন তার আলোকে পরিমার্জন করা হবে।

Also Read: নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আসল কাজেই গতি নেই

এনসিটিবির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন এই শিক্ষাক্রম আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরোপুরি চালু হবে।

২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে চালুর মধ্যে দিয়ে পুরোপুরিভাবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে বড় রকমের পরিবর্তন আসবে। প্রথাগত পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে।

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা হবে না। এই পর্যায়ে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে।

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে প্রথাগত পরীক্ষার ভিত্তিতে।

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে।

নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে।

চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ে পুরো মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন।

তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নে বেশি জোর দেওয়া হবে। এই স্তরে ৭০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে। বাকি ৩০ শতাংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন।

Also Read: শিক্ষাক্রম ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করছি: দীপু মনি

বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা হয়। সৃজনশীল পদ্ধতিতে একটি প্রশ্নকে চার ভাগে ভাগ করে উত্তর জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে বিদ্যমান কাঠামোয় প্রশ্নপত্র হবে না বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

তাহলে ঠিক কেমন প্রশ্নে মূল্যায়ন হবে, তার কোনো উত্তর এখন পর্যন্ত জানাতে পারছে না এনসিটিবি।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) মো. মশিউজ্জামান দিন কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু কাজ হয়েছে, হচ্ছে। আরও কিছু সময় নিয়ে এগুলো প্রকাশ করা হবে। নভেম্বর মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে চলা বিদ্যালয়গুলোতে প্রশ্নের ধরন কেমন হবে, তা যাবে। যাতে বার্ষিক পরীক্ষায় সেভাবেই মূল্যায়ন হয়। ডিসেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষকদের পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ হবে। এই পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণের মধ্যে এক দিন বরাদ্দ থাকবে শুধু মূল্যায়ন নিয়ে।’

Also Read: সমন্বয়হীনতায় ঠিক পথে নেই নতুন শিক্ষাক্রম

শিক্ষাক্রম প্রণয়নে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্নপত্রের ধরন, অর্থাৎ মূল্যায়নের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে কর্মশালা হচ্ছে। অন্তত আরও একটি কর্মশালার পর বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। তাদের আশা, চলতি মাসের ২০ তারিখের পর তা চূড়ান্ত হতে পারে। প্রশ্নের ধরন নির্ভর করবে বিষয়ের প্রকৃতি, যোগ্যতা অর্জনের চাহিদা ও অভিজ্ঞতার ধরনের ওপর। প্রশ্নগুলো হবে সমস্যা সমাধানভিত্তিক।

পরীক্ষামূলকভাবে চলা ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন তাঁরা করছেন। কিন্তু সামষ্টিক মূল্যায়ন (পরীক্ষার ভিত্তিতে) কীভাবে হবে, সে বিষয়ে তাঁরা এখন পরিষ্কার নন।