‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি–প্রকৃতি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। শনিবার, রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) সেমিনারকক্ষে
‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি–প্রকৃতি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। শনিবার, রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) সেমিনারকক্ষে

ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় আইন হচ্ছে, জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠনের চিন্তা: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় নতুন ‘পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন আইন’ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে তথ্যের অপব্যবহার ঠেকাতে ‘ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি’ গঠনের কথাও ভাবা হচ্ছে।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) সেমিনারকক্ষে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি–প্রকৃতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ কথা বলেন। সেমিনারটি আয়োজন করে পিআইবি।

সেমিনারে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, সরকার এমন একটি আইনি কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য—যেমন এনআইডি, মুঠোফোন নম্বর, লোকেশন, বায়োমেট্রিক, ছবি, ভিডিও, যোগাযোগের ইতিহাস—এসব স্পষ্ট শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে পড়বে। এসব তথ্যকে ‘রেস্ট্রিক্টেড, কনফিডেনশিয়াল, প্রাইভেট ও পাবলিক’ এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, রেস্ট্রিক্টেড তথ্য, যেমন জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক বা পররাষ্ট্রসংক্রান্ত, সেগুলো দেশের বাইরে সংরক্ষণ একেবারেই নিষিদ্ধ থাকবে। কনফিডেনশিয়াল তথ্য, যেমন হেলথ রেকর্ডস বা ফিন্যান্সিয়াল ডেটা, ব্যবহার করা যাবে নির্ধারিত শর্তে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

বিদেশি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য দেশের বাইরে নিতে না পারে, সে জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আনা হচ্ছে বলেও সেমিনারে জানান ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, ‘নতুন আইনের পর যদি কেউ ডেটা প্রক্রিয়া করতে চায়, তাহলে তাঁকে বাংলাদেশেই ডেটা স্টোরেজ অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’

ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের প্রয়োগ ও তদারকির জন্য সরকার একটি ‘ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি’ গঠনের চিন্তা করছে বলে জানান ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান, কী ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করবে, সে বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হবে এর কাজ। কোন ধরনের সফটওয়্যার বা ভেন্ডর ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ধারণ করা; সরকারের মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো যেন নিরাপদভাবে তথ্য প্রক্রিয়া করে, তা নিশ্চিত করা এবং তথ্য ফাঁস বা অবৈধ স্থানান্তর রোধে নজরদারি চালাবে এই কর্তৃপক্ষ।

দেশে বহু প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের কোনো সুরক্ষিত ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানে অননুমোদিত ভেন্ডর ও কনসালটেন্টের মাধ্যমে এসব তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে ডার্ক ওয়েবে।’

ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের এনআইডি, ফোন নম্বর, ঠিকানা ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এসব তথ্য দিয়ে ফেক এনআইডি তৈরি করে জালিয়াতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এই ঝুঁকি আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।