বড় পর্দায় ব্রাজিলের জয় উপভোগ

নগরের চাঁন্দগাও বি-ব্লক মাঠে ব্রাজিল বনাম দক্ষিণ কোরিয়ার খেলা বড় পর্দায় উপভোগ করছেন দর্শকেরা
ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয়ার্ধের নির্ধারিত সময় শেষ। অতিরিক্ত সময়ে দুই মিনিটের খেলা চলছে। দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলের জয় তখন প্রায় নিশ্চিত। শুধু অপেক্ষা রেফারির শেষ বাঁশির। শেষ বাঁশি বাজতেই ভুভুজেলা আর হইচইয়ে মুখর হয়ে ওঠে চাঁন্দগাও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের মাঠ। বড় পর্দায় প্রায় চার শ মানুষের ‘ব্রাজিল ব্রাজিল’ চিৎকারে তখন মনে হচ্ছিল, এ যেন কাতারের ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত একটায় রাউন্ড অব সিক্সটিনের ষষ্ঠ ম্যাচে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়া। সারা বিশ্বের মতো দূরদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ খেলা উপভোগ করেন। প্রজেক্টর ও ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে খেলা দেখেন চট্টগ্রামের লাখো দর্শক। নগরের চাঁন্দগাও বি-ব্লক মাঠ, কল্পলোক আবাসিক, সুন্নিয়া মাদ্রাসা মাঠ এবং হালিশহর বিডিআর মাঠে ছিল বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজন। ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রিয় দলের ম্যাচ উপভোগ করতে খেলা শুরুর দেড়-দুই ঘণ্টা আগে থেকেই সমর্থকেরা ভিড় করতে শুরু করেন মাঠগুলোতে। তাঁদের প্রায় সবার গায়ে হলুদ জার্সি। কেউ হাতে ওড়াচ্ছেন পতাকা আবার কেউ বা এঁকেছেন মুখে। ভুভুজেলা আর বাঁশি নিয়ে এসেছেন কেউ কেউ।

নগরীর চাঁন্দগাও বি-ব্লক মাঠে খেলা দেখতে আসা ব্রাজিল সমর্থক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, সবার সঙ্গে খেলা দেখার আনন্দ আলাদা। বাড়তি উত্তেজনা থাকে। মাঠে বসে সরাসরি খেলা দেখার অনুভূতি হয়।

ঠান্ডা মাথায় প্রথম গোলটি করছেন ভিনিসিয়ুস।

খেলা শুরুর সাত মিনিটেই দক্ষিণ কোরিয়ার জালে বল পাঠান ব্রাজিলের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তাতে অ্যাসিস্ট করেন নেইমার। খেলাজুড়ে নেইমারের পায়ে বল এলেই উন্মাদনায় ভাসছিলেন সমর্থকেরা। সম্প্রতি চোট থেকে ফিরে আসা নেইমারই যেন সমর্থকদের মূল আকর্ষণের বিষয়। এ ছাড়া রিচার্লিসন কিংবা রাফিনিওর জন্যও একইভাবে সমর্থন জানাচ্ছিলেন দর্শকেরা।

নগরের কল্পলোক আবাসিক, সুন্নিয়া মাদ্রাসা মাঠ ও হালিশহর বিডিআর মাঠেও একই চিত্র দেখা যায়। শুধু বড় মাঠ নয়, নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ও এলাকায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছিল ম্যাচটি। জয়ের পর মাঠ থেকে আনন্দমিছিল বের করেন ব্রাজিল–সমর্থকেরা। শীতের রাতে এমন জয় যেন সমর্থকদের মনে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছে।

ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা একের পর এক গোল করার পর সমর্থকদের উল্লাস

কল্পলোক থেকে আসা আনন্দমিছিলে ছিলেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, চার বছর পর এমন উন্মাদনা আসে। আর সবার সঙ্গে এই আনন্দ দিগুণ হয়ে যায়। একই সঙ্গে চার-পাঁচ শ মানুষ খেলা দেখলে মনে হয় স্টেডিয়ামেরই একটা অংশ।

বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দর্শক থাকলে বিশ্বকাপের সব ম্যাচই দেখানো হয়। বিশেষ করে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ম্যাচের অন্য রকম উন্মাদনা থাকে। প্রিয় দলের প্রতি সমর্থকদের চাওয়া–পাওয়া অনেক বেশি। গোল করলে সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েন। আবার গোল মিস করলে মাথায় হাত দিয়ে দুশ্চিন্তা করেন।

বাংলাদেশ থেকে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরে কাতারে বসেছে এবারের বিশ্বকাপ আসর। কিন্তু উন্মাদনা, উল্লাস ও আবেগে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের সমর্থকেরা।