
টানা ষষ্ঠ দিনের মতো বন্ধ আছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। আজ সোমবারও হাসপাতালে সেবা দিতে কোনো চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী আসেননি।
এ অবস্থায় ক্ষোভ জানিয়ে মো. কাউসার আহাম্মেদ নামের চিকিৎসাধীন একজন রোগী বলেন, ‘সরকারের বোঝা উচিত ছিল, এই হাসপাতালে গরিব রোগীরা আসেন। অস্ত্রোপচার পর্যন্ত আসতে তাঁদের কয়েক জোড়া জুতা ক্ষয় হয়ে যায়। তবু মানুষ আসে। তাঁদের যদি সামর্থ্য থাকত, তাহলে তাঁরা এখানে আর আসতেন না।’
চিকিৎসাধীন রোগীরা জানান, ভর্তি থাকা রোগীদের আশপাশের কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরা প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু আশপাশের কোন হাসপাতালের কথা বলেছে সরকার? সেটা কি উল্লেখ করা হয়েছে? আশপাশে চোখের কী কোনো হাসপাতাল আছে?’
গত বুধবার চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারির পর থেকে এমন অচলাবস্থা চলছে। তবে আজ বেলা ১১টার দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত প্রতিনিধিদল হাসপাতালে এসেছে। প্রতিনিধিদল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলমকে নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠকটি চলছিল।
আজও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগীরা এসে ফিরে গেছেন। তাঁদের কেউ নতুন রোগী। কেউবা আগে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, এখন আবার চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন। আবার অনেকের অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল আজ।
ডেমরা থেকে আসা গোপাল দাসের সঙ্গে কথা হলে জানান, তিনি গত চার মাস আগে চিকিৎসা করাতে এলে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে আজ অস্ত্রোপচারের তারিখ নির্ধারণ করে দেন, কিন্তু এখানে এসে দেখতে পান হাসপাতাল বন্ধ।
গোপাল দাস আরও বলেন, ‘আমার চোখের অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল আজ। কিন্তু মনে হচ্ছে আবার ফেরত যেতে হবে। কবে আবার তারিখ পাব, সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, বর্তমানে এখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগী আছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনো হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসা মাঝপথে থাকায় তাঁরা কোথাও যেতে পারছেন না।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা আরও জানান, বুধবার সংঘর্ষের পর ভর্তি থাকা সাধারণ রোগীর সংখ্যা ২৫ জনের মতো হলেও ধীরে ধীরে অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সোমবার পর্যন্ত তাঁদের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫–এ দেখা যায়।
চিকিৎসাধীন ‘জুলাই আহত ব্যক্তি’রা গত মঙ্গলবার উন্নত চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দাবিতে হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন। এ সময় বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি ছুটিতে আছেন।
চলমান সংকটের বিষয়ে হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকট নিরসনে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। মন্ত্রণালয়ের একটি দল কাজ করছে। আমরাও সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। যাঁরা চিকিৎসার মাঝপথে আছেন, তাঁদের কাছের কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।’