
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বিজয় মানেই সব সময় যুদ্ধ বা সংঘাত নয়; কখনো কখনো বিজয় আসে শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের মাধ্যমে, নিজের শিকড়ের কাছে ফিরে আসার আনন্দে। ২০ ডিসেম্বর, চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাওয়ের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৯৯ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৪৪২ বছরের পর্তুগিজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ম্যাকাও তার মাতৃভূমি চীনের কোলে ফিরে আসে। এই দিনটি ম্যাকাওতে ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’ বা সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের দিন হিসেবে পালিত হয়।
ম্যাকাও ছিল এশিয়ায় ইউরোপীয়দের প্রথম ও সর্বশেষ কলোনি। ১৫৫৭ সালে পর্তুগিজরা এখানে ঘাঁটি গেড়েছিল। শত শত বছর ধরে এটি ছিল পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতির এক অদ্ভুত মিলনমেলা। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষে বিশ্বজুড়ে যখন উপনিবেশবাদের দিন শেষ হয়ে আসছিল, তখন চীন ও পর্তুগাল শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এই হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ম্যাকাও কালচারাল সেন্টারে এক ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঠিক রাত ১২টায় পর্তুগালের পতাকা নামিয়ে চীনের লাল পতাকা এবং ম্যাকাওয়ের সবুজ পদ্মফুলের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
ম্যাকাওয়ের এই বিজয় ছিল কূটনীতির বিজয়। ‘এক দেশ, দুই নীতি’ ব্যবস্থার আওতায় ম্যাকাও তার নিজস্ব আইনি ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বজায় রাখার অধিকার পায়। আজকের দিনে ম্যাকাও সেজে ওঠে উৎসবের রঙে। ড্রাগন নাচ, আতশবাজি আর লোটাস স্কোয়ারে ‘গোল্ডেন লোটাস’ মূর্তির সামনে সমবেত হয় হাজারো মানুষ।
বাংলাদেশের বিজয়ের মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় আত্মপরিচয়ের কথা। ম্যাকাওয়ের ২০ ডিসেম্বরের এই দিনটিও সেই একই বার্তা দেয়—দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর নিজের সংস্কৃতি আর জাতির মূল স্রোতে ফিরে আসার চেয়ে বড় শান্তি আর কিছুতে নেই। এটি এমন এক বিজয়, যেখানে কোনো রক্ত ঝরেনি, কিন্তু জাতীয় স্বভিমান ফিরে এসেছে পূর্ণ মর্যাদায়।