অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আবুল হায়াত
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আবুল হায়াত

ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় শক্তি পরিবারের ইতিবাচক মনোভাব

দুরারোগ্য অসুস্থতায় রোগীর সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর মানসিক শক্তি। নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখার চেষ্টা থেকে এ শক্তি আসে। সেটি সম্ভব হয় তাঁর পরিবার ও আত্মীয়দের ইতিবাচক মনোভাব থেকে। প্রত্যেক মানুষেরই সমাজের প্রতি দায় থেকে সেবামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।

সেপ্টেম্বর প্রোস্টেট ক্যানসার সচেতনতার মাস উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সেন্টার ফর ক্যানসার কেয়ার ফাউন্ডেশন (সিসিসিএফ) ‘রবিপথ’ থেকে জীবনপথ: প্রোস্টেট ক্যানসার জয়ের গল্প শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ক্যানসারে আক্রান্ত নাট্যাভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘ব্যস্ত জীবনে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং নিজের সমস্যার কথা বলা নিয়ে অনেক সংশয় থাকে। আমারও ছিল। এটা ঠিক নয়।’ তিনি বলেন, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা। নেতিবাচক ভাবনা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখা।

একজন ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের জন্য কেয়ারগিভারদের যত্ন কতটা জরুরি, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কঠিন সময়ে মানসিক শক্তি জোগানোর কৃতিত্ব তাঁর স্ত্রী শিরিন হায়াতের। তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনেরা মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন।

এই বরেণ্য অভিনেতা বলেন, বেঁচে থাকতে হলে আনন্দে থাকতে হবে। কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়। যে যত কাজ করবে, তার জীবন তত সুন্দর।

আবুল হায়াত প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন দেশেই। ২০২১ সাল থেকে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

সংস্কৃতিজন আফজাল হোসেন বলেন, এ রোগ অতি মারাত্মক। তবে তার চেয়েও বেশি মারাত্মক রোগ হচ্ছে এখন মানুষের সঙ্গে মানুষের বিচ্ছিন্নতা। আবুল হায়াতের লেখা ‘রবিপথ’ বই সম্পর্কে তিনি বলেন, এই বই একটা সময়। সেই সময়কে উপলব্ধি করতে পারলে জীবনের বোধ অন্য রকম হবে।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের একাংশ

বইটি থেকে আবুল হায়াতের বাবার অবসরে যাওয়া অংশবিশেষ পাঠ করে আফজাল হোসেন বলেন, কেউ অবসরে যাওয়া মানে তিনি বাতিল হয়ে গেছেন, বিষয়টা এমন নয়। সমাজের তখন দায়িত্ব তাঁকে কাছে টেনে নেওয়া, তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ, সেই উপলব্ধিটা তাঁর মধ্যে তৈরি করে দেওয়া। আফজাল হোসেন বলেন, ‘আসুন আমরা মানুষটি থাকতে তাকে ভালোবাসি। শুধু চলে যাওয়ার পর নয়।’

জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ বলেন, ‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা যত মানুষের অবদান গ্রহণ করি, সে ঋণ একজীবনে কেউ শোধ করতে পারে না।’ তিনি ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের সেবার জন্য ফান্ড সংগ্রহ করার বিভিন্ন ঘটনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। শুধু ক্যানসার নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে দেহ দান থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্যও সবার অংশগ্রহণ কতটা জরুরি, সেসব কথা বলে তিনি প্রয়াত সন্‌জীদা খাতুনের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। জুয়েল আইচ মানুষের বিভিন্ন ট্যাবু, কুসংস্কার ভেঙে মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ক্যানসারবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অসীম কুমার সেনগুপ্ত বলেন, ‘ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর মানসিক শক্তি আসে পরিবার থেকে। এ জন্য তাঁর চারপাশে ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ থাকা প্রয়োজন। প্রোস্টেট ক্যানসারের একটি ভালো দিক হলো, সব সময় কেমোথেরাপি লাগে না। এটাকে আমরা প্রথমেই নিরাময়যোগ্য বলে মনে করি।’

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক অধ্যাপক নাসরীন চৌধুরী প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুস্তাকিম আইয়ুব। ক্যানসার আক্রান্তদের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সিসিসিএফের প্রেসিডেন্ট রোকশানা আফরোজ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

সিসিসিএফের কার্যক্রম ও পরিচিতি তুলে ধরেন চিকিৎসক আবু জামিল ফয়সাল। তিনি জানান, ক্যানসার সারভাইভাররা মিলে ২০২৩ সালে শুরু করেছেন এই সংগঠন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিসিসিএফের সাধারণ সম্পাদক জাহান ই গুলশান। তিনি নিজেও ক্যানসার সারভাইভার। তিনি বলেন, এই আয়োজনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সবার সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও ক্যানসারের মতো একটি ভয়াবহ রোগের মুখে দাঁড়িয়ে মানুষের সাহসের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার গল্প শোনা।

অনুষ্ঠান শুরু হয় শিল্পী সৌরেন্দ্র বড়ালের কণ্ঠে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ এবং ‘সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান’ সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।