মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমবাজার শুরু থেকেই অদক্ষ শ্রমিকনির্ভর। তবে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের মুখে অদক্ষ শ্রমের চাহিদা দ্রুত কমে আসছে। এখন পণ্য ওঠানো-নামানো (লোডিং-আনলোডিং) বা নির্মাণ অবকাঠামো খাতে কাজ করতে হলেও কিছুটা দক্ষতা লাগছে। মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সেই দক্ষতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আর দক্ষ কর্মী পাঠানোর চেষ্টা করছি জাপান, কোরিয়া ও ইউরোপে।
ঠিকমতো এগোতে পারলে জাপানে আগামী পাঁচ বছরে লাখের বেশি শ্রমিক পাঠানো যাবে। আমাদের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, শ্রমবাজার অনুসন্ধানের জন্য সরকারিভাবে মার্কেট রিসার্চ (শ্রমবাজার নিয়ে গবেষণা) করা হয় না। বিদেশে আমাদের মিশনগুলোও এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করে না। আমরা এগুলো কিছুটা উন্নত করেছি। পরের সরকারের জন্য করণীয় হিসেবে একটা দলিলও রেখে যাব। আশা করি, তিন বছরের মধ্যে নতুন নতুন দেশে দক্ষ বা অল্প দক্ষ, মৌসুমি ও স্থায়ী সব ধরনের কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার চালু করতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর অগ্রগতি হয়েছে। মালয়েশিয়ায় মাসখানেকের মধ্যে কর্মী পাঠানো শুরু হবে। আরব আমিরাতের বিষয়টা একটু জটিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রবাসী যেসব ভাই সেখানে অংশ নিয়েছেন, আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আরব আমিরাতের কাছে তাঁরা আইন ভঙ্গকারী। এর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব এখনো আছে সেখানে। ওমানের মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর তারা অনিয়মিত শ্রমিকদের বৈধ করছে। আশা করি, আমাদের সরকারের মেয়াদকালেই ওমানে নতুন কর্মী নিয়োগ সম্ভব হবে।
অভিবাসন খাতে শৃঙ্খলা এবং অভিবাসীদের অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার ছিল। বিশেষ করে বিমানবন্দরে প্রবাসীদের দুরবস্থা দেখলে খুব খারাপ লাগত। তাঁদের জন্য প্রবাসী লাউঞ্জ, সার্বক্ষণিক সহায়তাকারী, রাতে অবস্থানের জায়গা সৃষ্টিসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রবাসীদের মালিকানায় একটা হাসপাতাল করার জন্য কাজ করছি, জানি না কত দূর করতে পারব। অল্প হলেও কিছু কাজ করেছি; শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, শ্রমিকের ভোগান্তি হ্রাস ও সুবিধা বৃদ্ধিতে। পরের সরকার এগুলো অব্যাহত রাখবে আশা করি।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল: উপদেষ্টা, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়