ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

নির্বাচনের জনসংযোগ যেন অর্থ ও পেশিশক্তি প্রদর্শনের পুরোনো চর্চায় পর্যবসিত না হয়: টিআইবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জনসংযোগ কার্যক্রম যেন কোনোভাবেই অর্থ ও পেশিশক্তি প্রদর্শনের পুরোনো চর্চায় পর্যবসিত না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদস্যরা।

সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সভায় টিআইবির সদস্যরা এ কথা বলেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় এই বার্ষিক সভায় সশরীর ও অনলাইনে অংশ নেন সংস্থাটির বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার সদস্যরা। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায় টিআইবি।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভাঙচুরের ঘটনাকে টিআইবির সদস্যরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন। এ–জাতীয় বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান তাঁরা।

আসন্ন নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো সব রাজনৈতিক দলের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা উল্লেখ করে টিআইবির সদস্যরা বলেছেন, ধর্মান্ধ শ্রেণির উসকানিমূলক আচরণ ও রাজনীতিতে পুঁজি হিসেবে ধর্মের অপব্যবহারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা উদ্বেগের। ধর্মের অপব্যবহার রোধের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার বা প্রত্যয় তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরতে হবে।

ইতিপূর্বে সংঘটিত বাউলশিল্পীদের ওপর আক্রমণ, আহমদিয়া সম্প্রদায়, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য এবং সারা দেশে বিভিন্ন মাজারে সংঘটিত হামলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে উগ্রপন্থীরা সাহস করত না বলেও টিআইবি সদস্যরা মনে করেন। তাঁরা বলেছেন, অনতিবিলম্বে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক চর্চা, প্রতিটি ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা রক্ষায় সংঘটিত প্রতিটি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে পুরো দেশ একসঙ্গে লড়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন টিআইবির সদস্যরা। তাঁরা বলেছেন, সেই বন্ধন অটুট রেখে আসন্ন নির্বাচনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী-পুরুষসহ সব জেন্ডার, শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত সম-অধিকার, সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরতে হবে।

জুলাই সনদের আলোকে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও রাষ্ট্র সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বিজয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেছেন টিআইবির সদস্যরা। তাঁরা বলেছেন, একই সঙ্গে জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু প্রতিপালন করবে এবং গণভোট বিষয়ে তাদের অবস্থান ইশতেহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

টিআইবির সদস্যরা মনে করেন, ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের সুপারিশ উপেক্ষা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অধ্যাদেশ, ২০২৫ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপমৃত্যু ঘটানো হয়েছে। সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে সরকারের দৃশ্যমান নতজানু অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

স্বাধীন পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে পদদলিত করে অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ মৌলিক ধারণাগত, কৌশলগত ও কাঠামোগতভাবে গুরুতর পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন টিআইবির সদস্যরা। তাঁরা বলেন, রক্তক্ষয়ী জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পটভূমিতে সূচিত পুলিশব্যবস্থা সংস্কারের যে অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, এই অধ্যাদেশ তার সঙ্গে রীতিমতো বিশ্বাসঘাতকতা।