বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) লোগো
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) লোগো

মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় কারখানাগুলো মানসম্মত নয়, স্থানান্তর জরুরি: বিসিআইসির বিশেষজ্ঞ দল

মিরপুরের শিয়ালবাড়ি শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা কারখানাগুলো মানসম্মত নয়। ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকার পাশে এমন শিল্পাঞ্চল থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা প্রয়োজন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের (বিসিআইসি) চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল শিয়ালবাড়ি শিল্প এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া রাসায়নিক গুদাম ও গার্মেন্টস কারখানা পরিদর্শন করে। দলের নেতৃত্ব দেন বিসিআইসির জ্যেষ্ঠ জিএম মনজুর রেজা। এতে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ আহমেদ কবীরও ছিলেন।

পরিদর্শনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও জলবায়ু সহনশীলতা বিভাগের অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এটা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। চারপাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এর মাঝে কিছু শিল্পাঞ্চল। এখানে যেসব ভবনে শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, তা এখানে থাকারই কথা নয়। কারখানাগুলোর কোনো ছাড়পত্র আছে বলে মনে হয় না। এমন আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা না রেখে দূরে সরিয়ে নিলে ভালো।

রাসায়নিক গুদামের বিষয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্টস রাসায়নিকে সাধারণত হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড ও অন্য ডায়িং রাসায়নিক থাকে। এগুলো অতটা বিষাক্ত না। যেহেতু আগুন লেগেছে, ফলে বিষাক্ত হয়ে গেছে। মনে হয় সালফার ডাই–অক্সাইড আছে। গুদামের দোতলা প্রায় পরিষ্কার। নিচতলায় কিছু রাসায়নিক আছে, যেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ধোঁয়ার পরিমাণ কমে আসছে।

অধ্যাপক জিল্লুর বলেন, রাসায়নিক গুদামে প্রথম আগুনটা লেগেছে। পরে তা কারখানায় ছড়িয়েছে। যেহেতু কারখানার জানালা সামনের দিকে ছিল। জানালা দিয়ে আগুনের ফুলকি ও ধোঁয়া কারখানার ভেতরে ঢুকে যায়। রাসায়নিকের ধোঁয়া ছিল বিষাক্ত। এতে কারখানার শ্রমিকদের মৃত্যু হয়।

পরে ফায়ার সার্ভিসের সারা দিনের কার্যক্রম নিয়ে ব্রিফ করেন ফায়ার সার্ভিস ঢাকার উপপরিচালক ছালেহ উদ্দীন। তিনি বলেন, গুদামে পানি ছিটানো হচ্ছে। এই পানির সঙ্গে মিশে ভেতরে থাকা রাসায়নিক বের করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, রাসায়নিকের আগুন পানি দিয়ে বা সাধারণ আগুন যেভাবে নেভানো হয়, সেভাবে করা যায় না। রাসায়নিকের আগুন নেভানোর একটা পদ্ধতি আছে, সেটা মেনেই কাজটা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গুদামের ভেতরে ঝুঁকির বিষয়ে ছালেহ উদ্দীন বলেন, ভেতরে বিস্ফোরণের ঝুঁকি নেই। আমরা ভেতরে গিয়েছি। রাসায়নিকের যে অবশিষ্টাংশ আছে, সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেই ধোঁয়া বিষাক্ত। এটা নিশ্বাসের সঙ্গে বেশি পরিমাণে নিলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত।

গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। গুদামে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় রাসায়নিক গুদামের মালিক শাহ আলম ও ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে নিহত একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয়। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে।