চট্টগ্রাম বন্দরে আটক হওয়া কোকেনের চালান আনার সঙ্গে বন্দরের ‘মাফিয়া সিন্ডিকেটের’ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। গতকাল সোমবার দুপুরে নগরের চশমা হিলের মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের কাছে হস্তান্তর এবং বন্দরকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা ও আলামত সম্পর্কে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় কমিটি নির্লিপ্ত ও উদাসীন। তাদের এই আচরণ ও মনোভাবের একটি মাত্র কারণ, তারা কোনো না কোনোভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ব্যবসাপাতি ও আর্থিক ফায়দার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পবিত্র হজ পালনের জন্য গতকাল রাতে মক্কা শরিফের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে একটি লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যের বাইরে ২৪ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
মাফিয়ারা তার চেয়ে শক্তিশালী উল্লেখ করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মাফিয়াদের মোকাবিলা করতে শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এখনো আমি শক্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। অনেকে মনে করছে, আমার বয়স হয়েছে। আমার লোকজন ভিড়িয়ে নিচ্ছে তাদের দলে। তবে আপনাদের মাধ্যমে আমি অবহিত করতে চাই, আমি বৃদ্ধ হলেও শিশু নই। এই বন্দর আমার মা। আমার বাবা। মাফিয়া চক্রের আগ্রাসন হতে বন্দরকে রক্ষা করবই।’
মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই বন্দরকে কেন্দ্র করে দশ ট্রাক অস্ত্র আনা হয়েছিল। দশ ট্রাক অস্ত্রের বিচার হয়েছে। এখন আবার বন্দরে কোকেন ধরা পড়ল। ঋণপত্র ছাড়াই কোকেন চলে আসল। এত সংস্থা বন্দরে থাকার পরও এক মাস বন্দরেও পড়ে ছিল। বন্দরকে কেন্দ্র করে একবার অস্ত্র আসবে, একবার কোকেন আসবে। আরও অস্ত্র হয়তো সুকৌশলে বন্দর দিয়ে পাচার হয়ে অন্যত্র চলে যাবে। অস্ত্র পাচার হলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে।’
বন্দরকেন্দ্রিক মাফিয়া কারা—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসুন না, সবাই মিলে মাফিয়াদের চিহ্নিত করি। মাফিয়ারা চিহ্নিত। সবার দায়িত্ব তাদের খুঁজে বের করা।’ তিনি বলেন, ‘বন্দরকে দুর্বল করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেকে ব্যবসা করছে। ফলে অনেক নেতা সত্য কথা বলতে চায় না। তারা ব্যক্তিস্বার্থ দেখছে। দেশের স্বার্থ নয়।’
লিখিত বক্তব্যে আবারও তিনি গণ খাতে ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করে বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, সাইফের মতো আরও অনেক চক্র আছে, যারা বন্দরকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি বলেন, বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জাহাজমালিকদের ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে। এর মূল্য দিতে হচ্ছে পণ্যের ভোক্তাদের। তিনি বন্দরের অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও মাফিয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের রাঘব বোয়াল, রুই-কাতলাদের অপসারণের দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কার্যত প্রতারণা করা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রামের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ভারতের সাত রাজ্য, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনের কুনমিন প্রদেশ পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ ছিল।