Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রেডিট সুইসে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অর্থ

আর্থিক খাতের আবার এক কেলেঙ্কারির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। এবার অভিযোগের তির সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের দিকে। বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের অন্তত ১০ হাজার কোটি ডলার আছে এই ব্যাংকে।

একজন হুইসেলব্লোয়ার বা ব্যাংকের এক সাবেক বা বর্তমান কর্মী জার্মান এক পত্রিকার কাছে ক্রেডিট সুইসের এমন ১৮ হাজার সক্রিয় হিসাবের হদিস দেন। এরপর সেই পত্রিকা অর্গানাইজড ক্রাইম রিপোর্টিং প্রজেক্টসহ ৪৬টি বৈশ্বিক সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এসব তথ্য ভাগাভাগি করে, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসও আছে।

যাঁদের মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ আছে এই ব্যাংকে, তাঁদের মধ্যে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ্ ও মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের দুই ছেলেও আছেন।

এই ফাঁস–কাণ্ডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুইসসিক্রেটস’। এই ফাঁস–কাণ্ডে আরও জানা গেছে, যেসব মানুষের অতীত পরিষ্কার নয় বা নানা ধরনের ঝামেলা আছে, তাঁদের হিসাব খুলেছে সুইস—নাইজেরিয়ার সাবেক একনায়ক সানি আচাবার দুই ছেলে তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তবে এসব তথ্যের মেয়াদকাল ১৯৪০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত। এর পরবর্তী সময়ের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেশির ভাগ হিসাবই ২০০০ সালের পরে খোলা।

দ্য গার্ডিয়ান–এর তথ্যানুসারে, অত্যাচার, নির্যাতন, মাদক ও অর্থ পাচারসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের হিসাব আছে এই ব্যাংকে। তারা বলছে, এই ফাঁসকাণ্ডে প্রমাণিত হয়, ক্রেডিট সুইসের যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা ছিল, সেটা তারা করেনি; যদিও তারা বারবার বলেছে, সন্দেহজনক গ্রাহক ও অবৈধ তহবিল বন্ধে তারা সব সময় সোচ্চার।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেডিট সুইস বলেছে, তারা এসব হিসাব খতিয়ে দেখছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ হিসাব ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বা গণমাধ্যমের অনুরোধ পাওয়ার সময় বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল। ৬০ শতাংশ হিসাব ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে গেছে।

ক্রেডিট সুইস আরও বলেছে, এসব হিসাবের তথ্য বিচ্ছিন্নভাবে এখান-ওখান থেকে সংগ্রহ করা। ফলে এখান থেকে পূর্ণাঙ্গ চিত্র মেলে না। তাদের অভিযোগ, গণমাধ্যম ক্রেডিট সুইস ও সামগ্রিকভাবে সুইজারল্যান্ডের আর্থিক খাতের গায়ে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা করছে। সুইজারল্যান্ডের আর্থিক খাতে গত কয়েক বছরে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, এটা তারা বলছে না।

যেসব দেশের মানুষের নাম তালিকায় এসেছে, তাদের মধ্যে আছে ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন, থাইল্যান্ড ও মিসর। এর মধ্যে মিসর ও ভেনেজুয়েলার হিসাব দুই হাজারের বেশি, আর ইউক্রেন ও থাইল্যান্ডের হিসাব এক হাজারের বেশি।

দ্য গার্ডিয়ানের অনলাইন প্রতিবেদনে এসব দেশের মানচিত্র সংবলিত তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের মানচিত্রে ছোট একটি বিন্দু থাকলেও এ বিষয়ে বিশদ কিছু বলা হয়নি।

গত কয়েক বছরে এরকম বেশ কয়েকটি বড় ফাঁসকাণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে পানামা পেপার্স, প্যারাডাইজ পেপার্স ও প্যান্ডোরা পেপার্স উল্লেখযোগ্য। এসব ঘটনায় বিশ্বের অনেক ক্ষমতাবান ও বিখ্যাত মানুষের কর ফাঁকি দেওয়ার কাহিনী উঠে আসে। মূলত কনসোর্টিয়াম অব জার্নালিস্টস এসব ফাঁস করে।

এদিকে ক্রেডিট সুইস ২০১৪ সালে মার্কিন নাগরিকদের ভুয়া কর রিটার্ন জমা দিতে সহায়তা করেছে বলে স্বীকার করে। তখন তাদের ২৬০ কোটি ডলার জরিমানা দিতে হয়।