Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই বন্ধুর 'দোকানে' শত কোটি ডলারের বেচাকেনা

‘দোকানের’ কর্মী ৬০ জনের মতো। তাদের কয়েক জনকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন উদ্যোক্তাদের একজন। ছবি: এবং বাণিজ্য

বিশ্বব্যাপী বেচাকেনার একটা বড় অংশ এখন ইন্টারনেটেই হচ্ছে। বিক্রেতাদের কেউ কেউ নিজেই ফেসবুকে পেজ খুলে বা ওয়েবসাইট বানিয়ে সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। অথবা কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা ইন্টারনেটের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। আমাজন, ই-বে, ফ্লিপকার্টের মতো আমাদেরও রয়েছে রকমারি, প্রিয়শপ বা আজকের ডিল। আর এসব ই-কমার্স সাইট বা মার্কেটপ্লেস বানানোর কারিগরি সমাধানে তৎপর তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তারা। 

বিশ্বের ওয়েবসাইটগুলোর তিন ভাগের এক ভাগ, তথা ৩৪ শতাংশই সহজে ওয়েবসাইট বানানোর সিস্টেম ওয়ার্ডপ্রেসের ওপর নির্ভরশীল। আর এই ওয়ার্ডপ্রেসের সঙ্গে প্লাগইনস নামে সলিউশন জুড়ে দিয়ে ওয়েবসাইটকে বানিয়ে ফেলা যায় নিউজ পোর্টাল (যেমন ওয়াশিংটন পোস্ট) বা মার্কেটপ্লেস (যেমন প্রিয়শপ)। 

ওয়ার্ডপ্রেসভিত্তিক বহু বিক্রেতার মার্কেটপ্লেসের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সক্রিয় ও কার্যকরীটির নাম ‘দোকান’। দোকান সলিউশন দিয়ে সহজে আমাজন, ই-বে, শপিফাই, প্রিয়শপের মতো মার্কেটপ্লেস তৈরি করা যায়। আর এই মুহূর্তে বিশ্বের ২০ হাজারের বেশি ওয়ার্ডপ্রেসনির্ভর মার্কেটপ্লেস চলছে ‘দোকান’ দিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে বুটস্ট্র্যাপ, ম্যাশ ডট আইয়ের মতো অনলাইন প্রোডাক্ট বিক্রেতা, মাই মুসলিম মল, ডিজাইন বুমের মতো ই-কমার্স বিক্রেতা, প্লে দ্য মুভির মতো আর্ট কালচারের মার্কেটপ্লেস, কোরাল কমিউনিটির মতো প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবাল বিক্রেতাদের দোকান কিংবা ইংল্যান্ডের হউক অ্যান্ড পেডলের মতো মার্কেটপ্লেস। সহজবোধ্যতা, ঝামেলাহীন ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক সাপোর্ট ছাড়াও হউক অ্যান্ড পেডলের সহপ্রতিষ্ঠাতার ভাষায়, ‘মার্কেটপ্লেসকে বড় করার সবই এক জায়গায়’ আছে দেখে দোকান এত জনপ্রিয়। আর এই ২০ হাজার দোকানের মার্কেটপ্লেসে বছরে শতকোটি ডলারের ওপর বেচাকেনা হয়।

দোকান নামের এই ই-কমার্স সলিউশনটি তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ তারেক হাসান নামের দুই বন্ধু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ার সময় থেকে ফ্রিল্যান্সিং করলেও পরে নিজেদের প্রোডাক্ট বানানোতে নেমে পড়েন দুজন। তাঁদের বানানো ওয়ার্ডপ্রেসভিত্তিক কয়েকটি প্লাগইন বিক্রি হতে শুরু করার পর তাঁদের আর পেছনে ফেরে তাকাতে হয়নি। ২০১৩ সালে পাস করে ঢাকায় এসে প্রতিষ্ঠা করেন উইডেভস ডটকম (www.wedevs.com)।

মিরপুরের উইডেভসের অফিসে ঢোকার পর কৃত্রিম ঘাসের প্লে-জোনে টেবিল টেনিস খেলারত কিংবা ঘাসে শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপে কাজ করার দৃশ্য দেখে আপনার মনে হতে পারে ভুল জায়গায় এসে পড়েছেন। কিন্তু সাড়ে চার হাজার বর্গফুটের অফিসে ভালোমতো নজর বোলালে আপনি এর ৬০ জন কর্মীকে এবং তাঁদের দুই মধ্যমণি তারেক ও নিজামকে খুঁজে নিতে পারবেন। 

উইডেভসের প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন জানালেন, তাঁদের বেশির ভাগ সলিউশনেরই একটি বিনা মূল্যের ভার্সন রয়েছে, যা যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি এই প্রোডাক্ট যেকোনো ভাষায় অনুবাদও হতে পারে। এ ছাড়া থাকে নগদ মূল্যের প্রিমিয়াম ভার্সন। দোকানের চারটি প্রিমিয়াম ভার্সন—নতুনদের জন্য (বছরের ১৪৯ ডলার), পেশাদার (২৪৯ ডলার), ব্যবসা (৪৯৯ ডলার) এবং এন্টারপ্রাইজ (৯৯৯ ডলার)। অন্য প্রোডাক্টগুলোও তাই।

দোকান ছাড়াও তারেক-নিজামের রয়েছে আরও কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়ার্ডপ্রেসভিত্তিক ই-সলিউশন। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক ব্যবস্থাপনা, পে-রোল, অ্যাকাউন্টিং, তথা ২২টি মডিউলের একটি ইআরপি সলিউশন আছে, যেটি বিশ্বের ১০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান তাদের নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করছে। আছে ওয়ার্ডপ্রেসভিত্তিক প্রজেক্ট ম্যানেজার (৫ হাজার ব্যবহারকারী), উইডক্স , ইউজার ফ্রন্টঅ্যান্ডের মতো প্রোডাক্ট। এর মধ্যে দোকান ৩২টি ও ইআরপি ২২টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। 

তারেক-নিজামের ভাষ্যে, তাঁদের কর্মীরাই তাঁদের আসল সম্পদ। এ জন্য স্টার্টআপ হলেও কর্মীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমনি আছে মুনাফা শেয়ারেরও ব্যবস্থা। গেল বছর কর্মীদের বিশাল বহর নিয়ে বেড়িয়ে এসেছেন দার্জিলিং থেকে।

আগামী দিনে বাংলাদেশে থেকে বিশ্বমানের সফটওয়্যার বানানোর ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন ক্ষেত্রে, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, বিগডেটা নিয়েও কাজ করতে চান বলে জানালেন তারেক। পাশাপাশি কিছু বাস্তব সমস্যার সমাধানভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি করে নিজেদের কোম্পানি বিশ্বের ১ নম্বর সুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়তে চান নিজাম। 

সাড়ে তিন বছরের কন্যা মারিয়াম ও স্ত্রী মুর্শেদাকে নিয়ে নিজাম উদ্দিনের পারিবারিক জগৎ। আর তানজিনা নাসরিনের সঙ্গে সম্প্রতি সংসারজীবন শুরু করেছেন তারেক হাসান।

তারেক-নিজামের উইডেভস আমাদের তরুণদের পথচলার পাথেয় হয়ে উঠুক।