
চামড়া ও চামড়াবিহীন—প্রধানত এ দুই ধরনের জুতা তৈরি হয় দেশে। কিছু স্থানীয় চাহিদা মেটায়, কিছু হয় রপ্তানি। কোভিডের কবলে পড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ধাক্কা খেলেও এক বছর পর তা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পুরো কোভিড চলাকালীন বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে জুতা রপ্তানি হয়েছে ৯২ কোটি মার্কিন ডলারের।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পাঁচ অর্থবছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৭৮ কোটি ডলারের চামড়াজাত ও চামড়াবিহীন জুতা। পরেরবার ৮১ কোটি এবং তারপরের বার ৮৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক ধাক্কায় তা নেমে আসে ৭৬ কোটি ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর যা রপ্তানি হয়, তার মধ্যে চামড়ার তৈরি জুতাই ৮৫ শতাংশের মতো। বাকিটা সিনথেটিকসহ অন্যান্য পণ্যের।
লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বে জুতার মোট বাজারের ৫৫ শতাংশ চীনের দখলে। ভারত, ভিয়েতনামেরও ভালো অবস্থান আছে। বিশ্বে জুতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। তবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের এ খাতে অবদান মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে কানাডা, সুইজারল্যান্ড, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুরসহ ৯০টির মতো দেশে জুতা রপ্তানি হচ্ছে।
রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশগুলোতে মোট রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব অন্তত পাঁচ গুণ। এ জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ভালো দিক যে সাভারে পরিকল্পিতভাবে চামড়াজাত জুতা তৈরির অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে। যদিও কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য শোধনাগার গড়ে ওঠাসহ অনেক সমস্যা রয়ে গেছে এখনো।
পাদুকা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বে–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানিতে ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। কারণ, চীন থেকে সরে কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় ‘লকডাউনে’ বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কিছু ক্রয়াদেশ এ দেশে এসেছিল। নতুন কিছু ক্রেতাও বাংলাদেশে এসেছে। এরা ভবিষ্যতেও ক্রয়াদেশ দেবে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা বাড়ছে। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে ক্রয়াদেশ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
জিয়াউর রহমান আরও বলেন, ‘এখন বড় সমস্যা হলো, রপ্তানিতে সময় বেশি লাগছে। একে তো আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। এ জন্য ‘মাদার ভেসেল’ আসে না। নতুন সংকট হলো, এখন কনটেইনার পাওয়া যাচ্ছে না।’