১০০টি নয়, আপাতত ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করবে বেজা

১০০টি নয়, ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সংস্থাটি বলছে, এই পাঁচ অর্থনৈতিক অঞ্চল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সবার মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। তাতে দুই বছরের মধ্যে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৩৩টি শিল্পকারখানা নির্মাণ, ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে বেজা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে আজ মঙ্গলবার এ কথা বলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে দুই বছরের মধ্যে বেজার স্বল্পমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান আশিক চৌধুরী।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে গত এক দশকের বেশি সময়ে কয়েকটি বেসরকারি অঞ্চল ছাড়া সফল কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। এমন বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বদলে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বল্পমেয়াদি ও সময়নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নে আগামী ১০ বছরে ১০টি অঞ্চল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্দেশ্য সফল হবে। তবে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একেবারে বাদ দিচ্ছি না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে তা থাকবে।’

স্বল্পমেয়াদি অগ্রাধিকার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী দুই বছরে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। এগুলো হলো চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড), শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল ও জাপানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)।

এই পাঁচ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও অন্যান্য পরিষেবা নিশ্চিত করতে সময়নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, চলতি বছরের মধ্যে শ্রীহট্ট, জামালপুর ও জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সংযোগ সড়কের সব কাজ শেষ করা হবে। আর ২০২৬ সালের মধ্যে মিরসরাইয়ের এনএসইজেড ও মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলের উল্লিখিত কাজগুলো শেষ করা হবে।

এ ছাড়া চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ১০ বছরের একটি সময়নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে অনুষ্ঠানে বেজার পক্ষ থেকে জানানো হয়। অর্থাৎ আগামী ১০ বছরে এই ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে সংস্থাটি।

পাশাপাশি বেসরকারি ইজেড নিয়েও সময়নির্দিষ্ট পরিকল্পনা পথনকশা নেওয়া হবে বলে জানান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদনের মানদণ্ড নির্ধারণ করা এবং এসব অঞ্চলে বিভিন্ন পরিষেবা পৌঁছানোর বিষয়েও একটি সময়নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

আরও যেসব পরিকল্পনা রয়েছে

আশিক চৌধুরী জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিনিয়োগকারীরা গ্যাস–পানিসহ বিভিন্ন পরিষেবা ঠিকভাবে পান না, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে এবং দুর্নীতি ও সরকারি সেবার মান নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এসব সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন জমি বরাদ্দের অনুমোদন প্রক্রিয়া সরাসরি বেজার অধীনে আনা হয়েছে এবং বেজায় পুরোপুরি ডিজিটাল নথি কার্যক্রম চালু হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত পাটকল কিংবা বন্ধ শিল্পকারখানা ও জমি রয়েছে। এ ধরনের কয়েকটি জায়গা বেজার অধীনে এনে শিল্প স্থাপনের উপযোগী করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, এসব জায়গায় গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি রয়েছে; যোগাযোগব্যবস্থা ও স্থানীয় কমিউনিটি রয়েছে। ফলে এ ধরনের কোনো জায়গায় শিল্প স্থাপন করা সহজ হবে। ছয় মাসের মধ্যে এ ধরনের কিছু উদ্যোগ দেখা যেতে পারে।

বেজার মালিকানাধীন বিভিন্ন স্থানের অব্যবহৃত জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান। তিনি বলেন, ‘এর অংশ হিসেবে মিরসরাইয়ে খালি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শুরু করেছি।’

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেডকে (কেইপিজেড) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সরিয়ে ইতিমধ্যে বেজার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান আশিক চৌধুরী।