Thank you for trying Sticky AMP!!

আপনার মাথাপিছু আয় যেভাবে বেড়েছে

অনেক বড় সুসংবাদ। আমাদের মাথাপিছু আয় কেবল বেড়েই চলছে। যেমন গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলেছিল, সাময়িক হিসাবে দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। আর আজ পাওয়া গেল চূড়ান্ত হিসাব। এ অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা।

এক অর্থবছর আগেও (২০১৯-২০) এই মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৩২৬ ডলার বা ১ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৯ টাকা। এর অর্থ হচ্ছে, পরের এক বছরে ২৬৫ ডলার বেড়েছে। আগাম সুখবর আরও আছে। যেমন গত ৩০ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ‘আগামী অর্থবছরে আমাদের মাথাপিছু আয় আরও বেড়ে হবে ৩ হাজার ৮৯ মার্কিন ডলার।’

Also Read: নিলুফা খাতুনের মাথাপিছু আয় বাড়ার গল্প

এখন আপনারা যাঁরা এই লেখা পড়ছেন, ভুলেও পকেটে হাত দেবেন না। কেননা এক বছরে যে ২৬৫ ডলার আয় বাড়ল, এই অর্থ মানিব্যাগে খুঁজে পাবেন না। তবে অবশ্যই আপনার খুশি হওয়া উচিত। কেননা আপনার আয় না বাড়ুক, আরেকজনের ঠিকই বেড়েছে। ২০২০ সাল থেকে দেশ করোনার কারণে নানাবিধ সংকটের মধ্যে আছে। স্কুল আবার বন্ধ। বিক্রি কমেছে। বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। আয় কমে গেছে। চিকিৎসায় বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। কাজ হারিয়েছে মানুষ। এরপরও আমাদের মাথাপিছু আয় ঠিকই বেড়ে গেছে। এটাকে বৈষম্য আর গড় হিসাবের ম্যাজিক বলতে পারেন।

যেভাবে বেড়েছে

তাহলে একটি ঘটনার কথা বলি। এ থেকেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বাস্তব উদাহরণ পেয়ে যাবেন। যেমন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড় গ্রামের দিনমজুর মো. আলম ও তাঁর স্ত্রী তামান্না বেগম। গত ২৬ জানুয়ারি স্থানীয় এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে এক ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তামান্না। হাসপাতালের বিল আসে ২৬ হাজার টাকা। কিন্তু এত টাকা নেই তাঁদের কাছে। ফলে এই দরিদ্র দম্পতি ৫০ হাজার টাকায় ওই সন্তানকে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন।

তাহলে মাথাপিছু আয়ের হিসাবটা কী দাঁড়াল? দিনমজুর মো. আলম ও তামান্নার আয় বেড়েছে ৫০ হাজার টাকা। গড়ে এই দুজনের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৫ হাজার টাকা। আবার এই আয় থেকে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা হয় ২৬ হাজার টাকা। সুতরাং এই অর্থ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলো। এতে বাড়বে সেবা খাতের আয়। এর প্রভাব পড়বে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি)। আর জিডিপির প্রবৃদ্ধি মানেই তো আবারও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি।

Also Read: প্রবৃদ্ধির বিভ্রম বনাম সুখ

সবাই তো সুখী হতে চায়

অর্থনীতি শিক্ষা এখানেই শেষ নয়। মো. আলম ও তামান্নার এই ৫০ হাজার টাকা আয়ের খবর ফাঁস হয়ে যায়। ছাপা হয় প্রথম আলোসহ একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে। এতে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। তারা বিক্রি করে দেওয়া সেই সন্তানকে আবার ফিরিয়ে দেন মা-বাবার কাছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ওই পরিবারে সদস্যসংখ্যা এখন ৩। ফলে মাথাপিছু আয় আসলে বেড়েছে ১৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আয় কমলেও সন্তানকে ফিরে পেয়ে নিশ্চয়ই মো. আলম ও তামান্না দম্পতির সুখ বেড়েছে।

যাঁরা জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে পাত্তা দিতে চান না, একে এক ধরনের বিভ্রম বলে মনে করেন, তাঁরা সুখের উদাহরণ দেন, বিশেষ করে টেনে আনেন জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক থেকে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক সুখ প্রতিবেদন’-এর কথা। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় বা জিডিপি বাড়াটাই সব নয়। সুখের সূচক করতে হলে দুর্নীতি, সামাজিক সহায়তা, স্বাধীনতা, উদারতা ও প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালকেও যুক্ত করতে হবে। সুতরাং জিডিপির সঙ্গে সুখের সম্পর্কটি যে অনেক গোলমেলে, তা ভালোই টের পাচ্ছেন মো. আলম ও তামান্না দম্পতি। প্রথমে আয় বাড়লেও তাঁদের সুখ ছিল না, পরে আয় কমলেও সুখ বেড়েছে।

Also Read: জিডিপির হিসাব কতটা বিশ্বাসযোগ্য

ব্যয় নিয়ে আলাপ

মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি বুঝতে লেখার শুরুতে পকেটে হাত দিতে মানা করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যয় নিয়ে আলাপে আর সেই নিষেধ নেই। অবশ্য মানিব্যাগে হাত না দিয়েই প্রতিটি সৎ নাগরিক মুখস্থ বলে দিতে পারবেন, ব্যয় কতটা বেড়েছে। মজার ব্যাপার হলো, আপনি যে আয় কখনো চোখে দেখবেন না, আপনার সেই আয়ের হিসাব সরকারের কাছে আছে। আর যে ব্যয়ের হিসাব আপনি মুখস্থ বলে দিতে পারবেন, তার হালনাগাদ কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই।

গোলমাল আরও আছে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলাপে সরকারের আগ্রহ কিন্তু মূলত আপনার ব্যয় নিয়ে। আপনি যত বেশি ব্যয় করবেন, প্রবৃদ্ধি তত বাড়বে। আমাদের জিডিপি গণনার পদ্ধতি এটাই। ফলে কোন পথে আয় করবেন, তা নিয়ে কম কম নজরদারিতে রাখলেও সমস্যা নেই। আপনার আয় সৎ পথে না দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত, সেটা বড় কথা নয়। ব্যয় করলেই হলো। আর দুর্নীতি থেকে আয় হলেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া তো থাকেই। এ কারণেই দুর্নীতি সূচকে বরাবরই বাংলাদেশ খারাপ করে আসছে।

সব মিলিয়ে সরকার আপনার মাথাপিছু আয় বাড়াতেই থাকুক। আর আপনি হিসাব কষতে থাকুন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় বাজারখরচ কত বাড়বে, সরকারি সেবা পেতে কয়বার ঘুষ দিতে হবে, ২৭ শতাংশ বাড়ানোর কারণে বাসভাড়া কত দিতে হবে, করোনা হয়ে গেলে চিকিৎসা ব্যয় কত বাড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি।

Also Read: বাংলাদেশ: যেখানে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গী উচ্চ দুর্নীতি

Also Read: সুখস্থান নামের দেশের জিডিপির গল্প