
ভারতের সুপারস্টার শাহরুখ খান আজ ৫৮তম জন্মদিন উদ্যাপন করছেন। তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। বলিউড বাদশাকে তাঁরা কতটা ভালোবাসেন আর ভক্তি করেন, তা জানাতে এই ভক্তরা কোনো চেষ্টাই বাদ রাখছেন না। বিপুলসংখ্যক মানুষ সাহায্য নিয়েছেন ইন্টারনেটের তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে।
জন্মদিনে তাঁকে একনজর দেখতে হাজারো ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় তাঁর সাগরমুখী বাংলো মান্নাতের বাইরে। প্রতিবছর এই দিনে ভক্তরা অনেকটা নিয়ম মেনে মান্নাতের বাইরে জড়ো হন। আর শাহরুখ খান যখন বাড়ির টেরেসে বেরিয়ে আসেন, ভক্তরা তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন।
রাজধানী দিল্লির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর জন্ম শাহরুখ খানের। তবে জীবনের শুরুতে পাঁচ বছর তিনি কাটিয়েছেন ম্যাঙ্গালোরে তাঁর মায়ের দিকের পরিবারের সঙ্গে। এরপর দিল্লিতে ফিরে পড়াশোনা এবং ১৯৮৮ সালে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন। তবে নাম করলেন অভিনয়ে। আজ তিনি পৃথিবীর ধনী অভিনেতাদের একজন। তাঁর আয় চলচ্চিত্রশিল্প ও ব্যবসা থেকে।
ধনী তারকা
ভারতের গণমাধ্যম মানিকন্ট্রোলের হিসাবে, শাহরুখ খানের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৭ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির বেশি। সেই হিসাবে তিনি বিশ্বের চতুর্থ ধনী অভিনেতা। তাঁর আগে রয়েছেন জেরি সিনফেল্ড, টাইলার পেরি ও ডোয়াইন জনসন। সম্পদের দিক থেকে শাহরুখ পেছনে ফেলেছেন টম ক্রুজ, জর্জ কুলনি ও রবার্ট ডি নিরোর মতো তারকাদের।
ফোর্বসের ২০১৭ সালের ধনী সেলিব্রিটিদের তালিকায় তিনি ৬৫তম স্থানে ছিলেন। তবে ২০২০ সালের পর থেকে শাহরুখ খানের সম্পদ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৩ সাল আর্থিক দিক দিয়ে তাঁর জন্য অত্যন্ত সফল এক বছর। তাঁর ছবি ‘পাঠান’ বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সমগ্র পৃথিবী থেকে ‘পাঠান’–এর আয় ১ হাজার ৫০ কোটি রুপির বেশি। এই সিনেমার জন্য ফি নেননি, তবে মুনাফার ৬০ শতাংশ পকেটে পুরেছেন কিং খান। ফলে তিনি একাই ২০০ কোটি রুপির বেশি পেয়েছেন বলে জানাচ্ছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
এরপর এসেছে ‘জওয়ান’। সংবাদমাধ্যমের খবর, এই ফিল্মের জন্য শাহরুখ খানের ফি ছিল ১০০ কোটি রুপি। শুধু নির্দিষ্ট এই অর্থই নয়, তিনি মুনাফার ৬০ শতাংশ পেয়েছেন। ধারণা করা হয়, ‘জওয়ান’ ভারত ও বাকি বিশ্ব থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি রুপি আয় করেছে।
তাঁর সম্পদের মধ্যে রয়েছে মুম্বাইয়ে সুপরিচিত বাড়ি মান্নাত। ২০০১ সালে বান্দ্রার এই বাড়ি তিনি কিনেছিলেন ১৩ কোটি ৩২ লাখ রুপিতে। এরপর এর সাজসজ্জায় নেমে পড়েন স্ত্রী গৌরী খান। সঙ্গে ছিলেন কাইফ ফাকিহ। এটিকে মুম্বাইয়ের অন্যতম সুন্দর বাড়ি বলে মনে করা হয়। হিন্দুস্তান টাইমসের হিসাবে, এই বাড়ির দাম এখন ২০০ কোটি রুপির বেশি।
শাহরুখ খানের বাড়ি আছে লন্ডনেও। সেখানকার অভিজাত পার্ক লেনে তাঁর ভিলার দাম ১৮০ কোটি রুপি বলে মনে করা হয়। আর দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ নামের কৃত্রিম দ্বীপে রয়েছে তাঁর আরেকটি বাড়ি। চমৎকার এই ভিলার নাম জান্নাত। হাউসিং ডটকমের হিসাবে, এই বাড়ির মূল্য অন্তত ১০০ কোটি রুপি।
এখানেই শেষ নয়, শাহরুখ খান একজন সফল উদ্যোক্তাও। তাঁর সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রোডাকশন কোম্পানি রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট। টফলারের হিসাবে, এই কোম্পানির বাৎসরিক আয় কমবেশি ৫০০ কোটি রুপি। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত যে হিসাব টফলার পেয়েছে, তাতে দেখা গেছে কোম্পানির মৌলভিত্তি আগের চেয়ে শক্ত হয়েছে।
ক্রিকেট ও গাড়ি
ক্রিকেটেও পদচারণা রয়েছে বলিউড বাদশার। তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমের অন্যতম মালিক। রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে তিনি এই কোম্পানির ৫৫ শতাংশের মালিক। ফোর্বসের মতে, এই আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) দলের মূল্যমান ১১০ কোটি মার্কিন ডলার।
কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমের বাইরে আরও ক্রিকেট দলে শাহরুখ খানের বিনিয়োগ রয়েছে। এগুলো হলো ট্রিনবাগো নাইট রাইডার্স, আবুধাবি নাইট রাইডার্স ও লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্স। এসব বিনিয়োগের মূল্য ৭৪০ কোটি রুপি বলে ধারণা করা হয়।
দামি সব গাড়িও রয়েছে শাহরুখ খানের। রোলস রয়েস ফ্যান্টম ড্রপহেড কুপে, রোলস রয়েস কালিনান ব্ল্যাক, বেন্টলি কন্টিনেন্টাল জিটি, বুগাতি ভেরন, বিএমডব্লিউ ৭–সিরিজ, বিএমডব্লিউ ৬–সিরিজ কনভার্টিবল, ল্যান্ড রোভার, বিএমডব্লিউ আই৮ ও টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার—কিং খানের গ্যারেজে এসব গাড়ির দেখা মেলে।
শাহরুখের উত্থান
মুম্বাইয়ের সিনেমা জগৎ থেকে শাহরুখ খানের উত্থান ঘটেনি। বড় কোনো তারকা তাঁর পেছনে ছিলেন না, এমনকি বলিউডে তাঁর কোনো আত্মীয়ও ছিলেন না বড় অভিনেতা; বরং ছোট পর্দা থেকে শুরু করেছেন তিনি। সেই ১৯৮০–এর দশকে তিনি টেলিভিশনে অভিনয় করতেন। এরপর অনেক বছর পরে বলিউডের তারকা–জগতের একটি তারকা হিসেবে তাঁর আবির্ভাব ঘটে।
তাঁর খুব স্বাভাবিক কারিশমা রয়েছে। কিন্তু বড় পর্দায় নিজের উপস্থিতি জানানো শাহরুখের জন্য খুব সহজ ছিল না। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন। সেই শুরুর দিকে তিনি ভিলেন হিসেবে ‘ডর’ (ভয়) সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।
শাহরুখ খান জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যান ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির মাধ্যমে। এটি ছিল ভারতের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। এই ছবির মাধ্যমে শাহরুখ খান আন্তর্জাতিক তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।