Thank you for trying Sticky AMP!!

ই-ভ্যালির আর্থিক অব্যবস্থাপনা তদন্তে এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • ই-ভ্যালির ওপর তদন্ত করে গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

  • ক্যাশব্যাক অফারে গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে নিজের ওয়ালেটে রাখছে ই-ভ্যালি।

  • পণ্য কেনার সময় গ্রাহকদের ১০০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করতে দেওয়া অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির আর্থিক অব্যবস্থাপনার ত্রুটি তদন্তের ভার এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। একই সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নতুন করে তদন্ত করে ই-ভ্যালির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তদন্তটি হতে হবে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ শাখার মাধ্যমে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীনকে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছে। এ ছাড়া ভিন্ন চিঠিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ই-ভ্যালির কার্যক্রম তদারক করতে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলকে আইন মেনে ই-ভ্যালি যাতে ব্যবসা করে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন করে ই-ভ্যালি নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চারটি দপ্তরকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ই-ভ্যালির ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়কে (আরজেএসসি) পৃথকভাবে চিঠি দিয়েছিল।

Also Read: আইন লঙ্ঘন করছে ই-ভ্যালি

এর মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি শুধু জননিরাপত্তা বিভাগ প্রতিবেদন তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এবারের তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এ প্রতিবেদনেরই সুপারিশ মেনে। এ দফার চার চিঠিতে তা উল্লেখও করা হয়। চিঠিগুলোর বিষয় একই, ‘ই-ভ্যালির ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্যকলাপের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ’।

জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, দণ্ডবিধি ১৮৬০ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইন ২০০৯ অনুযায়ী অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পর সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা। এর শাস্তি এক থেকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।

ক্যাশব্যাক অফারে গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে নিজের ওয়ালেটে রাখছে ই-ভ্যালি। আবার পণ্য কেনার সময় গ্রাহকদের ১০০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। এ ধরনের অপরাধের দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এ ছাড়া ই-ভ্যালি তার গ্রাহকদের সঙ্গে হটলাইন নম্বর, সাপোর্ট ই-মেইল, ই-ভ্যালি অ্যাপ্লিকেশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যথাযথভাবে যোগাযোগ করে না বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

Also Read: ই-ভ্যালি নিয়ে তদন্ত করবে দুদকসহ ৭ আলাদা সংস্থা

পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে ই-ভ্যালি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা না করে বরং নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে। আর এসবের মাধ্যমে ই-ভ্যালি দণ্ডবিধি, ১৮৬০–এর পাঁচটি ধারা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯–এর দুটি ধারা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮–এর একটি ধারা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগবিষয়ক চিঠিগুলো নিয়ে জানতে চাইলে ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত মানেই খারাপ কিছু নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করুক, আমরাও তা চাই। তবে শুধু ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে ই–কমার্স চলবে না। আমরা যখন নগদ টাকাবিহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তখন আবার নগদে ব্যবসা করার ঘোষণা দিচ্ছি, এই বৈপরীত্য ডিজিটাল ব্যবসায়ের সঙ্গে যায় না।’ অগ্রিম পরিশোধ ও নগদ—দুটোই রাখার দাবি জানান তিনি।

কোন দপ্তর কী করবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ই-ভ্যালির আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হলো।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই এ বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেবে।’
জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ শাখার মাধ্যমে তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিঠিতে বলেছে, ই-ভ্যালি কতগুলো ক্রয় আদেশ পেয়েছে এবং কী পরিমাণ সরবরাহ করেছে, তা তদারক করে প্রতি মাসে প্রতিবেদন পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। ই-ভ্যালির কার্যক্রম পরিচালনায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না, তা–ও তদারক করতে বলা হয়েছে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাবলু কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা নিষ্পত্তি করছি।’ শিগগিরই মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ই-ভ্যালিকে ব্যবসা করার নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলকে। জানতে চাইলে ডব্লিউটিও সেলের ডিজি হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতি চালুর বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই ই-ভ্যালিকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’ ই-কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

Also Read: প্রয়োজনে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করবে ই-ভ্যালি