Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজেটে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দামে স্বস্তির আভাস নেই

প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য বরাদ্দ নিয়ে সিপিডি আয়োজিত সংলাপে বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম (বাঁ থেকে তৃতীয়)। গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চড়া দামে আমদানির কারণেই চাপে আছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ভর্তুকি বাড়িয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়তে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে ভোক্তার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দাম কমানোর স্বস্তিকর কোনো খবর নেই। বরং দাম বাড়ানোর আভাস আছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।

প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নিবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংলাপে সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে মিলতে পারে সমাধান। একই পরামর্শ দিয়েছেন সংলাপে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা।

সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, নতুন বাজেটে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সমন্বয় করার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে পর্যাপ্ত ভর্তুকি বরাদ্দ দিয়ে দাম না বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় রাখা দরকার। অন্তত আগামী ছয় মাস দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। এবারও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বরাদ্দ ৫৮ শতাংশ। আগের বছর এটি ছিল ৬১ শতাংশ। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকেও সরে আসা দরকার—বিশেষ করে জ্বালানি তেল ও এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সহনীয় দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সরকারের লক্ষ্য। এটি বিবেচনায় নিয়েই বাজেট করা হয়েছে। বক্তাদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জ আসলে বিনিয়োগ চার্জ, একে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। লাভজনক হওয়ায় স্পট থেকে এলএনজি আনা শুরু হয়। এখন মনে হচ্ছে, এটি লাভজনক নয়। আর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে এখনই সরে আসার সুযোগ নেই। সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট গ্যাসবিদ্যুতের ৫ হাজার ব্যবহার করা যায়। তেলবিদ্যুৎ না থাকলে বিদ্যুতের ঘাটতি হতো।’

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ২০০৬ পর্যন্ত বড় সমস্যা ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন, তাই তাতে জোর দেওয়া হয়েছে। এখন মূল সমস্যা প্রাথমিক জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস। পেট্রোবাংলা নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অনুসন্ধান না করে গ্যাস নেই বলে মিথ্যা রটাচ্ছে। অপচয়ের নামে গ্যাস চুরি হচ্ছে। গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ালেই এ খাতে সমস্যা থাকবে না।

সিপিডির নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে বলা হয়, এ বছর বিদ্যুৎ আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহারও বাড়ছে। আর সক্ষমতার ৪২ শতাংশ থাকছে অব্যবহৃত। কিন্তু এর জন্য সরকারকে খরচ করতে হচ্ছে, যা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নামে পরিচিত।

সংলাপে ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সাফল্যের গল্প আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রাথমিক জ্বালানি দিয়ে, যাতে কোনো সাফল্য নেই।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত শতভাগ বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আর সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় মেটাতে।

দেশের বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সংগঠন ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম বলেন, ছয় মাস আগেও ফার্নেস তেলের দাম ছিল ১০ ডলার, এখন তা ১৭ ডলার। গ্যাসের দামও চড়া। বিভিন্ন জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকায় একটি বন্ধ রেখে অন্যটি ব্যবহার করা যাচ্ছে।

সংলাপ সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই হবে না। সহনীয় দামে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সংলাপে আরও বক্তৃতা করেন সিপিডির ট্রাস্টি খুশী কবির।