ক্ষমতায় ফিরে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এবারও তাঁর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার—শুল্ক। তিনি এ শুল্ক ব্যবহার করছেন একসঙ্গে কয়েকটি লক্ষ্য পূরণের জন্য। যেমন সরকারি রাজস্ব বাড়ানো, অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমানো এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রেই পণ্য উৎপাদনে বাধ্য করা।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই শুল্ক আসলে দেয় কে, আর সেই টাকা কোথায় যায়?
শুল্ক হচ্ছে একটি সরকারি ফি বা কর, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বসানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই শুল্ক পরিশোধ করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থাৎ বিদেশি কোম্পানি নয়, যারা পণ্য আমদানি করছে, তাদেরই এ অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। এ অর্থ জমা পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে (অর্থ মন্ত্রণালয়ে)।
ধরা যাক, খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট ভিয়েতনাম থেকে ১০০ ডলারের এক জোড়া জুতা আমদানি করল। যদি ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন আদেশ অনুযায়ী, জুতার ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসে, তবে ওয়ালমার্টকে ওই জুতার জন্য ২০ ডলার শুল্ক দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে।
তারপর ওয়ালমার্ট এ বাড়তি খরচ সামাল দিতে কয়েকটি পথ নিতে পারে। যেমন ভিয়েতনামি প্রস্তুতকারককে কম দামে পণ্য দিতে বাধ্য করতে পারে, নিজের লাভ কমিয়ে শুল্কের বোঝা নিজেই নিতে পারে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে খরচের বোঝা গ্রাহকের ওপর চাপাতে পারে কিংবা একাধিক উপায় একসঙ্গে নিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, তাঁরা আমদানিতে এমন শুল্ক বসাচ্ছেন যেন তা বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করতে বাধ্য হবে। ফলে দেশে কর্মসংস্থান ও মজুরি বাড়বে—এমনটাই দাবি হোয়াইট হাউসের।
তবে ট্রাম্প আরও একটি বিষয় বলেছেন, এই শুল্ক থেকে যে রাজস্ব আসবে, তা ব্যবহার করা যাবে কর কমানোসহ বিভিন্ন ঘরোয়া ব্যয়ের জন্য।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্পের এসব উদ্দেশ্য একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়; বরং অনেক সময় এগুলো পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একদিকে যদি শুল্ক বসিয়ে দেশি শিল্পকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে আমদানির ওপর নির্ভরশীল মার্কিন অনেক কোম্পানির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এতে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
শুল্কনীতির কারণে কাঁচামালের দামও বেড়ে যাচ্ছে, ফলে দেশি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এককথায়, শুল্ক যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বাস্তবে তার প্রভাব আরও জটিল।
সবশেষে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক আসলে বিদেশি নয়, দেশি আমদানিকারকেরাই দেয়। এ খরচের চাপ শেষ পর্যন্ত পড়ে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর। সরকারি রাজস্ব বাড়লেও অর্থনীতির অন্যান্য খাতে এই শুল্কের বিরূপ প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতির সময়রেখা: কখনো চাপিয়ে দেওয়া, কখনো তুলে নেওয়া
ট্যারিফ বা শুল্ককে ‘অভিধানে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ’ বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি বড় পরিসরে শুল্ক আরোপ করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে আরও ব্যাপক শুল্ক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরে প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। আদেশে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বাণিজ্যকাঠামো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে আরও নতুন শুল্ক আসছে।
এপ্রিল মাসে তিনি ঘোষণা করেন এক বিশাল শুল্ক প্যাকেজ। যার আওতায় পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি কোনো না কোনো দেশের বিরুদ্ধে নতুন শুল্কের হুমকি দিয়েছেন। এসব শুল্ককে ট্রাম্প ব্যবহার করেছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিজের অবস্থান জোরালো করতে। আবার প্রায়ই অসম্পূর্ণ বা চলমান চুক্তিগুলোকে ‘বড় সাফল্য’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। এ অনিশ্চিত ও আগ্রাসী কৌশলের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু দেশের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অস্থির হয়েছে বৈশ্বিক বাজার। অনেক শিল্প খাত পড়ে গেছে বিভ্রান্তিতে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্কের লক্ষ্য ছিল এমন দেশগুলো, যারা যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি, ইলেকট্রনিক পণ্য, মুদিসামগ্রী, মদ, কাঠ ও গ্যাস রপ্তানি করে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের পকেটেই বাড়তি চাপ পড়বে।
২০ জানুয়ারি ২০২৫
শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। অভিযোগ ছিল, এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অভিবাসী প্রবেশ ঠেকাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
নিজের প্রশাসনের অনেক সদস্যকেও অবাক করে দিয়ে ট্রাম্প হঠাৎই সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেন, কলম্বিয়া থেকে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়, কলম্বিয়া সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের বহনকারী বিমান ফিরিয়ে দিয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো পাল্টা হুমকি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক বসানোর। তবে পরে তিনি পিছিয়ে যান এবং কিছুক্ষণ পর ট্রাম্পও পিছিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, কলম্বিয়া সরকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সব শর্ত মেনে নিয়েছে। শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আপাতত সংরক্ষিত থাকবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। এতে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা প্রায় সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীন থেকে আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়।
ট্রাম্প বলেছিলেন, এই শুল্ক দেওয়া হচ্ছে, কারণ ফেন্টানিল নামের মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসনে তিনি উদ্বিগ্ন। কানাডা ও মেক্সিকো পাল্টা শুল্ক দেওয়ার ঘোষণা দেয়, আর চীন হুমকি দেয় ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার।
শুল্ক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। সমালোচকরা বলেন, এই শুল্ক অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি করতে পারে।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘কিছুটা কষ্ট হবে? হ্যাঁ, হতে পারে (আবার না–ও হতে পারে!)।’ এতে বোঝা যায়, তিনি কিছু নেতিবাচক প্রভাব স্বীকার করছেন।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর নতুন শুল্ক দেওয়ার হুমকিও দেন।
চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়। চীন পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর নতুন শুল্কসহ অন্যান্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ আরও বাড়াবেন এবং অন্য দেশগুলোর ওপর ‘পাল্টা শুল্ক’ চাপাবেন। তবে বলেননি ঠিক কোন কোন দেশ এতে পড়বে।
ট্রাম্প বিদেশি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আবার চালু করেন, যা তাঁর প্রথম মেয়াদের পুরোনো নীতির পুনরাবৃত্তি।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ব্যাপক পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা আছে তাঁর। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ গ্লোবাল ট্রেড সিস্টেমে (বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা) বড় রদবদল আনবে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদন করতে বাধ্য করা।
ট্রাম্প বলেন, বিদেশি গাড়ির ওপর শুল্ক তিনি ২ এপ্রিল থেকে আরোপ করবেন। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন, ১ এপ্রিল (এপ্রিল ফুলস ডে) এ ঘোষণা দেবেন, কিন্তু বলেন, ‘আমি একটু কুসংস্কারগ্রস্ত, তাই এক দিন পর করছি।’
একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিককে নির্দেশ দেন, বিদেশি কপার (তামা) উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না, তা খতিয়ে দেখতে। ফলে তামার ওপর শুল্ক বসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে হোয়াইট হাউস জানায়নি, শুল্ক কত হবে বা খতিয়ে দেখা কবে শেষ হবে।
ট্রাম্প বলেন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক এবং চীনের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ৪ মার্চ থেকে কার্যকর হবে, ঠিক যেভাবে পূর্বঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘মেক্সিকো ও কানাডা থেকে এখনো প্রচুর পরিমাণে মাদক ঢুকছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রিপোর্টে সব সময় এ কথা বলা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিককে অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেন, কানাডা থেকে আসা কাঠ আমদানি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না। ফল যদি হুমকি প্রমাণ করে, তাহলে কানাডার ওপর আরও শুল্ক বসানো হতে পারে। উল্লেখ্য, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে কাঠ রপ্তানিতে সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ।
কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর হয়। এই তিন দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জবাবে ঘোষণা দেন, ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দেওয়া হবে।
ট্রাম্প বলেন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি হওয়া গাড়ির ওপর শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করা হবে। এ ঘোষণা তিনি দেন জেনারেল মোটরস, ফোর্ড ও স্টেলান্টিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফোনালাপের পর।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদি শুল্ক বহাল থাকে, তবে ৯ মার্চ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতোই কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর অনেক শুল্ক আবার স্থগিত করা হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত বাজারের প্রভাব দেখে নেওয়া হয়নি’। যদিও ওই সময় শুল্ক-সংক্রান্ত খবরেই অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছিল। তবে তিনি জানান, ১২ মার্চ থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আসছে, আর ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর পাল্টা শুল্ক চালু হবে।
চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক বসাতে শুরু করে। যেমন মুরগি ও ভুট্টার ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক, সয়াবিন ও ফলের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক। কানাডার অন্টারিও প্রদেশ (সবচেয়ে জনবহুল) নিজস্ব শুল্ক ঘোষণা করে। যেমন মিশিগান, মিনেসোটা ও নিউইয়র্কে রপ্তানি হওয়া বিদ্যুতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর।
ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কানাডা থেকে আসা এ বিদ্যুৎ শুল্ক একধরনের অপমানজনক হুমকি। তিনি হুমকি দেন, কানাডা থেকে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করবেন। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষ পিছু হটে। অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড জানান, বিদ্যুতের অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত থাকবে। ট্রাম্প বলেন, সম্ভবত কানাডার ধাতব পণ্যের ওপর শুল্কও কমিয়ে দেওয়া হবে।
ইইউ ও কানাডা পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করে যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শত শত কোটি ডলারের শুল্ক বসানো হবে। তবে ইউরোপীয় নেতারা বলেন, তাঁরা এই শুল্ক ১ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখবেন। কারণ, তাঁরা এখনো ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান।
ইইউ ১ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হুইস্কি ও অন্যান্য পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসাবে—এ খবর জানার পর ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দেন। তিনি বলেন, ইইউ দেশগুলোর সব ওয়াইন, শ্যাম্পেইন ও অ্যালকোহলজাত পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এটাই ছিল তাঁর অন্যতম বড় শুল্ক হুমকি।
যেসব দেশ ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কেনে সরাসরি বা কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এই শুল্ক ২ এপ্রিল বা তার পরে কার্যকর হবে।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব ধরনের গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এমনকি বিদেশে তৈরি হলেও যদি তা আমেরিকান ব্র্যান্ড হয়, তাহলেও শুল্ক প্রযোজ্য।
যদি আগে থেকে কোনো পণ্যের ওপর আলাদা শুল্ক না বসানো থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়। তবে এ ১০ শতাংশ মূল শুল্ক ছাড়াও কিছু দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক যোগ হয়। ফলে বহু দেশ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাও প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি শুল্কের মুখে পড়ে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ওই দিন নতুন করে ৩৭ শতাংশ রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, যা ট্রাম্পের চীনা রপ্তানির ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১১টি মার্কিন কোম্পানিকে চীনে ব্যবসা করতে নিষেধ করে দেয়।
ভিয়েতনাম ট্রাম্পকে অনুরোধ করে কমপক্ষে ৪৫ দিন সময় দিতে, যেন শুল্ক আরোপ বিলম্বিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তখন দেশটির ওপর ৪৬ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যা সর্বোচ্চ শুল্ক স্তরের কাছাকাছি।
বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করে তিন মাসের সময় দিতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ স্থগিত থাকে। একই সময়, ট্রাম্প চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কের জবাবে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার হুমকি দেন।
ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি কার্যকর হয়। চীনের পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক, ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, জাপানি পণ্যের ওপর ২৪ শতাংশ, ভিয়েতনামি পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়। চীন পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বসায়, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশ। চীনের এই নতুন শুল্ক কার্যকর হয় ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকরের ১২ ঘণ্টা পর।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নতুন শুল্ক অনুমোদন করে, যা পরবর্তী সপ্তাহে কার্যকর হবে।
৯ এপ্রিল বিকেলে ট্রাম্প আকস্মিক সিদ্ধান্তে বলেন, তিনি পাল্টা শুল্ক আগামী ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখবেন, চীনের ক্ষেত্রে ছাড়া। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক নামিয়ে সর্বজনীন ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে চীনের ওপর এ বিরতি প্রযোজ্য নয়; বরং ট্রাম্প বলেন, চীনের রপ্তানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হবে। কারণ বেইজিং আবারও প্রতিশোধমূলক শুল্ক দিয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানায়, চীনের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক ছাড়াও আগে থেকে থাকা ২০ শতাংশ শুল্কও প্রযোজ্য, ফলে চীনের মোট শুল্ক দাঁড়ায় ১৪৫ শতাংশ।
অন্যদিকে ইইউ জানায়, ট্রাম্পের এ পেছনে আসার প্রতিক্রিয়ায় তারা নিজেরাও পাল্টা শুল্ক আপাতত স্থগিত রাখবে।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, নতুন কিছু শুল্ক থেকে ইলেকট্রনিক পণ্যগুলো বাদ দেওয়া হবে। যেমন স্মার্টফোন, কম্পিউটার, সেমিকন্ডাক্টর, রাউটার ও মডেম। চীনা পণ্য থাকলেও এসব পাল্টা শুল্ক থেকে মুক্ত। তবে অন্যান্য শুল্ক প্রযোজ্য থাকবে।
ইলেকট্রনিকস ছাড় দেওয়া সিদ্ধান্তটিকে অস্থায়ী বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা। ট্রাম্প বলেন, কম্পিউটার চিপের ওপর নতুন শুল্ক তিনি আনার পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্প দুটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর ওপর শুল্কের নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়। ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকবে ঠিকই, তবে সেই শুল্ক যেন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আগেই থাকা শুল্কের সঙ্গে যুক্ত না হয়, এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার স্পিকারফোনে একত্রে ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একটি নতুন ‘বাণিজ্যকাঠামো চুক্তি’তে পৌঁছেছে।
ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হলো—আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পারস্পরিকতা ও ন্যায্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা অত্যন্ত পেশাদার ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করা গর্বের।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, এটি সত্যিই ঐতিহাসিক দিন। আমাদের দুই দেশের দীর্ঘ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ইতিহাসেরই এটি ফল।’
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়, যার আওতায় কিছু আমদানির ওপর শুল্ক কমানো হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য মার্কিন কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেবে, যুক্তরাষ্ট্র গাড়ি ও স্টিলের ওপর শুল্ক কমাবে, তবে ব্রিটেনের সব রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে।
হোয়াইট হাউস ঘোষণা দেয়, চীনের ওপর সবচেয়ে বেশি হারে আরোপ করা শুল্ক থেকে আপাতত সরে আসা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করবে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করবে।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুমকি দেন, ইইউর ওপর আরও বেশি শুল্ক বসানো হবে। তিনি লেখেন, ‘আলোচনায় কোনো অগ্রগতি নেই।’ তিনি প্রস্তাব করেন, ১ জুন থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর হুমকি দেওয়া ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ৯ জুলাই পর্যন্ত বিলম্বিত করা হচ্ছে। যাতে বাণিজ্য আলোচনা চালানোর জন্য আরও সময় পাওয়া যায়।
পিটসবার্গের কাছে ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তব্যে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইস্পাতের ওপর শুল্ক ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস স্টিল ও জাপানের নিপ্পন স্টিলের মধ্যে একটি ‘পরিকল্পিত অংশীদারত্ব’-এর কথা বলেন। তবে স্বীকার করেন, তিনি এই চুক্তির বিস্তারিত দেখেননি বা অনুমোদনও দেননি।
স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক মধ্যরাতের পর থেকেই বাড়ানো হয় ৫০ শতাংশে (আগে ছিল ২৫ শতাংশ)। হোয়াইট হাউস জানায়, এই শুল্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্য হলো জাতীয় নিরাপত্তাকে দুর্বল করে এমন বাণিজ্যচর্চা ঠেকানো।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য চূড়ান্তভাবে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছে। এ চুক্তির আওতায়, ব্রিটিশ গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম, এয়ারোস্পেস সরঞ্জামের ওপর শুল্ক কমানো হবে।
ট্রাম্প এক দিন আগেই বলেন, তাঁর প্রশাসন চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যকাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এরপর চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিস্তারিত নিশ্চিত করে। চুক্তিতে বলা হয়, চীন যুক্তরাষ্ট্রে রেয়ার আর্থ মিনারেল (দুষ্প্রাপ্য খনিজ) রপ্তানিতে শিথিলতা দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়, যার প্রভাব পরোক্ষভাবে চীনের ওপরও পড়ে। কারণ, চীন ভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার।
ট্রাম্প বলেন, চুক্তির আওতায় সব আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক এবং ট্রান্সশিপমেন্ট (তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ঘুরিয়ে আনা পণ্য) এর ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
পরে জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, নতুন শুল্ক হবে ১০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘অনেক অর্থ আসবে, কিন্তু আমরা একটা সস্তা অফার দিচ্ছি।’
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যেসব দেশ এখনই চিঠি পাবে না, তাদের কী হবে? ট্রাম্প উত্তরে বলেন, ‘আগামীকাল ১০–১২টি দেশকে চিঠি পাঠানো শুরু করব। ৯ তারিখের মধ্যে সব দেশ শুল্ক তালিকায় থাকবে। অনেক দেশে শুল্ক হবে ৬০ বা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত, আর কিছু দেশে ১০ থেকে ২০ শতাংশ।’
ট্রাম্প বলেন, ‘এটা আমাদের দেশের জন্য অনেক অর্থ। কিন্তু এটা এখনো সাশ্রয়ী। যদি প্রকৃত ঘাটতি অনুযায়ী দিতাম, তাহলে আরও বেশি হতো। আমরা ব্যালান্স রাখতে চাই, অতিরিক্ত বাড়াব না।’
ট্রাম্প অন্তত ২১টি দেশকে জানিয়ে দেন, তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি না করে, তাহলে আগামী ১ আগস্ট থেকে অন্তত ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
ট্রাম্প হুমকি দেন, যদি কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এড়িয়ে যেতে চায় বা পাল্টা শুল্ক বসায়, তাহলে শুল্ক আরও বাড়বে। তিনি একই সঙ্গে ঘোষণা দেন, তামার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আসছে ১ আগস্ট থেকে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে তামার দাম বাড়ে এবং কিছু শিল্পক্ষেত্রে উদ্বেগ তৈরি হয়।
ট্রাম্প আরও বলেন, ব্রাজিল থেকে আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক দেওয়া হবে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে ১ আগস্ট থেকে। এ ঘোষণা তিনি সামাজিক মাধ্যমে দুটি পোস্টে প্রকাশ করেন। তিনি আবারও হুমকি দেন, যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা মেক্সিকো পাল্টা শুল্ক দেয়, তাহলে হার আরও বাড়ানো হবে।
ইইউর প্রধান আলোচক মারোস শেফচোভিচ বলেন, ট্রাম্পের হঠাৎ সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। কারণ, তাঁর মতে, দুই পক্ষ একটি চুক্তির একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি জানান, গত সপ্তাহে তিনি প্রতিদিনই আমেরিকান পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে ট্রাম্পের চিঠি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করছি, ওদেরও উচিত তাদের দায়িত্ব পালন করা। আমরা ১ আগস্টের আগেই সমঝোতায় পৌঁছাতে চাই।’
ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ানতো বলেন, ‘তারা আমাদের স্বার্থ বোঝে, আমরাও তাদেরটা বুঝি।’
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, জাপানের সঙ্গে সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তি হয়েছে। চুক্তির শর্ত হচ্ছে, জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার মোট লাভের ৯০ শতাংশ পাবে। জাপানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। ট্রাম্প আগে ২৫ শতাংশ হুমকি দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ একটি চুক্তিতে পৌঁছে, যাতে ইইউ পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশভিত্তিক শুল্ক নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে গাড়িও আছে।
ট্রাম্প বলেন, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে এবং ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন জ্বালানি কিনবে। ইইউর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন জানান, বিমান, কিছু রাসায়নিক, জেনেরিক ওষুধ ও কিছু কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক শূন্য করা হবে। তিনি বলেন, এই চুক্তি ভারসাম্য আনবে, তবে উভয় পক্ষের বাণিজ্য চালু রাখবে।
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে ১ আগস্ট থেকে। তিনি ভারতের বাণিজ্যিক বাধা ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার সমালোচনা করেন। ব্রাজিলের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক দুই দিন আগেই কার্যকর করা হয় এবং ব্রাজিলের সেই বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলার বিচার করছেন। (বলসোনারো ট্রাম্পের মিত্র)
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়। ১৫ শতাংশ শুল্কে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাবে তারা। দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কিনবে। ট্রাম্প বলেন, আরও ঘোষণা হবে যখন কোরীয় প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়াং দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়াশিংটন আসবেন।
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায়। দুই দেশই আগে ৩৬ শতাংশ শুল্কের হুমকির মুখে ছিল।
ট্রাম্প জানান, মেক্সিকোকে আরও ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। এ ঘোষণা আসে ১ আগস্টের শুল্ক কার্যকরের ঠিক আগের দিন, ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের ফোনালাপের পর।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব দেশের ওপর বহুদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিলেন শুল্ক বসানোর, সেই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে, হোয়াইট হাউস নতুন করে ৬৭টি দেশের জন্য শুল্কহার ঘোষণা করে। যার মধ্যে তাইওয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও রয়েছে।
নতুন আদেশ অনুযায়ী, শুল্কহার ১০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হবে। এই শুল্ক কার্যকর হবে ৭ আগস্ট, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে। এটি ছিল একটি অপ্রত্যাশিত ঘোষণা। কারণ, ট্রাম্প মাসখানেক আগেই বলেছিলেন, ১ আগস্টেই এই শুল্ক কার্যকর হবে।
নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, সিরিয়া, লাওস ও মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি শুল্কের আওতায় পড়েছে, ৪০–৪১ শতাংশ। আর যেসব দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করা হয়নি, তাদের ওপর ভিত্তিগত (বেজ লাইন) ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে বলে জানানো হয়।
নতুন আদেশে আরও বলা হয়, যেকোনো পণ্য, যেটি মার্কিন শুল্ক এড়িয়ে যেতে দেশ ঘুরিয়ে আনা হয়েছে, তার ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক বসবে। যেমন চীনে তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠিয়ে, প্যাকেট বা লেবেল বদলে আবার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে, সেগুলোর ওপর এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
এই সপ্তাহেই ট্রাম্প প্রশাসন ও চীন সম্মত হয়, বাণিজ্য নিয়ে তাদের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, তা বসিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে। ফলে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা এখন শরৎকাল পর্যন্ত পিছিয়েছে।
একটি আলাদা আদেশে কানাডার শুল্কহার ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। হোয়াইট হাউস জানায়, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে এবং মাদক ফেন্টানিল বাণিজ্য বন্ধে সহযোগিতা করেনি। তবে যেসব রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো–কানাডা বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী, ‘নর্থ আমেরিকান পণ্য’ হিসেবে গণ্য হয়, তাদের ওপর এই নতুন শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সে হিসাবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫, ভারতের ওপর ২৫, ব্রাজিলের ওপর ১০, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯, মিয়ানমারের ওপর ৪০, ফিলিপাইনের ওপর ১৯, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ট্রাম্পের একসময়কার উষ্ণ সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এখন খারাপ হয়ে গেছে। সম্প্রতি ট্রাম্প ভারতের উচ্চ শুল্ক ও রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার সমালোচনা করেন। ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে হলো ইলেকট্রনিকস ও ফার্মাসিউটিক্যালস (ওষুধ)।
ট্রাম্পের নতুন এ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বাণিজ্য অংশীদার উদ্বেগে পড়েছে। তাদের হাতে এখন মাত্র এক সপ্তাহ সময় আছে, যাতে তারা নতুন শুল্কের আগে আলোচনা করে হার কমাতে পারে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, যারা আগেই চুক্তি করেছিল, তারা এই তালিকায় ১৫ শতাংশ শুল্কে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, আরও অনেক দেশ ‘চুক্তির দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে। তাইওয়ানের প্রতিনিধিরা দুই সপ্তাহ ধরে ওয়াশিংটনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে ফেসবুকে লেখেন, ‘তাদের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক অস্থায়ী।’
বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই পুরো প্রক্রিয়ায় অনেক কিছু পরিষ্কার হয়েছে। প্রথমে ভালো খবর। গত কয়েক মাসের নানা দর–কষাকষির ফলে সবচেয়ে কষ্টকর শুল্ক আর মন্দার আশঙ্কা এখন এড়ানো গেছে। সবচেয়ে খারাপ যেসব শঙ্কা ছিল, যেমন শুল্কের উচ্চহার আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের অর্থনীতিতে ধস, তা এখনো বাস্তব হয়নি।
দ্বিতীয়ত, যেসব শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর শর্ত যতই অপ্রিয় হোক না কেন, তাতে অন্তত একটা বিষয় ঘটেছে—অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কিছুটা কমেছে। ট্রাম্প এ অনিশ্চয়তাকে নিজেই একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন, ভালো অর্থেও, খারাপ অর্থেও।
ভালো দিক হলো এখন ব্যবসায়ীরা আগের মতো পরিকল্পনা করতে পারছেন। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের যেসব সিদ্ধান্ত ঝুলে ছিল, সেগুলো আবার শুরু হচ্ছে। রপ্তানিকারকেরা এখন জানেন, তাঁদের পণ্যের ওপর কত শতাংশ শুল্ক বসবে। তাঁরা হিসাব করে নিচ্ছেন, কীভাবে এ বাড়তি খরচ গ্রাহকের ওপর চাপাবেন। এ বাড়তে থাকা ‘নিশ্চয়তা’র কারণে শেয়ারবাজারে স্বস্তি দেখা গেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।
তবে খারাপ দিকও আছে। যেমন এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে গড় শুল্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি। এটা বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি। ট্রাম্প ইইউর সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখালেও এগুলো সেই পুরোনো ‘শুল্কমুক্ত বাণিজ্য’ চুক্তির মতো নয়, যেগুলো একসময় বাণিজ্য বাধা সরিয়ে দিতো।
সবচেয়ে ভয়ংকর যেসব আশঙ্কা ছিল, সেগুলো কিছুটা কমেছে। তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বৈশ্বিক পূর্বাভাস পরিচালক বেন মে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির মাধ্যমে বিশ্বের অর্থনীতিতে ‘বেশ কয়েকভাবে ক্ষতি’ হতে পারে। তিনি বলেন, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এবং মানুষের আয় সংকুচিত করছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি কম পণ্য আমদানি করে, তাহলে বিশ্বজুড়ে চাহিদাও কমে যাবে।
যখন চুক্তির বিস্তারিত বের হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এর প্রভাবও পরিষ্কার হচ্ছে। বসন্তের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বেড়েছিল। কারণ, ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই পণ্য পাঠাতে চেয়েছিলেন, যাতে বেশি শুল্ক না পড়ে। তবে বাকি বছরের জন্য অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
এ বছরের শুরুতে গড় শুল্ক ছিল ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। এ বাড়তি শুল্কে সরকারি আয় বেড়েছে—ট্রাম্পের নীতির একটি উদ্দেশ্যই ছিল রাজস্ব বাড়ানো। এখন পর্যন্ত ১০০ বিলিয়ন ডলার এসেছে শুধু আমদানি শুল্ক থেকে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট ফেডারেল আয়ের প্রায় ৫ শতাংশ, আগে এটা ছিল ২ শতাংশ।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলছেন, শুল্ক থেকে পুরো বছরে আয় হবে ৩০০ বিলিয়ন ডলার। তুলনায়, ফেডারেল আয়কর থেকে আসে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার (১০০ বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন)।
ট্রাম্প বলেছেন, এই উচ্চ শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি কমাবে, রপ্তানি বাড়াবে, দেশীয় উৎপাদন খাত শক্তিশালী হবে এবং সরকারি আয় বাড়বে। তবে অর্থনীতিবিদেরা সংশয় প্রকাশ করছেন। তাঁদের মতে, শুল্ক কিছু সময় ছোট শিল্পকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু আধুনিক উৎপাদন অনেকটাই আমদানি করা যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরশীল এবং এসব ঘরেই তৈরি করা কঠিন বা অসম্ভব।
ক্রেতারা এখনো পুরো দামের চাপ টের পাচ্ছেন না। কিন্তু ইউনিলিভার বা অ্যাডিডাসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছে, যা বাজারে বড় ধরনের ‘দাম ধাক্কা’ আনতে পারে। এতে ভোক্তার ব্যয় কমে যেতে পারে, যা ট্রাম্পের পছন্দের সুদের হার কমানোর দাবিও পিছিয়ে দিতে পারে। এ অবস্থায় হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প বলছেন, অল্প আয়ের মানুষদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেওয়া হতে পারে, যাতে তাঁদের ব্যয়ের ধাক্কা কিছুটা কমানো যায়। এই শ্রেণিই ট্রাম্পের ভোট ভিত্তির মূল অংশ। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জটিল হতে পারে এবং কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।
এই প্রস্তাব আসলে একধরনের স্বীকারোক্তি—শুধু বেশি রাজস্ব আসছে বলে দাবি করলেই হবে না, এর সঙ্গে রাজনৈতিক ঝুঁকিও আছে। কারণ, কর কমিয়ে বা ব্যয় বাড়িয়ে রাজস্ব দিয়ে সব পুষিয়ে ফেলা আর সহজ নয়, বিশেষ করে সামনে নির্বাচন।
তবে সর্বশেষ খবর হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্য বাড়ছে। গত কয়েক মাসে আমদানিকারকেরা শুল্কের চাপ নিজেরা সামাল দিলেও এখন এ চাপ ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়ছে। ভোক্তা মূল্যের তথ্য বলছে, জুন মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা শুল্কের প্রভাব বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের পুরো ফলাফল জানতে হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স ও বিবিসি