Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতে রপ্তানির জন্য পাবদা মাছ বরফ দিয়ে মোড়কজাত করা হচ্ছে।

যশোর থেকে ভারতে পাবদা মাছের রপ্তানি বাড়ছে

যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার সালমা ইয়াসমিন গত বছর ৩৩ শতাংশের একটি পুকুরে অন্য মাছের সঙ্গে পাবদা মাছের ৯ হাজার পোনা ছাড়েন। এতে তাঁর ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়। সালমার মতো যশোর জেলার অন্তত ৫০ জন মাছচাষি পাবদা মাছের চাষ করছেন। তাঁরা জানান, ভারতে বাংলাদেশের পাবদা মাছের নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছরই রপ্তানি বাড়ছে। তাই মাছটির উৎপাদন বাড়াতে মাছচাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১০ লাখ ২২ হাজার ৭৫০ ডলার মূল্যের বিভিন্ন ধরনের ৪ লাখ ৯ হাজার কেজি সাদা মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশই পাবদা।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাবদা, ইলিশ, ভেটকি, পারশে, ট্যাংরা ও পাঙাশসহ বিভিন্ন ধরনের মোট ৬৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৯৯ কেজি মাছ রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি হওয়া এই মাছের আর্থিক মূল্য ২ কোটি ৭২ লাখ ১৩ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ধরে)। মোট মাছের মধ্যে ৫৩ লাখ ২৭ হাজার কেজি বা ৭৬ দশমিক ৮০ শতাংশই ছিল পাবদা।

তার আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে যে পরিমাণ সাদা মাছ রপ্তানি হয়, তার ৬৯ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট রপ্তানির ৫৮ শতাংশই ছিল পাবদা মাছ। অর্থাৎ প্রতিবছরই পাবদা মাছের রপ্তানি বাড়ছে।

বেনাপোলভিত্তিক হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারক বিশ্বাস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নূরুল আমিন বলেন, ‘ভারতে পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সাদা মাছের সঙ্গে পাবদা মাছ রপ্তানি করছি। দেশটিতে ১৫ থেকে ৩০টায় এক কেজি হয়, এমন আকারের পাবদার চাহিদা বেশি। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, মেঘালয়ের শিলিগুড়ি ও ত্রিপুরার কিছু এলাকায় এই মাছের ক্রেতা বেশি। যে কারণে আমি নিজেও পাবদা মাছের চাষ বাড়িয়েছি। এখন যশোরের শার্শা উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে ৩০ বিঘা জলাশয়ে আমি পাবদা মাছের চাষ করছি।’

ভারতে রপ্তানির জন্য পাবদা মাছ ওজন করা হচ্ছে।

যশোরের কয়েকজন মাছচাষি জানান, পাবদা মাছ অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। প্রতি শতাংশ জলাশয়ে এক হাজার পাবদা মাছের পোনা ছাড়া যায়। পোনা ছাড়ার চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে মাছ বিক্রির উপযোগী হয়। এই মাছ খেতে সুস্বাদু। কাঁটাও কম। দামও হাতের নাগালে। সে কারণেই ভারতে এটির চাহিদা বেশি।

মাছচাষি লান্টু মিয়া বলেন, ‘আগে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষ করতাম; কিন্তু তেলাপিয়ার চেয়ে দাম বেশি পাওয়ায় চার বছর ধরে পাবদা মাছ চাষ করছি। এটার চাহিদাও ভালো।’

জানা গেছে, গত অর্থবছরে যশোর জেলায় ৯৭ হাজার ৫৮৯ হেক্টর জলাভূমিতে মাছের চাষ হয়েছে। পাবদা মাছ চাষের বিষয়ে চাষিদের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। সনাতন পদ্ধতিতেই তাঁরা এই মাছের চাষ করে যাচ্ছেন।

অবশ্য কয়েকজন মাছচাষি বললেন, তাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে চান। তা ছাড়া মাছের খাবার, ওষুধ ও ভিটামিনসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেশি। এগুলোর দামও নাগালের মধ্যে রাখার দাবিও জানালেন। তাহলে কম খরচে বেশি মাছ উৎপাদন করা যাবে। তখন মাছ রপ্তানি করে ডলার আয় করা সম্ভব হবে।

চাষিদের দাবির বিষয়ে যশোর জেলার মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে এখন চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে চাষিরা প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হলে রাজস্ব খাত থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে। আর মাছের খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের দাম কমানোর বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে ভর্তুকি দিয়ে হলেও মাছের খাবার ও অন্যান্য উপকরণের দাম কমানোর বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবনা থাকবে।’

সরকার মোহাম্মদ রফিকুল আলম আরও বলেন, পাবদা মাছ চাষে চাষিরা আগ্রহী হচ্ছেন। কারণ, এই মাছের চাহিদা রয়েছে। দামও মিলছে ভালো।