Thank you for trying Sticky AMP!!

এ বছরও বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকবে 

৫৬% প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হবে; এর কারণ ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও আর্থিক খাতের কঠোরতা।

২০২০ সালে কোভিড মহামারির শুরু থেকেই বিশ্ব অর্থনীতিতে একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। কোভিডের প্রভাব কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ রকম পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, চলতি ২০২৪ সালেও বিশ্ব অর্থনীতিতে একধরনের অনিশ্চয়তা থাকবে। 

অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো অস্থিতিশীল এবং আগামী কয়েক বছরে তা আরও দুর্বল হতে পারে। যাঁরা মনে করেন যে বৈশ্বিক অর্থনীতি এ বছর স্থিতিশীল হবে বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তাঁরা কিন্তু সংখ্যায় বেশ কম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ‘চিফ ইকোনমিস্টস আউটলুক’ বা ‘প্রধান অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

এখনো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গতি কম। বিশ্বজুড়ে নীতি সুদহার বাড়তি থাকার কারণে অর্থপ্রবাহে গতি কমে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। প্রধান অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, এ সবকিছুর প্রভাব ২০২৪ সালেও কমবেশি থাকবে। 

প্রধান অর্থনীতিবিদদের ওপর করা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) জরিপ থেকে জানা যায়, ৫৬ শতাংশ প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, চলতি ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হবে। এই দুর্বলতার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে তাঁরা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও আর্থিক খাতের কঠোরতাকে চিহ্নিত করেছেন। তবে মাত্র ৩ শতাংশ মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতি আরও বেশি দুর্বল হবে।  

জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ আশা করছেন, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে শিথিলতার পাশাপাশি আর্থিক বাজারেও শিথিলতা আসবে; অর্থাৎ শ্রমবাজারে খালি হওয়া কর্মের বিপরীতে বেকার মানুষের সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে নীতি সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা থাকায় আর্থিক বাজারে কিছুটা শিথিলতা আসবে; অর্থাৎ ঋণ নেওয়া সহজতর হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে শ্রমবাজারে অতিরিক্ত ২০ লাখ মানুষ প্রবেশ করবেন। কিন্তু কর্মসংস্থানের হার কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক বেকারত্বের হার বেড়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে উঠে যেতে পারে, যা বিদায়ী ২০২৩ সালে ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ। 

অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি এ বছর আরও শক্তিশালী হবে। অর্থনীতি অধিকতর শক্তিশালী হওয়ার আভাস দিয়েছেন ২৩ শতাংশ প্রধান অর্থনীতিবিদ। 

অর্থনীতিবিদেরা সাধারণত কোনো বিষয়ে একমত না হলেও একটি বিষয়ে তাঁদের মধ্যে ঐকমত্য দেখা গেছে। সেটা হলো, তাঁরা মনে করছেন, ভূ-অর্থনীতিতে যে খণ্ডিতকরণ চলছে, সেই প্রক্রিয়ার প্রভাব অব্যাহত থাকবে। 

১০ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৭ জন; অর্থাৎ ৭০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ২০২৪ সালে ভূ-অর্থনৈতিক খণ্ডিতকরণের হার আরও বাড়বে। বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন, এ কারণে আগামী তিন বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও স্টক মার্কেটে অস্থিতিশীলতা বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, অর্থনীতির স্থানীয়করণের গতি বাড়বে, সেই সঙ্গে ভূ-অর্থনৈতিক ব্লকের শক্তি বাড়বে। পরিণতিতে বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার ব্যবধান বাড়বে। 

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করছে, বাণিজ্য বাধা ও বিধিনিষেধ বৃদ্ধির কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক উৎপাদন হ্রাসের হার বেড়ে ৭-এ উঠতে পারে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের অর্থনীতিগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। 

বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির ধরনের মধ্যে ব্যবধান দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক তৎপরতা চাঙা থাকবে। এত দিন চীন এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিত। এখনকার বাস্তবতা হলো, এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে চাঙাভাব থাকলেও ব্যতিক্রম হবে চীন। তাদের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে আগে শক্তিশালী ও মধ্যম মানের প্রবৃদ্ধির কথা বলা হতো। এখন বলা হচ্ছে, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে অনেকাংশে মধ্যম মানের। 

অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ইউরোপের জন্য পূর্বাভাস হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে তাদের অর্থনীতি মোটাদাগে দুর্বল বা অতি দুর্বল থাকবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকাতেও প্রবৃদ্ধি দুর্বল থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ১০ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৬ জন মনে করেন, ২০২৪ সালে ওই সব অঞ্চলের দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধি হবে মাঝারি মানের। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব

গত ২০২২ সালের শেষ ভাগে চ্যাটজিপিটির আগমনের মধ্য দিয়ে জেনারেটিভ এআই বিশ্বদরবারে বিপুল বিক্রমে হাজির হয়। ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে অর্থনীতিবিদেরা বলতে শুরু করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।