কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে এসে ব্যবসায় বড় সাফল্য ইস্পাহানির

১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে আগে ব্যবসার জন্য চট্টগ্রামে নোঙর করে ইস্পাহানি পরিবার। এরপর একে একে গড়ে তোলে কারখানা। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায় এসেছে বড় সাফল্য। ইস্পাহানি পরিবারের ২০২ বছরের ব্যবসায়িক পথচলার জানা অজানা গল্প পড়তে চোখ রাখুন কাল সোমবারের প্র বাণিজ্যে।

ইস্পাহানির নেতৃত্ব এখন সপ্তম প্রজন্মের উত্তরাধিকারী মির্জা সালমান ইস্পাহানির হাতে।
ছবি: সৌরভ দাশ

উপমহাদেশে ইস্পাহানি পরিবারের ব্যবসা শুরুর পর প্রথম সোয়া শ বছরই কেটেছে ব্যবসা সম্প্রসারণে। মুম্বাই শহর থেকে শুরু হওয়া এ ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে নতুন নতুন শহর-অঞ্চলে। ব্যবসা সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ঘটনা কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে সদর দপ্তর স্থানান্তর।

মুম্বাই থেকে চেন্নাই হয়ে ইস্পাহানি পরিবার কলকাতায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিল ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে। ইস্পাহানির প্রতিষ্ঠাতা হাজি মোহাম্মদ হাশিমের নাতি মির্জা মোহাম্মদ ইস্পাহানি ‘এম এম ইস্পাহানি অ্যান্ড সন্স’ নামে কলকাতায় ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর বড় সন্তান মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি ১৯১৮ সালে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন। এরপর মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি তাঁর দুই ভাই মির্জা আবুল হাসান ইস্পাহানি ও মির্জা মাহমুদ ইস্পাহানিকে নিয়ে ১৯৩৪ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে এম এম ইস্পাহানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ইস্পাহানির নেপচুন চা বাগান

সে সময় ইস্পাহানির প্রধান ব্যবসা ছিল পাট। পাটের উৎপাদন এলাকা ছিল পূর্ব পাকিস্তান। পুরোনো চায়ের ব্যবসাও ছিল। দুটি পণ্যই ছিল রপ্তানিমুখী। আর দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একমাত্র বন্দর ছিল চট্টগ্রাম। বন্দরকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে—এমন দূরদর্শী চিন্তা থেকেই চট্টগ্রামে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। এ প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশভাগের আগে।
দেশভাগের ঠিক আগে ১৯৪৬-৪৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন হয়েছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার টন। দেশভাগের পর ১৯৪৭-৪৮ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ২২ হাজার টনে।

চট্টগ্রামে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও প্রধান কার্যালয় স্থাপন করলেও কলকাতার ব্যবসা বন্ধ করেনি ইস্পাহানি পরিবার। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত প্রতি দু-তিন মাসে একবার করে হলেও কলকাতায় অফিস করতেন ইস্পাহানি পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ১৯৬৫ সালের পর ইস্পাহানির সব সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে অধিগ্রহণের পর ভারতের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।

চট্টগ্রামের সদরঘাটের অফিস থেকে ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করেছিল ইস্পাহানি পরিবার। এরপর কেসি দে রোড হয়ে ১৯৫৪ সালে আগ্রাবাদে প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়। এখন ঢাকা-খুলনায় রয়েছে করপোরেট অফিস।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ইস্পাহানির বর্তমান সদর দপ্তর

বর্তমানে ইস্পাহানি পরিবারের ব্যবসার নেতৃত্ব থাকা মির্জা সালমান ইস্পাহানি জানান, দেশের ২৫টি স্থানে রয়েছে ইস্পাহানির কার্যালয়। এসব কার্যালয় থেকে নিজস্ব সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলেছে কোম্পানিটি। বাংলাদেশের একমাত্র ভোগ্যপণ্য কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব সরবরাহব্যবস্থার মাধ্যমে সারা দেশে পণ্য সরবরাহ করে আসছে। একই সময়ে, একই দামে ও একই রকম সেবা দিতে নিজেদের পণ্যের এই বিতরণব্যবস্থা গড়ে তুলেছে গ্রুপটি।

ইস্পাহানির নেতৃত্ব এখন সপ্তম প্রজন্মের উত্তরাধিকারী মির্জা সালমান ইস্পাহানির হাতে।

চট্টগ্রামে সদর দপ্তর স্থাপন করার পর মির্জা সালমান ইস্পাহানির দাদা ও বাবার ভাবনাচিন্তা ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ ঘিরে। চট্টগ্রামে কারখানা দিয়ে যাত্রা শুরু করা ইস্পাহানি ধাপে ধাপে ঢাকা, সিলেট, খুলনা ও রংপুরে কারখানা গড়েছে।

শুরুর দিকের কারখানার পাশাপাশি চট্টগ্রামের ইস্পাহানি মোড়, ইস্পাহানি অফিসার্স কোয়ার্টার, ঢাকার মগবাজারে ইস্পাহানি কলোনি, খুলনার দৌলতপুরে ইস্পাহানি লেবার কলোনি—এমন বহু নামের সঙ্গে ইস্পাহানির ঐতিহ্য মিশে আছে।