Thank you for trying Sticky AMP!!

ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পোশাক রপ্তানি কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। ভারত ও মেক্সিকোর কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। ইন্দোনেশিয়ার কমেছে ২১ শতাংশের কাছাকাছি। সেই হিসাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম আট মাস জানুয়ারি-আগস্টে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে শুধু ভিয়েতনাম, দেশটির রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা গত মার্চ থেকে পোশাক আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। তাতে সব দেশেরই ব্যবসা কমেছে। চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে বাজারটিতে বিভিন্ন দেশের ৪ হাজার ৩৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ২৯ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত বছর ৫ হাজার ৭২৯ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে বাজারটিতে যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়েছে, তার ৫৭ শতাংশ করেছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও মেক্সিকো। তবে রপ্তানি কমার দিক থেকে এই পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। চলতি বছরের প্রথম মাসে ৬২ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ শতাংশ। পরের মাসেও প্রবৃদ্ধি হয় ১১ শতাংশ। মার্চ ও এপ্রিলেও রপ্তানি নেতিবাচক হয়নি। করোনার প্রভাব পড়ে মূলত মে মাসে। সেই মাসে রপ্তানি এক ধাক্কায় ১২ শতাংশ কমে। ৮ মাসে মোট ৩৪৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। বর্তমানে বাজারটিতে বাংলাদেশের হিস্যা ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা গত বছরের শেষে ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমে যায়। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আবার অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ও বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে বেশি ক্রয়াদেশ নিয়ে বাংলাদেশে আসে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ফলে রপ্তানিও আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। তবে করোনায় নতুন করে বাজারটিতে খারাপ সময়ের মধ্যে পড়ে বাংলাদেশ।

এদিকে রপ্তানি কমার দিক থেকে বাংলাদেশ খানিকটা সুবিধাজনক স্থানে থাকলেও চীনের অবস্থা শোচনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ ও করোনার প্রভাবে গত জানুয়ারিতে চীনের পোশাক রপ্তানি কমে ৩৬ শতাংশ। পরের মাসগুলোতে রপ্তানি আরও কমে। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে চীন ৯১৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৯১ শতাংশ বা ৮৪৩ কোটি ডলার কম।

ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনকে টপকে গেলেও আবার দ্বিতীয় স্থানে চলে গেছে। রপ্তানি কমার দিক থেকে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে দেশটি। চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ভিয়েতনাম ৮১৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। তাদের বাজার হিস্যা ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামের রমরমা অবস্থা ভবিষ্যতে না-ও থাকতে পারে। কারণ, তাদের পণ্যে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিজেদের মুদ্রাকে কৃত্রিমভাবে অবমূল্যায়িত করে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ২ অক্টোবর ইউএসটিআর ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সুযোগ বাড়বে বলে মনে করেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ফারুক হাসান। তিনি সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিয়েতনাম সাধারণ কৃত্রিম তন্তু বা ম্যানমেড ফাইবারের তৈরি পোশাক বেশি রপ্তানি করে। তবে আমরা তাদের সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছি না। কারণ, আমাদের দেশে ম্যানমেড ফাইবার হয় না। ভিয়েতনামের ওপর ৫-১০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হলে আমাদের পণ্যের দাম তাদের কাছাকাছি চলে আসবে। সেটি হলে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়তে পারে।’