বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমার কারণে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার তাদের সাবান, শ্যাম্পু ও হ্যান্ডওয়াশের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে।

বাজারে যখন নিত্যব্যবহার্য পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম অবস্থা সাধারণ মানুষের, তখন ভোক্তাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার। প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের কথা ভেবে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে। দাম কমিয়েছে সাবান, শ্যাম্পু, হ্যান্ডওয়াশের মতো নিত্যব্যবহার্য গৃহস্থালি সামগ্রীর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে ইউনিলিভারের উদ্যোগটি তাই ব্যতিক্রমী নজির স্থাপন করেছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড বা ইউবিএলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গৃহস্থালি পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বিশ্ববাজারে কমে যাওয়ায় দেশে তারা পণ্যের দাম কমিয়েছে। বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমায় যতটুকু সুফল কোম্পানিটি পেয়েছে, পণ্যের দাম কমিয়ে ততটুকু সুবিধা ভোক্তাদের দেওয়া হচ্ছে।
ইউবিএল সূত্রে জানা গেছে, সাবান, শ্যাম্পু ও হ্যান্ডওয়াশের দাম সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ গ্রাম ওজনের লাক্স সাবানের দাম ১০ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ৭০ টাকা। একই ওজনের লাইফবয় সাবানের দামও ১০ টাকা কমিয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া লাক্স সাবানের ১০০ গ্রামের প্যাকেটে ওজনে ২৫ গ্রাম বেশি দেওয়া হচ্ছে। তাতে ১০০ গ্রামের লাক্সের প্যাকেটের প্রকৃত দাম পড়ছে ৪৮ টাকা।
এ ছাড়া প্রধান প্রধান শ্যাম্পুর দাম বোতলপ্রতি ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ইউবিএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্লিয়ার কুল স্পোর্ট মেনথল ৮০ মিলিলিটারের শ্যাম্পুর দাম ৩০ টাকা কমিয়ে ৯০ টাকা করা হয়েছে। এর বাইরে সানসিল্ক ব্ল্যাক, ক্লিয়ার কমপ্লিট অ্যাকটিভ কেয়ার ও ডাভ ইনটেনসিভ রিপেয়ার ৮০ মিলিলিটারের শ্যাম্পুর দামও ৩০ টাকা করে কমানো হয়েছে।
সাবান-শ্যাম্পুর পাশাপাশি দাম কমেছে হ্যান্ডওয়াশেরও। ইউনিলিভারের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড লাইফবয়ের ২০০ মিলিলিটারের হ্যান্ডওয়াশের দাম ২৫ টাকা কমিয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশ রিফিল প্যাকে ১০ শতাংশ বেশি দেওয়া হচ্ছে। এতে ১৭০ গ্রামের রিফিলে একজন ক্রেতা পাচ্ছেন ১৮৭ গ্রাম। এর বাইরে ক্রেতাদের সুবিধার্থে নতুন কিছু ছোট প্যাকও বাজারে এনেছে ইউবিএল।
পণ্যের দাম কমানোর বিষয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সামগ্রিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার চাপের মধ্যেও আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু কাঁচামালের দাম কমার যেটুকু সুবিধা আমরা পেয়েছি, তা ভোক্তাদের দিতে চাই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের জন্য যা ভালো, তা ইউনিলিভারের জন্যও ভালো। বর্তমান চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমরা ভোক্তাদের সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এফএমসিজি (ফাস্ট মুভিং কনজ্যুমার গুডস) কোম্পানি। ৬০ বছর ধরে বহুজাতিক কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা করে আসছে। কোম্পানিটির শেয়ারের ৩৯ দশমিক ২৫ শতাংশের মালিক বাংলাদেশ সরকার। লাক্স, লাইফবয়, সার্ফ এক্সেল, ক্লোজআপ, সানসিল্ক, পন্ডস, ভ্যাসলিন, ডাভসহ ২৬টি ব্র্যান্ডের পণ্য রয়েছে কোম্পানিটির। কোম্পানিটি ৯৫ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে কোম্পানিটিতে। ২০১৩ সাল থেকে ইউনিলিভার বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ করদাতা।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামালের দাম বাড়তে শুরু করে। তাতে এফএমসিজি পণ্য উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে যায়। ডিটারজেন্ট ও ডিশ ওয়াশ তৈরির অন্যতম কাঁচামাল সোডা অ্যাশের দাম ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে ১৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। একই সময়ের ব্যবধানে সাবানের কাঁচামাল পাম স্টিয়ারিনের দাম বেড়েছে ৯০ শতাংশ, শ্যাম্পুর কাঁচামাল সোডিয়াম লরিল ইথার সালফেটের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি ও টুথপেস্টের কাঁচামাল সরবিটলের দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
পাশাপাশি বেড়েছে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-করও। এ ছাড়া গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার ২৪ শতাংশ দরপতন হয়েছে। এসব কারণে ইউনিলিভারের বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দামও বাড়ানো হয়। তবে স্যাশে বা মিনি প্যাকে বিক্রি হওয়া পণ্যের দাম ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে বাড়ানো হয়নি। এখন বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কিছুটা কমে আসায় বাংলাদেশে সাবান, শ্যাম্পু ও হ্যান্ডওয়াশের মতো পণ্যের দাম কমিয়েছে ইউনিলিভার।