লেদার এক্সপোতে বিদেশি এক স্টলে প্রদর্শন করা হচ্ছে চামড়াবিহীন জুতা। চীনের একাধিক প্রতিষ্ঠান জুতা ও জুতা তৈরি নানা সামগ্রী তুলে ধরছে এই এক্সপোতে। গতকাল রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়
লেদার এক্সপোতে বিদেশি এক স্টলে প্রদর্শন করা হচ্ছে চামড়াবিহীন জুতা। চীনের একাধিক প্রতিষ্ঠান জুতা ও জুতা তৈরি নানা সামগ্রী তুলে ধরছে এই এক্সপোতে। গতকাল রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়

লেদারটেক প্রদর্শনী শুরু

বিশাল যন্ত্রে ১২ জোড়া জুতা উৎপাদন হচ্ছে ১০ মিনিটে

ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

বিশাল যন্ত্রের ছয়টি সেকশন। প্রতিটি সেকশনে একসঙ্গে দুই জোড়া উৎপাদনের মোল্ড বা সাঁচ বসানো। কম্পিউটার–নিয়ন্ত্রিত এই যন্ত্রের পেছনে থাকে কাঁচামালের ড্রাম। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাঁচের মধ্যে আসে কাঁচামাল। তারপর উচ্চ তাপমাত্রায় ইথাইলিন-ভিনাইল অ্যাসিটেট বা ইভা উপাদান দিয়ে চপ্পলের মতো জুতা তৈরি হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগছে ১০ মিনিট।

জুতা উৎপাদনের এই দৃশ্য কোনো কারখানার নয়, লেদারটেক নামে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর প্রাঙ্গণে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পূর্বাচলে কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে।

স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা শুধু কাপড় সেলাই করছি। জুতা এখনো ফিট করতে পারছি না। এটা অপরাধের পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ তৈরি পোশাকের পর চামড়া ছাড়া আর ভালো খাত এখনো আমাদের নেই।
আশিক চৌধুরী, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বিডা

প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য জুতা উৎপাদনে অটোমেটেড ফোম ইভা ইনজেকশন মোল্ডিং মেশিন নিয়ে এসেছে ফোরএস অ্যাডভান্স টেকনোলজিস। প্রতিষ্ঠানটি জুতা ও চামড়া পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি চীন, ইতালি, জাপান ও তাইওয়ানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাছ থেকে আমদানি করে সরবরাহ করে থাকে। যৌথভাবে প্রদর্শনী আয়োজন করেছে এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি)।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. আক্তার উজ জামান জানান, প্রতি জোড়া ইভা জুতা তৈরিতে ১ মিনিটের কম সময় লাগছে। এই যন্ত্র দিয়ে চামড়াবিহীন জুতার সোলও তৈরি করা যায়। যন্ত্রটির দাম ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।

প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ মোট আটটি দেশ থেকে আসা প্রায় ২০০টি কোম্পানি অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলো জুতা ও চামড়াপণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, আধুনিক সব যন্ত্রপাতির পাশাপাশি রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক পণ্য প্রদর্শন করছে।

এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া খুলনার সুপারেক্স লেদার তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন চামড়া নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। তাদের কারখানায় দিনে এক লাখ বর্গফুট চামড়া উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। বর্তমানে ইতালি, স্পেন, জাপান, হংকং, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতা ও এজেন্ট সুপারেক্সের কাছ থেকে চামড়া কিনে থাকে।

সুপারএক্স লেদারের কমার্শিয়াল কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করি আমরা। সেসব পণ্য চামড়া ও জুতাশিল্পের সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি নতুন ক্রেতার সন্ধানে এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছি।’

প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ১৯৯০ সালে চামড়ার জুতার রপ্তানি ছিল ১৭ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১০ সালে তা বেড়ে ৬৫ কোটি ডলার হয়। বর্তমানে সেই রপ্তানি ১৬৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ খাতে মূল্য সংযোজন ৮৫ শতাংশ। এত ইতিবাচক সংখ্যার পরও গর্বের কিছু নেই। কারণ, ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। জুতা ও চামড়া খাতের দ্রুত রপ্তানি বাড়াতে হলে বাণিজ্য উদারীকরণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা শুধু কাপড় সেলাই করছি। জুতা এখনো ফিট করতে পারছি না। এটা অপরাধের পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ তৈরি পোশাকের পর চামড়া ছাড়া আর ভালো খাত এখনো আমাদের নেই।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারসহ সাভারের চামড়া শিল্পনগরী আমরা বেপজার কাছে হস্তান্তর করব।’