
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা সাইফুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাঁর বাসায় আছেন বৃদ্ধ বাবা। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাবার জন্য একটি বৈদ্যুতিক রুম হিটার কেনার পরিকল্পনা করেন তিনি। সে উদ্দেশ্যে গত রোববার কারওয়ান বাজার ও ধানমন্ডির কয়েকটি ইলেকট্রনিক পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রে ছুটে গেলেও রুম হিটার পাননি। দুই দিন পর মঙ্গলবার বিকেলে অবশেষে কারওয়ান বাজার থেকে একটি রুম হিটার কিনতে সক্ষম হন তিনি।
সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীতের জন্য একটি রুম হিটার নেওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে শীত বেশি পড়ায় বাজারে এটির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে সংকট তৈরি হয়েছে।’
সারা দেশেই গত কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তীব্র ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুদের। এ কারণে হঠাৎ করেই রুম হিটারের চাহিদা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। বাড়তি চাহিদার কারণে অনেক ক্রেতা একাধিক বিক্রয়কেন্দ্র বা মার্কেটে ঘুরেও রুম হিটার কিনতে পারছেন না। অর্থাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যটির সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে দামও।
বিক্রেতারা জানান, হঠাৎ শীত বেড়ে যাওয়ায় রুম হিটারের সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, সরবরাহের তুলনায় এখন চাহিদা বেশি। ফলে দ্রুত পণ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে পণ্য আসতে আর কিছুদিন সময় লাগবে। যেসব বিক্রয়কেন্দ্র ও মার্কেটে তুলনামূলক বেশি মজুত রয়েছে, সেখান থেকে এনে গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিক্রেতারা বাড়তি দাম নিচ্ছেন। বলছেন, বেশি দামে কিনতে হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে ট্রান্সকমের শোরুমের অপারেশন ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, গত দুই দিনে তাঁদের ৯টির বেশি রুম হিটার বিক্রি হয়েছে। পণ্যটি শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে সরবরাহ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে রুম হিটারের পাশাপাশি শীত মৌসুমে ব্যবহৃত অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ওভেন, গিজার, ইলেকট্রিক কেটলি, ওয়াশিং মেশিন প্রভৃতি। বিক্রেতাদের মতে, শীত আরও কয়েক দিন থাকলে এসব পণ্যের বিক্রি আরও বাড়বে।
বাজার কত বড়
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ওয়াশিং মেশিন, রুম হিটার, ওভেন, গিজার ও ফ্লাস্কের মতো বেশির ভাগ ছোট হোম অ্যাপ্লায়েন্স দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। তবে রুম হিটারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশ থেকেও আমদানি হয়। সব মিলিয়ে এসব পণ্যের বার্ষিক বাজার আনুমানিক ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ওয়াশিং মেশিনের বাজারই প্রায় এক হাজার কোটি টাকার এবং ওভেনের বাজার ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার।
তবে রুম হিটার ও গিজার পুরোপুরি মৌসুমি পণ্য। তীব্র শীত না পড়লে এসব পণ্যের তেমন চাহিদা থাকে না। ফলে এ পণ্যের স্থিতিশীল বাজার নেই। তারপরও বছরে আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয় বলে জানা যায় কোম্পানিগুলোর সূত্রে।
প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য ভিশন ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হয়। গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিনের ব্যবধানে রুম হিটারের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে এমন অস্বাভাবিক চাহিদা দেখা যায়নি। আমাদের সক্ষমতার চেয়েও চাহিদা বেশি। এ ছাড়া ফ্লাস্কের চাহিদা প্রায় ২০ শতাংশ এবং বৈদ্যুতিক কেটলির চাহিদা ৫০ শতাংশ বেড়েছে।’
দরদাম কেমন
ব্র্যান্ড, কার্যক্ষমতা ও মানভেদে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের দামে পার্থক্য রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটামুটি মানের ব্র্যান্ডের রুম হিটারের দাম দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। নন-ব্র্যান্ডের রুম হিটারের দাম শুরু ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে। বিদেশি রুম হিটারের মধ্যে রেডসুইস অন্যতম। এ ছাড়া চীনের কম পরিচিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রুম হিটারও বিক্রি হচ্ছে।
ব্র্যান্ডভেদে ইলেকট্রিক কেটলির দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা। ওভেন বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। ৩০ থেকে ৫০ লিটারের গিজারের দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর চেয়েও বেশি দামের পণ্য বাজারে রয়েছে।
রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটে প্রায় দেড় শ দোকানে আমদানি করা ও দেশে উৎপাদিত হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য পাইকারি ও খুচরা দামে বিক্রি হয়। গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই রুম হিটারের খোঁজ নিতে আসছেন ক্রেতারা। বিক্রেতাদের ভাষ্য, স্টেডিয়াম মার্কেটে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকার রুম হিটার রয়েছে।
এই মার্কেটের মুসকান ইলেকট্রনিকসের বিক্রয়কর্মী মো. সেলিম বলেন, ‘বেশি শীত না পড়লে কেউ রুম হিটার কেনেন না। এখন চাহিদা বেড়েছে। শীত যত বেশি থাকছে, সময়ের সঙ্গে দামও বাড়ছে।’ বিক্রেতারা জানান, গত তিন দিনে রুম হিটারের দাম ৫০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাড়তি চাহিদার কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলোও রুম হিটারের উৎপাদন বাড়িয়েছে। ওয়ালটনের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (হোম অ্যান্ড কিচেন) ফজলে রাব্বি খাদেম জানান, মূলত শীত বেড়ে যাওয়ায় রুম হিটারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তাই বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।