বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) বিগত কমিটির কার্যক্রমে আর্থিক লেনদেনে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত আগস্টে আটাবে প্রশাসক নিয়োগের পর সংগঠনটির হিসাব যাচাই করে এসব অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার একটি বিজ্ঞপ্তি (চিঠি) জারি করেন সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত আটাবের প্রশাসক (উপসচিব) মোতাকাব্বীর আহমেদ। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম, মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত ও অর্থসচিব শফিক উল্লাহর কাছে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা ও দ্রুত সমাধান চাওয়া হয়েছে। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয় চিঠিতে।
যদিও এই বিজ্ঞপ্তি জারির একই দিনে মোতাকাব্বীর আহমেদকে পরিবর্তন করে আটাবে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, প্রশাসকের চিঠিতে উল্লেখিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আটাবের সাবেক নেতারা।
প্রশাসকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মোতাকাব্বীর আহমেদকে আটাবে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে অফিস বন্ধ থাকার কারণে ১২ আগস্ট তিনি দায়িত্ব নেন। এরপর তিনি আটাবের আর্থিক লেনদেনের হিসাব যাচাই করে একাধিক অনিয়ম খুঁজে পান। এসব নিয়ে সাবেক কমিটির নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেন তিনি। তবে কোনো সন্তোষজনক জবাব পাননি।
চিঠিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ জুলাই থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটাবের ৯১ জন সদস্যের কাছ থেকে ফেম ট্রিপ (পরিচিতিকরণ ভ্রমণ) বাবদ ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা নেওয়ার আগে আটাবের ব্যাংক হিসাবে ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৬ টাকা ছিল। কিন্তু প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার সময় আটাবের হিসাবে মাত্র ৩৪ লাখ ৫ হাজার ৭৯৬ টাকা পাওয়া যায়। এর মাঝে গত ১০ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আটাবের হিসাব থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে চারটি চেকের মাধ্যমে মোট ৪৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার সাত দিন পর ফেম ট্রিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে টাকা ফেরতের আবেদন আসে। কিন্তু আটাবের ব্যাংক হিসাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রাপ্য ৪১ লাখ ৯২ হাজার ৮৫০ টাকা (ভিসা ফি বাদে) ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় এসব টাকা ব্যয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে আটাবের সাবেক তিন নেতার কাছে চিঠি দেওয়া হয়।
এদিকে গত বুধবারেই আটাবের প্রশাসক পদ থেকে উপসচিব মোতাকাব্বীর আহমেদকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারের যুগ্ম সচিব সাইফ উদ্দিন আহম্মদকে নিয়োগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আটাবের সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ‘আটাবে নতুন প্রশাসক নিয়োগ হয়েছে। দায়িত্বের শেষ দিন তিনি একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে আমাদের বিতর্কিত করার জন্য চিঠিটি ইস্যু করেছেন।’
আবদুস সালাম বলেন, ‘এসব টাকা ব্যয় হয়েছে; কোনো ব্যক্তি নিয়ে যায়নি। দায়িত্বে থাকাকালে আমরা যেসব খরচ করেছি, তার প্রতিটির ভাউচার ও তথ্যপ্রমাণ আটাব অফিসে জমা আছে এবং এসব খরচ নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে অনুমোদিত। এসব নথি আমরা সাবেক প্রশাসককে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি (সাবেক প্রশাসক) চিঠিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করলেও এই টাকা খরচের খাত উল্লেখ করেননি।’ এখন যেহেতু চিঠি পাঠানো হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী নতুন প্রশাসকের কাছে জবাব দেবেন বলে জানান আবদুস সালাম।